অক্টোবরের শেষে ও নভেম্বরে দ্বিতীয় দফায় করোনাভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কা করছে সরকার। এ জন্য বিদ্যমান অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সোমবার প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার ভার্চুয়াল বৈঠকের অনির্ধারিত আলোচনায় এ নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা। এর পরিপ্রেক্ষিতে করোনাভাইরাস মোকাবেলার প্রস্তুতি ও করণীয় নির্ধারণ করতে আজ (মঙ্গলবার) আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক ডেকেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। তিনি বলেন, মাস্ক পরায় অনীহা দেখা দেয়ায় মার্কেট ও শপিংমলগুলোতে অ্যাকশনে যাচ্ছে সরকার। মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করতে আকস্মিক অভিযান পরিচালিত হবে ওইসব স্থানে।
করোনা পরিস্থিতি নিয়ে মন্ত্রিসভায় বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘অনেক দেশেই বিশেষত শীতপ্রধান দেশে দ্বিতীয় দফায় সংক্রমণ হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন নভেম্বরের শেষ থেকে সেকেন্ড ওয়েভ আসে কি-না সেই প্রিপারেশন রাখতে হবে। ম্যাসিভ যেন প্রিপারেশন থাকে। মঙ্গলবার আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা আহ্বান করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমাদের যেন প্রস্তুতি থাকে। সেকেন্ড ওয়েভ যদি আসে অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে সচেতন হতে পারলে সুবিধা হবে। পাশাপাশি উনি নির্দেশনা দিয়েছেন, অক্টোবরের শেষ বা নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে ঠাণ্ডার প্রকোপ বাড়তে পারে। সেক্ষেত্রে যাদের নিউমোনিয়া, সর্দি, জ্বর বা অ্যাজমাটিক সমস্যা রয়েছে, তাদের প্রস্তুতি থাকতে হবে। এসবে আক্রান্ত হলেই যেন চিকিৎসা করান। কোভিডের সেকেন্ড ওয়েভ এলে মাঠ পর্যায়ে কীভাবে মোকাবেলা করতে হবে সেটার জন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে বলেছেন। কাল (মঙ্গলবার) বসে বিস্তারিত কর্মসূচি নেব।’ এ লক্ষ্যে মঙ্গলবার দুপুর তিনটায় এই আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে জানা গেছে।
সবার মাস্ক ব্যবহার করা দরকার উল্লেখ করে খন্দকার আনোয়ার বলেন, ‘সবাই যদি ঠিকভাবে মাস্ক ব্যবহার না করি তাহলে কিন্তু মুশকিল। কারণ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুই তরফ থেকে যদি মাস্ক পরা থাকে তাহলে ৯৫ থেকে ৯৮ শতাংশ নিরাপদ। আর এক তরফ থেকে মাস্ক থাকলে ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ নিরাপদ। মাস্ক না পরলে কোনো কিছুই সফল হবে না। এজন্য সবাইকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। ঠাণ্ডা থেকে প্রটেকশন নিতে হবে। উপসর্গ দেখা গেলে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।’
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘সম্প্রতি একটি কাজে এক মার্কেটে গিয়েছিলাম, আমি সেখানে বেশি লোককে মাস্ক ছাড়াই ঘোরাফেরা করতে দেখেছি। পরে আমরা নির্দেশনা দিয়েছি, আমরা ক্রস চেক করব যে কোনো দিন, সেই মার্কেটে যদি সবাইকে মাস্ক পরা না দেখি তাহলে ইউ উইল টেক অ্যাকশন। ধর্ম মন্ত্রণালয়কে বলা হয়েছে, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে সব মসজিদে জোহর ও মাগরিবের নামাজের সময় যেন ঘোষণা দেয়া হয়, মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক, এটা রাষ্ট্রীয় কল্যাণকর নির্দেশ।’ স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে অভিযান অব্যাহত আছে। মোবাইল কোর্ট চলছে বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। করোনার দ্বিতীয় পর্যায় শুরু হলে সরকার আগের মতো আবার লকডাউনে যাবে কি না- জানতে চাইলে খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘যাওয়া হবে কি না, মাত্রাটা কেমন হবে আমরা তো জানি না। আমাদের প্রস্তুতি রাখতে হবে।’ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো। তারা যখন মনে করবে তখনই খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।’
‘শেখ মুজিব : এ নেশান’স ফাদার’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘শেখ মুজিব : এ নেশান’স ফাদার’ শীর্ষক একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন। মন্ত্রিসভার সাপ্তাহিক বৈঠকের শুরুতে সরকারি বাসভবন গণভবনে তিনি মোড়ক উন্মোচন করেন। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বইটি প্রকাশ করেছে।
মোড়ক উন্মোচনের সময় বইটির উপদেষ্টা সম্পাদক প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমেদ এবং সম্পাদক বদরুন্নেসা আহমেদ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রো-ভিসি ড. নাসরিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
সুত্র: যুগান্তর।