বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দণ্ডের কার্যকারিতা স্থগিত করে মুক্তির মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়ানো হয়েছে। তার পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদন করলে তাতে সম্মতি দেয় আইন মন্ত্রণালয়। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের অনুমোদনের পর মঙ্গলবার এ বিষয়ে নির্বাহী আদেশ জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ। আগের মতোই মুক্তির বর্ধিত মেয়াদে খালেদা জিয়া নিজ বাসায় থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করবেন। এ সময় তিনি দেশের বাইরে যেতে পারবেন না বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।
জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়: সাজাপ্রাপ্ত কয়েদি খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে দাখিলকৃত আবেদন এবং আইন ও বিচার বিভাগের আইনগত মতামতের আলোকে ‘দ্য কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউর’-এর ধারা-৪০১(১)-এ দেয়া ক্ষমতাবলে দুটি শর্তে (বাসায় থেকে চিকিৎসা ও বিদেশ না যাওয়া) তার (খালেদা জিয়ার) দণ্ডাদেশ ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে ছয় মাসের জন্য স্থগিত করা হল।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল যুগান্তরকে বলেন, ‘বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পরিবার তার সাজা স্থগিতের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করেছিল। এ বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয় থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর আমাদের কাছে সুপারিশ এসেছে। তাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুমোদন দিয়েছেন। আগের মতোই এই সময়ে খালেদা জিয়াকে ঢাকায় নিজের বাসায় থেকে চিকিৎসা নিতে হবে। এবং তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না। করোনার কারণে গত ছয় মাস খালেদা জিয়ার পরিবার তার কোনো চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারেননি। এই বিবেচনায় তার মুক্তির মেয়াদ ছয় মাস বাড়ানো হয়েছে।’
৭৫ বছর বয়সী খালেদা জিয়া বর্তমানে গুলশানে তার ভাড়া বাসা ‘ফিরোজায়’ রয়েছেন। তিনি আর্থ্রাইটিসের ব্যথা, ডায়াবেটিস, চোখের সমস্যাসহ বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যায় ভুগছেন। ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় পাঁচ বছরের সাজায় কারাজীবন শুরু করেন খালেদা জিয়া। এরপর ৩০ অক্টোবর এ মামলায় আপিলে তার আরও পাঁচ বছরের সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করেন হাইকোর্ট। একই বছরের ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫। রায়ে সাত বছরের কারাদণ্ড ছাড়াও খালেদা জিয়াকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। জরিমানা অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দেন আদালত।
পরে কারাগারে থাকাবস্থায় চিকিৎসার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) নেয়া হয় খালেদা জিয়াকে। প্রয়োজনীয় পরীক্ষা শেষে তাকে আবারও কারাগারে পাঠানো হয়। এভাবে কয়েক দফায় তাকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে এবং হাসপাতাল থেকে কারাগারে নেয়া হয়। মামলা দুটিকে ষড়যন্ত্রমূলক আখ্যা দিয়ে বিএনপির নেতারা চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি জানিয়ে আসছিলেন। এর মধ্যে বিশ্বজুড়ে করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হলে বিএনপির নেতারা খালেদা জিয়ার মুক্তির জোর দাবি তোলেন। পরিবারের পক্ষ থেকেও খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানানো হয়। সেই প্রেক্ষাপটে কারাবন্দি খালেদা জিয়াকে সরকার শর্তসাপেক্ষে মুক্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে গত ২৪ মার্চ গুলশানে সংবাদ সম্মেলনে জানান আইনমন্ত্রী। আইনমন্ত্রী আরও জানিয়েছিলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে (করোনাভাইরাস) সরকার বয়স বিবেচনায় মানবিক কারণে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তার সাজা ছয় মাসের জন্য স্থগিত থাকবে। তিনি বাসায় থেকে চিকিৎসা নেবেন এবং বিদেশ যেতে পারবেন না-এমন শর্তে সাজা স্থগিত থাকবে।’ এরপর খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয়া হয়। ২৫ মার্চ হাসপাতাল থেকে মুক্তি পেয়ে বাসায় ফেরেন তিনি।
প্রথম দফা মুক্তির মেয়াদ শেষ হলে গত ২৫ আগস্ট খালেদা জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে স্থায়ী মুক্তি চেয়ে আবেদন করা হয়েছিল। এ ছাড়া বিএনপির নেত্রীকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা করানোর বিষয়েও তার পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে সেই দাবি বিবেচনায় নেয়া হয়নি।
সুত্রঃ যুগান্তর।