স্বাস্থ্য অধিদফতরের কোটিপতি গাড়িচালক আবদুল মালেক ওরফে হাজী আবদুল মালেককে (৬৩) র্যাব গ্রেফতার করেছে। রাজধানীতে তার একাধিক বাড়ি, প্লট, ফ্ল্যাটের খোঁজ পাওয়া গেছে।
একজন গাড়ি চালকের দুর্নীতির মাধ্যমে গড়া বিশাল সম্পদের ফিরিস্তি দেখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা রীতিমতো হতবাক হয়েছেন। রোববার ভোরে রাজধানীর তুরাগ থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
র্যাব জানায়, সুনির্দিষ্ট অভিযোগে ভিত্তিতে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তুরাগ থানায় তাকে সোপর্দ করা হয়েছে।
র্যাব-১ এর অধিনায়ক (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাফী উল্লাহ বুলবুল জানান, অবৈধ অস্ত্র, জালনোটের ব্যবসা ও চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ড্রাইভার মালেক।
গ্রেফতারের সময় তার কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, পাঁচ রাউন্ড গুলি, দেড় লাখ টাকার জালনোট, একটি ল্যাপটপ ও মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে।
অবৈধ অস্ত্র ও জাল টাকা উদ্ধারের ঘটনায় তার বিরুদ্ধে মামলা করা হবে। তিনি আরও বলেন, এলাকায় সাধারণ মানুষকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে মালেক ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছিল।
তার দাপটে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল। অনুসন্ধানে তার আয়-ব্যয়ের সঙ্গে দৈনন্দিন জীবনযাত্রার মান ও সম্পদের বিস্তর অসামঞ্জস্য উঠে এসেছে।
তুরাগ থানার কামারপাড়ার বামনের টেক এলাকার বাসা থেকে মালেককে গ্রেফতার করে র্যাব। র্যাবের হাতে গ্রেফতারের পর মালেক বেশ কয়েকজন সহযোগীর নাম ফাঁস করেছেন।
তাদের মধ্যে রয়েছেন- অফিস সহকারী আবু হানিফ, উচ্চমান সহকারী জাকির হোসেন, প্রধান সহকারী জালাল উদ্দিন, জাহাঙ্গীর হোসেন হাওলাদার ও আনোয়ার হোসেন।
এছাড়া ডা. বেলাল হোসেন নামের এক প্রভাবশালী কর্মকর্তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কথা স্বীকার করেছেন মালেক।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য অধিদফতরের একজন সহকারী পরিচালক যুগান্তরকে বলেন, ড্রাইভার মালেক দীর্ঘদিন ধরে অধিদফতরের ক্যান্টিন দখল করে রেখেছেন।
তার দৌরাত্ম্যে ক্যান্টিন সঠিকভাবে পরিচালনা করা যাচ্ছে না। ৮ বছর ধরে ক্যান্টিনটি তিনি নামমাত্র মূল্যে ইজারা নিয়ে দখল করে রেখেছেন।
অধিদফতরের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির নিয়োগ-বদলি বাণিজ্যেও মালেক জড়িত। কোনো কর্মকর্তা তার সুপারিশ না শুনলে তাকে ঢাকার বাইরে বদলি করাসহ শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার ঘটনা ঘটিয়েছে মালেক।
এরকম ঘটনা একাধিকবার ঘটেছে। লোকলজ্জার ভয়ে কর্মকর্তারা এসব বিষয় কখনও প্রকাশ করেননি। করোনা মোকাবেলায় কোভিড হাসপাতালে আউট সোসিং কর্মচারী নিয়োগেও মোটা অংকের ঘুষ বাণিজ্য করেন মালেক।
আড়াই থেকে ৩ লাখ টাকা ঘুষের বিনিময়ে ল্যাব সহকারী থেকে শুরু করে বিভিন্ন পদে তিনি লোক নিয়োগ দিয়েছেন।
একজন গাড়িচালক হয়েও মালেক পাজেরো জিপ ব্যবহার করেন। তার রয়েছে তেল চুরির সিন্ডিকেট। স্বাস্থ্য অধিদফতরের গাড়িচালকরা তেল চুরি করলে তার একটি অংশ মালেককে দিতে হয়। একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মালেক স্বাস্থ্য অধিদফতর নিয়ন্ত্রণ করেন।
মালেকের অঢেল সম্পদ: মালেকের ঢাকায় অন্তত চারটি ফ্ল্যাট, ১০টি প্লট, কামারপাড়ায় এক বিঘা জমি, বামনের টেক এলাকায় ১০ কাঠা জায়গার ওপর ৭ তলা বাড়ি (বাড়ি নং ৪২ হাজী কমপ্লেক্স), স্ত্রীর নামে একটি ৭ তলা বাড়ি, হাতিরপুল এলাকায় নির্মাণাধীন ১০ তলা বাণিজ্যিক ভবন রয়েছে।
এছাড়া গবাদিপশুর বৃহৎ খামার, মাছের ঘের ও পরিবহন ব্যবসা পরিচালনা করেন তিনি। হাতিরপুল ইস্টার্ন প্লাজা মার্কেটের পেছনে নির্মাণাধীন মালেকের ১০ তলা বাণিজ্যিক কাম আবাসিক ভবন।
এটি দেখাশোনা করেন তার ছোট ভাই আবদুল খালেক। খালেক অধিদফতরের পার শাখার পিয়ন হিসেবে কর্মরত। মালেকের বহু সম্পদ খালেকের স্ত্রীর নামে রয়েছে।
এখন পর্যন্ত চারটি বেসরকারি ব্যাংকে মালেকের নামে-বেনামে প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকার সন্ধান পাওয়া গেছে। এসব টাকা তার স্ত্রী, ভাই খালেক ও এক ভাতিজাসহ বেশ কয়েকজন আত্মীয়র নামে রাখা হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী গাড়িচালক মালেকের শিক্ষাগত যোগ্যতা অষ্টম শ্রেণি। ১৯৮২ সালে সাভার স্বাস্থ্য প্রকল্পে চালক হিসেবে যোগদান করেন।
পরে ১৯৮৬ সালে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিবহন পুলে চালক হিসেবে চাকরি শুরু করেন। বর্তমানে তিনি প্রেষণে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা অধিদফতরে কর্মরত।
ঢাকার বিভিন্ন স্থানে তার একাধিক বাড়ি, গাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। জাল টাকার ব্যবসা ছাড়াও এলাকায় চাঁদাবাজিতে জড়িত মালেক।
সুত্র: যুগান্তর।