আইসিসিবি ত্রৈমাসিক বুলেটিনের সম্পাদকীয়
গত ডিসেম্বরে চীনের উহান প্রদেশে উত্থিত কভিড -১৯ বিশ্বব্যাপী মহামারীর কারণে বিশ্ব মারাত্মক এবং তীব্র জনস্বাস্থ্য জরুরী ও অর্থনৈতিক হুমকির মুখোমুখি হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডবিøউএইচও) ১১ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে করোনভাইরাসকে (কোভিড -১৯) বিশ্বব্যাপী মহামারী হিসাবে ঘোষণা করেছে। এই ঘোষণার সাথে সাথে বিশ্বজুড়ে আর্থিক বাজারগুলি হুড়োহুড়ি শুরু করে। এই মহামারীর কারনে বড় বড় প্রতিষ্ঠান এবং ব্যাংকসমূহ বৈশ্বিক অর্থনীতির ক্ষেত্রে তাদের পূর্বাভাস কমিয়েছে।
কভিড-১৯ হচ্ছে বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সঙ্কট এবং বৃহত্তম অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ, যা বিশ্ববাসী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং ১৯১৮ এর স্প্যানিশ ফ্লু এর সময় মোকাবেলা করেছিল, যেটা ১৫ মাস স্থায়ী হয়েছিল। এটি ৫০০ মিলিয়ন মানুষকে সংক্রামিত করেছিল, ৫ মিলিয়ন মানুষ মারা গিয়েছিল, যা তৎকালীন বিশ্ব জনসংখ্যার প্রায় এক তৃতীয়াংশ ছিল। ১৯১৮ সালের সেই ভাইরাস অদ্যাবধি রয়ে গেছে মহামারী ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস হিসাবে, এ ভাইরাসে প্রতিবছর ্উল্লেখযোগ্য মৃত্যু ঘটে। বিশ্বে এত উন্নয়ন হয়েছে অথচ দুর্ভাগ্যক্রমে অদ্যাবধি স্বাস্থ্য খাত অবহেলিত রয়ে গেছে।
এই মহামারীর ফলে সৃষ্ট স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক সংকট, অরক্ষিত জনগোষ্ঠীকে রক্ষা করা এবং দীর্ঘস্থায়ী পুনরুদ্ধারের মঞ্চ নির্ধারণের জন্য জরুরী পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। স্বাস্থ্য সংকট অবসান হওয়ার পর উদীয়মান বাজার এবং উন্নয়নশীল দেশগুলির জন্য জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা শক্তিশালী করা, অনানুষ্ঠানিকতার দ্বারা সৃষ্ট চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা এবং শক্তিশালী ও টেকসই বৃদ্ধিকে সমর্থন করবে এমন সংস্কার বাস্তবায়ন করা জরুরী।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাবের ফলে নি¤œ আয়ের এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর উপর বিপদজনক অর্থনৈতিক প্রভাব পড়বে। একই সাথে, উন্নত অর্থনীতিগুলি মন্দায় পিছলে যাওয়ার ফলে পণ্যগুলির দাম হ্রাস পাবে এবং এই দেশগুলির রফতানি আয়ের উপর বাড়তি চাপ পড়বে।
স্বল্পমেয়াদে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তরঙ্গের মতো চলমান মহামারীটিকে মোকাবেলার জন্য রোগীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও চিকিৎ্সা, লকডাউন, যোগাযোগের সীমাবদ্ধতা, ভ্রমণকে সীমাবদ্ধকরণ, নাগরিকদের বিচ্ছিন্নকরণ, এবং বৃহত্তর জমায়েত বাতিল করে ভাইরাসের বিস্তারকে কমিয়ে আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
এই মহামারীটির মেয়াদ দীর্ঘায়িত হলে ব্যাপক বেকারত্বের সৃষ্টি হতে পারে ও ব্যবসা-বাণিজ্যে ব্যার্থতা দেখা দিতে পােের। কিছু শিল্প, যেমন পর্যটন এবং বিমান, অবশ্যই সমস্যার মুখোমুখি হবে। মহামরীটি এমন এক ঝুঁকির তৈরি করেছে, যার ফলে বিনিয়োাগকারীরা খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন। অন্যদিকে, সামাজিক দূরত্বের প্রয়োজনীয়তার কারণে প্রচুর ইভেন্ট বাতিল হয়েছে, ভ্রমণ ব্যবসা ধ্বংস হয়ে গেছে, ব্যবসা-বাণিজ্য, রেস্তোরা এবং শপিং মল বন্ধ হয়ে গেছে।
ভাইরাসটি বিশ্ব অর্থনীতিতে যে কি পরিমাণ নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে তা সঠিকভাবে মূল্যায়ন করার সময় এখনও হয়নি, যেহেতু পরিস্থিতি প্রতিদিন পরিবর্তন হচ্ছে, অর্থনৈতিক অনুমানগুলি কেবল প্রভাবের মাত্রা প্রদান করতে পারে। প্রকৃত চিত্রটি প্রাদুর্ভাবের সময়কালের বিস্তার, এর স্থায়িত্বকাল এবং নীতি নির্ধারকরা কীভাবে স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি প্রশমিত করতে পদক্ষেপ নিতে পারবেন তার উপর নির্ভর করবে।
কভিড-১৯ একদিকে যেমন বড় ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি করেছে অন্যদিকে তেমনি বিশ্ব অর্থনীতিতে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তার হুমকি। অনেক উন্নত দেশই অর্থনৈতিক বিপর্যয় ঠেকাতে জরুরী পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়েছে। অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোন থেকে কভিড-১৯ এ কতজন আত্রান্ত হয়েছে শুধুমাত্র এটাই বিবেচ্য বিষয় নয় এর ফলে সৃষ্ট অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতির মাত্রাটাও জরুরী। করোনা পরবর্তী পরিস্থিতিতে বিশ্ব কেমন হবে তা নিয়ে ব্যাপক অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে আমরা একটি নতুন বিশ্ব দেখব যা আমাদের থেকে অনেক আলাদা এবং অজানা। বিশ্ব নেতাদের মানবতাকে বাঁচাতে একত্রিত হতে হবে, ভবিষ্যতে এই মহামারী মোকাবেলার জন্য স্বাস্থ্যসের্বা উন্নয়ন ও ওষুধের বিকাশের জন্য আরও বেশি অর্থ বরাদ্দের উপর গুরুত্ব দিতে হবে। –সংবাদ বিজ্ঞপ্তি