গতকাল রোববার (২৫ আগস্ট) বিকেল ৩টার দিকে ঢাকার নাখালপাড়া থেকে আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপকে গ্রেফতার করা হয়। এই খবর যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর পর, সেখানকার আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী গভীর দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের এক নেতা জানান, আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপের নিউ ইয়র্কে ৪০ লাখ ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৪৮ কোটি টাকা) ব্যয়ে একাধিক বাড়ি কেনার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের কিছু নেতাকর্মী সরাসরি যুক্ত ছিলেন। তিনি আশঙ্কা করছেন, সঠিক তদন্ত হলে এই নেতারাও দুর্নীতির সাথে জড়িত প্রমাণিত হতে পারেন। গোলাপের গ্রেফতারের পর যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
জানা গেছে, সাবেক এই সংসদ সদস্য নিউ ইয়র্কে ৪০ লাখ ডলারেরও বেশি মূল্যে একাধিক বাড়ি কিনেছেন। তবে এই বিদেশি সম্পদ তিনি তার নির্বাচনী হলফনামায় উল্লেখ করেননি।
গবেষণা সাংবাদিকদের আন্তর্জাতিক সংগঠন ‘অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্ট (ওসিসিআরপি)’ ২০২৩ সালের ১৩ জানুয়ারি তাদের ওয়েবসাইটে একটি প্রতিবেদনে আবদুস সোবহান গোলাপের যুক্তরাষ্ট্রে বাড়ি কেনার বিষয়টি প্রকাশ করে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, আবদুস সোবহান ২০১৪ সালে প্রথমবারের মতো নিউ ইয়র্কের জ্যাকসন হাইটস এলাকায় একটি অ্যাপার্টমেন্ট কেনেন। এরপরের পাঁচ বছরে তিনি নিউ ইয়র্কে মোট ৯টি সম্পত্তি (ফ্ল্যাট বা বাড়ি) কিনেছেন, যার মূল্য ৪০ লাখ ডলারের বেশি।
ওসিসিআরপির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০১৪ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে তিনি নিউ ইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে পাঁচটি কনডোমিনিয়াম কেনেন, যার মোট মূল্য ছিল প্রায় ২৪ লাখ ডলার। এছাড়া আশপাশের ভবনগুলোতে আরও তিনটি অ্যাপার্টমেন্ট কেনেন, যার মূল্য ছিল ৬ লাখ ৮০ হাজার ডলার। এসব সম্পত্তি নগদ অর্থে কেনা হয়েছিল এবং তার স্ত্রী গুলশান আরার নামে নিবন্ধিত ছিল।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে, সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর, আবদুস সোবহান নিউ ইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে আরও একটি সম্পত্তি কিনেন, যার মূল্য ছিল প্রায় ১২ লাখ ডলার। ২০১৯ সালের ১৫ আগস্ট তিনি মার্কিন নাগরিকত্ব ত্যাগ করেন, আর তার সাত মাস আগে তিনি বাংলাদেশে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
গোলাপের রাজনৈতিক জীবন সম্পর্কে জানা যায়, ১৯৮১ সালের ১৭ মে শেখ হাসিনা দেশে ফেরার পর তিনি তার সংস্পর্শে আসেন এবং পরবর্তীতে শেখ হাসিনার বিশেষ সহকারী হিসেবে কাজ করেন। ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনের পর শেখ হাসিনার নির্দেশে তিনি বিভিন্ন জেলা সফর করে নির্বাচনের সার্বিক মূল্যায়ন ও বিশ্লেষণের জন্য তথ্য সংগ্রহ করেন।
২০১৮ সালে, মাদারীপুর-৩ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন গোলাপ। ২০১৬ সালে তিনি আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং পরবর্তীতে প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদকের দায়িত্ব পান। সর্বশেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী তাহমিনা বেগমের কাছে পরাজিত হন।