দেশে প্রবাসী আয়ের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। সদ্যবিদায়ী জুলাই মাসে প্রবাসী আয় এসেছে প্রায় ১৯১ কোটি মার্কিন ডলার, যা গত ১০ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর আগে, গত বছরের সেপ্টেম্বরে সর্বনিম্ন ১৩৩ কোটি ৪৩ লাখ ডলার প্রবাসী আয় এসেছিল। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রবাসী আয়সংক্রান্ত হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
জানা যায়, গত মাসের প্রথম ৩ সপ্তাহে গড়ে ৪০ থেকে ৫০ কোটি ডলার প্রবাসী আয় এসেছিল। এর মধ্যে ১ থেকে ২০ জুলাই এসেছে ১৪২ কোটি ৯৩ লাখ ডলার, এবং ২১ থেকে ৩১ জুলাই এসেছে ৪৭ কোটি ৯৭ লাখ ডলার। বিশেষ করে, ৩১ জুলাই এক দিনেই এসেছে ১২ কোটি ডলার।
শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে ১৯ থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ব্যাংক বন্ধ ছিল। এ ছাড়া, টানা ৫ দিন ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট এবং ১০ দিন মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ থাকার ফলে দেশের ব্যাংকগুলোর সঙ্গে বৈদেশিক লেনদেন প্রায় বন্ধ হয়ে যায়।
জুন মাসে প্রবাসী বাংলাদেশিরা দেশে ২৫৪ কোটি ডলার আয় পাঠিয়েছিলেন, যা গত তিন বছরের মধ্যে একক মাস হিসেবে সর্বোচ্চ। এর আগে, ২০২০ সালের জুলাইয়ে সর্বোচ্চ ২৫৯ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় এসেছিল।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, বিদেশ থেকে প্রবাসী আয় পাঠালে ব্যাংকগুলো তা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিতরণ করতে বাধ্য। তবে, রেমিট্যান্স হাউসগুলো যদি এই আয় ধরে রাখে, তাহলে তা দেশে আসতে কিছুটা সময় লাগে। সাধারণত এই ক্ষেত্রে দুই-তিন দিনের বেশি সময় লাগে না।
প্রবাসী আয় কমে যাওয়ায় দেশের শীর্ষস্থানীয় ১২ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে ডেকে প্রবাসী আয় বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকগুলো প্রবাসী আয় সংগ্রহে প্রতি ডলার ১১৭ থেকে ১১৮ টাকায় সংগ্রহ করে আসছিল। তবে, প্রবাসী আয় কমে যাওয়ায় তাদের কিছুটা বাড়তি দাম দিয়ে হলেও বৈধ পথে আয় বাড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ফলে প্রবাসী আয়ে ডলারের দাম ১২০ টাকায় উঠেছে।
দীর্ঘদিন ধরে দেশে ডলার সংকট চলছে। এই সংকট কাটাতে এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াতে প্রবাসী আয়সহ বিদেশ থেকে অর্থ আনতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে তদারকি কমিয়েছে এবং বৈধ পথে অর্থ আনার ক্ষেত্রে নিয়মকানুন শিথিল করেছে। গত কয়েক মাসে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়েছিল প্রবাসী আয় আসার ক্ষেত্রে। তবে, গত মাসে সেই ধারায় কিছুটা ছন্দপতন হয়েছে।
২০২০ সালে করোনা মহামারির কারণে আন্তর্জাতিক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেলে বৈধ পথে প্রবাসী আয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়ে যায়। তখন প্রতি মাসে প্রবাসী আয়ের প্রবাহ গড়ে ২০০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছিল, যার ফলে বৈদেশিক মুদ্রার মোট রিজার্ভ এক পর্যায়ে ৪৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়। তবে, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর পণ্য আমদানির খরচ বেড়ে ডলার সংকট দেখা দেয়, যা এখনো কাটেনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে ২১৬১ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় এসেছিল। আর ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রবাসী আয় এসেছে ২৩৯১ কোটি ডলার।