নোবেল শান্তি পুরস্কারপ্রাপ্ত অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশে ফিরেছেন। বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) রাত ৮:৩০টায় তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে শপথ নেবেন। এর আগে, দুপুরে ফ্রান্স থেকে ঢাকায় এসে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। এ সময়, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে নানা প্রশ্নের উত্তর দেন। ড. ইউনূস তার বক্তব্যে দেশের সংঘাত, সহিংসতা ও অস্থিতিশীলতা কাটিয়ে সঠিক পথে এগিয়ে যাওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। তার সঙ্গে ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা।
প্রথমেই ড. ইউনূস বলেন, “আজ আমাদের গৌরবের দিন। বাংলাদেশ আজ নতুন এক বিজয় দিবস সৃষ্টি করেছে, যা আমাদের আরও মজবুত করে এগিয়ে নিতে হবে। আমি বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি সেই তরুণ সমাজকে, যারা এটি সম্ভব করেছে। তারা আজ আমার পাশে রয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “তারা এ দেশকে রক্ষা করেছে এবং নতুনভাবে পুনর্জন্ম দিয়েছে। আমরা এই পুনর্জন্মের বাংলাদেশকে দ্রুতগতিতে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। এটাই আমাদের শপথ এবং আমরা তা রক্ষা করবো।”
ড. ইউনূস আবেগময় কণ্ঠে স্মরণ করেন আবু সাঈদকে, যিনি বন্দুকের সামনে দাঁড়িয়ে অদম্য সাহস দেখিয়েছিলেন। তিনি বলেন, “তারপর থেকে কোনো যুবক-যুবতী আর হার মানেনি। যতই গুলি মারো, আমরা আছি।”
তিনি বলেন, “যার কারণে এই আন্দোলন সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে এবং বাংলাদেশ দ্বিতীয়বার স্বাধীনতা অর্জন করেছে, সেই স্বাধীনতা আমাদের রক্ষা করতে হবে। শুধু রক্ষা নয়, এ স্বাধীনতার সুফল প্রতিটি ঘরে পৌঁছে দিতে হবে। তা না হলে এ স্বাধীনতার কোনো মূল্য নেই।”
ড. ইউনূস আরও বলেন, “বাংলাদেশের স্বাধীনতা মানে মানুষের নিজের পরিবর্তন, ব্যক্তিগত উন্নয়ন, সুযোগের পরিবর্তন এবং তার সন্তানদের ভবিষ্যতের উন্নতি। আমাদের তরুণ সমাজকে বুঝতে হবে যে, এই দেশটা তাদের হাতে এবং তারা এটিকে তাদের মতো করে গড়তে পারবে।”
তরুণদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “পুরোনো চিন্তা বাদ দিয়ে সৃজনশীলতাকে কাজে লাগাতে হবে। সরকারকে দমন-পীড়নের যন্ত্র হিসেবে দেখা যাবে না। সরকারকে মানুষের আস্থাভাজন হতে হবে, যেন মানুষ বিশ্বাস করতে পারে যে, সরকারি লোক মানে তাদের রক্ষক।”
তিনি বলেন, “আমাদের সবার একত্রে কাজ করতে হবে। দেশে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে এবং আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে, যাতে দেশকে অগ্রসর করার পদক্ষেপ নেওয়া যায়।”
দেশবাসীর প্রতি আস্থা রেখে ড. ইউনূস বলেন, “ছাত্ররা আমাকে চেয়েছে, আমি তাদের ডাকে সাড়া দিয়েছি। আমার প্রথম দায়িত্ব হলো দেশে শান্তি ফিরিয়ে আনা। যদি আমার প্রয়োজন মনে করেন, তাহলে আমাকে দেখাতে হবে যে আপনারা আমাকে মানেন।”
শেষে তিনি বলেন, “বাংলাদেশ একটি সুন্দর দেশ এবং একে সুন্দরভাবে গড়ে তোলা সম্ভব। আমাদের তরুণরাই এ দেশের ভবিষ্যৎ, তাদের হাত ধরে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।”