রাজধানীর দিলকুশায় অবস্থিত ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের প্রধান কার্যালয়ের সামনে একটি গুলির ঘটনা ঘটেছে। সকালে এই ঘটনার সময় ২০১৭ সালের আগে এবং পরে নিয়োগ পাওয়া ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়, যা গুলিতে রূপ নেয়। এতে বেশ কয়েকজন আহত হন এবং গুরুতর অবস্থায় একজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ইসলামী ব্যাংকের সূত্র ও প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, ২০১৭ সালের পর নিয়োগ পাওয়া কর্মীদের ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে প্রবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন পুরোনো কর্মীরা। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নতুন কর্মী চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার হওয়ায় তাদের ‘পটিয়ার কর্মী’ হিসেবে পরিচিতি রয়েছে। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এই কর্মীরা প্রধান কার্যালয়ের দিকে এগিয়ে গেলে পুরোনো কর্মীরা তাদের বাধা দেন। এর ফলে দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয় এবং এক পর্যায়ে গুলি ছোড়া হলে কয়েকজন আহত হন। গুরুতর আহত ব্যক্তিকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
গুলিবিদ্ধদের মধ্যে শফিউল্লাহ, আবদুল্লাহ আল মামুন, আবদুর রহমান ও বাকিবিল্লাহসহ আরও কয়েকজন রয়েছেন, যারা বর্তমানে ইসলামী ব্যাংক সেন্ট্রাল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
ব্যাংকে অস্থিরতা দীর্ঘদিন ধরে চললেও, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর তা আরও প্রকট হয়ে উঠেছে। সরকারের পতনের পর পরই ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে বিক্ষোভ শুরু হয়, যেখানে ২০১৭ সালের পর নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করার ঘোষণা দেওয়া হয়। সেই সময়ে মুজিব কর্নারও ভাঙচুর করা হয়।
ব্যাংকের সিবিএ নেতা আনিসুর রহমান জানান, ২০১৭ সালের পর যত নির্বাহী নিয়োগ পেয়েছেন, তারা আর ব্যাংকে ঢুকতে পারবেন না। তিনি বলেন, পরীক্ষাবিহীন ও অনিয়মিতভাবে নিয়োগ হওয়া সকল কর্মীর নিয়োগ বাতিল করা হবে এবং অবৈধভাবে চাকরি হারানো কর্মীদের পুনর্বহাল করা হবে। গত সাত বছরে পদোন্নতিবঞ্চিত কর্মীদেরও সঠিক পদোন্নতি দেওয়া হবে।
২০১৭ সালে ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেয় চট্টগ্রামভিত্তিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এস আলম গ্রুপ। এরপর থেকে প্রায় ১৪ হাজার কর্মকর্তা–কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়, যাদের বেশির ভাগই পটিয়ার। তবে এস আলম গ্রুপের বিরুদ্ধে ব্যাংক থেকে বিপুল অর্থ বের করে নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে, যা ব্যাংকের চলতি হিসাবে ঘাটতি সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বিশেষ ব্যবস্থায় টাকা ধার দিয়ে ব্যাংকটির দৈনন্দিন কার্যক্রম চালু রেখেছে।
ইসলামী ব্যাংকের এসইভিপি শওকত আলী বলেন, এস আলমের বিভিন্ন কোম্পানি ও ব্যাংকের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী, যারা ব্যাংকটি থেকে অর্থ লুট করেছে, তাদের নিয়োগ নিয়ে ব্যাংকে প্রবেশের চেষ্টা করে। এতে পুরোনো কর্মীরা বাধা দেয়, যার ফলে গুলি ছোড়া হয় এবং ছয়জন গুলিবিদ্ধ হন।
ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুনিরুল মওলা ঘটনার সময় ব্যাংকে উপস্থিত ছিলেন না এবং পুরোনো কর্মীরা ঘোষণা দিয়েছেন যে, মুনিরুল মওলা ব্যাংকে প্রবেশের চেষ্টা করলে তাকেও বাধা দেওয়া হবে। কর্মীরা ব্যাংকের পর্ষদ পুনর্গঠনের মাধ্যমে লুটেরাদের বের করে দেওয়ার এবং এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর নিয়োগপ্রাপ্ত সকল কর্মকর্তার বহিষ্কারের দাবি জানান।
দুপুর পর্যন্ত ইসলামী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে উত্তেজনা চলমান ছিল এবং কর্মচারীরা প্রধান কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করছিলেন।
— Source: Bangla daily Prothom Alo