মিয়ানমার সরকারের দমনপীড়নের মুখে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ সরকার মানবিক কারণে আশ্রয় দিয়েছে। কিন্তু রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে এখন নানা ঝুঁকিতে আছে বাংলাদেশ। রোহিঙ্গাদের কারণে দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক চাপে আছে দেশ।এ নিয়ে বর্তমানে সব থেকে বেশি আলোচনার মুখে পরছে দেশের অর্থনৈতিক ব্যাবস্থা।
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পেছনে সরকারকে বাড়তি মনোযোগ দিতে হচ্ছে। তাদের বাসস্থান, নতুন রাস্তাঘাটসহ উন্নত পরিবেশ নিশ্চিত করতে সরকারের রাষ্ট্রীয় ব্যয় বাড়ছে। এছাড়া তাদের নিরাপত্তার জন্য পুলিশ, সেনাবাহিনী, বিজিবিসহ বিভিন্ন বাহিনীর লোকজন নিয়োগ করতে হয়েছে। আর এই ব্যয়টা হচ্ছে জাতীয় বাজেট থেকে। রোহিঙ্গা সমস্যা না থাকলে এ টাকা অন্য জায়গায় ব্যয় করা যেত। সেটা করতে পারলে দেশের উন্নয়ন হতো।
কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে এখন স্থানীয় নাগরিকরা সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়েছে। দিন দিন পরিস্থিতি কঠিন হয়ে উঠছে। এভাবে চলতে থাকলে দেশ নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়বে। সমস্যা দীর্ঘমেয়াদি হলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় একসময় এসব ভুলে যাবে, অন্য সমস্যার ভিড়ে তখন এটা ক্ষুদ্র ইস্যুতে পরিণত হবে। রোহিঙ্গাদের কারণে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে।
নিত্যপণ্য দুষ্প্রাপ্য হয়ে পড়েছে। অল্প পারিশ্রমিকে রোহিঙ্গারা লবণ মাঠ, চিংড়ি হ্যাচারি, চাষাবাদসহ বিভিন্ন কাজ করছে। ফলে স্থানীয় দরিদ্র শ্রমিকরা কর্মহীন হয়ে পড়েছে। যদিও নিয়ম অনুযায়ী আশ্রিত রোহিঙ্গারা কোনো কাজে নিয়োজিত হতে পারবে না। উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার আশ্রয় কেন্দ্রগুলোর আশপাশে শিক্ষাব্যবস্থা একেবারে ভেঙে পড়েছে। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। ফলে সেখানে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি অর্ধেকেরও কম।
স্থানীয় কট্টরপন্থী রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের কর্মী জোগাতে অনেক রোহিঙ্গা যুবককে কাছে টানছে বলেও অভিযোগ আছে। এভাবে রোহিঙ্গারা যদি রাজনীতিতে ঢুকতে থাকে তাহলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে।
রোহিঙ্গাদের অবস্থান যত দীর্ঘস্থায়ী হবে, কক্সবাজারের পর্যটনশিল্পে ধস নামার আশঙ্কা ততই বাড়তে থাকবে। কক্সবাজারে প্রায় ৩৫০টি হোটেল, মোটেল, গেস্ট হাউজ ও কটেজ রয়েছে। রোহিঙ্গা নারীদের অনেককেই হোটেল-মোটেলে যৌন ব্যবসায় পাওয়া যাচ্ছে। এদের অনেকেই এইডসে আক্রান্ত। ফলে কক্সবাজার অঞ্চলসহ সারা দেশে এইডসের ঝুঁকি বাড়ছে।
রোহিঙ্গা যুবকরা মাদক পাচারের সঙ্গে আগে থেকেই জড়িত। দেশে যত ইয়াবা ঢোকে তার ৯০ শতাংশই মিয়ানমার থেকে আসে। ইয়াবা এখন বাংলাদেশের অন্যতম বড় সমস্যা। অভিযোগ আছে, পালিয়ে আসার সময় অনেক রোহিঙ্গা সঙ্গে করে ইয়াবা নিয়ে এসেছে।
উখিয়া ও টেকনাফে সড়কের দু’পাশে এখন আর পাহাড়-বনাঞ্চল চোখে পড়ে না। যতদূর দৃষ্টি যায়, শত শত ঝুপড়ি ঘর দেখা যায়। পাহাড়গুলো কেটে এসব ঝুপড়ি ঘর বানানো হয়েছে। ফলে এ এলাকায় ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিশেজ্ঞরা বলেছেন, একটু ভারি বৃষ্টিপাত হলেই ধসে পড়তে পারে পাহাড়। পরিবেশ বিজ্ঞানীদের মতে, পাহাড় কাটার ফলে যে ক্ষতি হয়েছে, তা আর পূরণ হবে না। পাহাড়গুলো অনেক বছরের পুরনো। নতুন করে গাছ হয়তো লাগানো যাবে। কিন্তু কাটা পাহাড়গুলো আর মাটি দিয়ে ভরাট করা সম্ভব হবে না। পাহাড় কাটার ফলে এখন বৃষ্টি হলে পাহাড়ের মধ্যে বৃষ্টির পানি ঢুকে পড়বে। এতে যে কোনো সময় পাহাড় ধসে ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটতে পারে।
রোহিঙ্গারা রান্না করার জন্য যে জ্বালানি ব্যবহার করছে, তা হল বনের কাঠ। এ কাঠগুলো কোনো না কোনোভাবে উখিয়া-টেকনাফের জঙ্গল থেকে আসছে। প্রতিদিন জ্বালানির জন্য রোহিঙ্গাদের প্রচুর পরিমাণ কাঠের প্রয়োজন হয়। এভাবে দিনের পর দিন চলতে থাকলে ওই অঞ্চলের বনভূমি ধ্বংস হয়ে যাবে।
যত দিন যাবে উপরোক্ত সমস্যাগুলো ততই প্রকট আকার ধারণ করবে। বিশ্বকে অবশ্যই এর একটা সমাধান খুঁজে বের করতে হবে। অন্যথায় বিদ্যমান অবস্থা বাংলাদেশের নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ঠেলে দেবে।
সুত্রঃযুগান্তর