বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের আন্দোলন কেন্দ্র করে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা সংঘাত, ইন্টারনেট না থাকা ও কারফিউর কারণে অচল ছিল অথনৈতিক খাতের বড় অংশ।
এরই মধ্যে গত দুই দিনে হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে ডলারের দাম। প্রায় দুই সপ্তাহের ব্যবধানে খোলা বাজারে ডলারের দাম বেড়ে এখন ১২৪–১২৫ টাকায় পৌঁছেছে।
দুই সপ্তাহ আগেও ডলারের দাম ছিল ১১৮ – ১১৯ টাকা। এরপর দাম বাড়তে শুরু এবং এ সপ্তাহের শুরুতে ১২১ – ১২২ টাকা দিয়ে প্রতি ডলার কিনতে হয়েছে ক্রেতাদের।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রবাসী রেমিট্যান্স পাঠানো কমে যাওয়া এবং বিদেশ থেকে মানুষ আসা কমে যাওয়ায় সরবরাহ কমে গেছে ডলারের। ফলে ডলার সংকট তৈরি হয়েছে।
খোলা বাজারে ডলারের যে পরিস্থিতি
রাজধানীর বেশ কয়েকটি মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখা যায়, বুধবার প্রতি ডলার ১২৪-১২৫ টাকা দরে বেচাকেনা হচ্ছে। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে আবার তা ১২৪ টাকা ৫০ পয়সা।
বিক্রেতারা জানান, বিদেশ থেকে ফেরার সময় প্রবাসীরা যে ডলার নিয়ে আসেন খোলা বাজারে সেসব ডলার বিক্রি হয়।
চলমান পরিস্থিতিতে মানুষ আসা কমে যাওয়ায় ডলার সরবরাহ কমে গেছে। সংকট তৈরি হওয়ায় দাম বেড়ে গেছে।
ধানমন্ডির রয়েল মানি এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. এনামুল হক বিবিসি বাংলাকে বলেন, “ব্যাংকের নির্ধারিত রেট ১১৮ টাকা। আমরা এক টাকা বেশি ১১৯ টাকায় বিক্রি করেছি আজকে। কিন্তু বাস্তবে ডলার এখন নেই।”
“যেসব কাস্টমাররা বাইরে থেকে আসে তাদের কাছ থেকে আমরা ডলার কিনি। আগে থেকেই সরবরাহ কম ছিল। এখনকার অ্যাবনরমাল সিচুয়েশনের কারণে ডলারের সরবরাহ আরো কমছে,” বলেন মি. হক।
কোটা সংস্কার আন্দোলন কেন্দ্র করে দেশ জুড়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি এবং এর জের ধরে কারফিউ জারি, ইন্টারনেট বন্ধ থাকা এবং কয়েকদিন ব্যাংক বন্ধ থাকায় গত ১৬ই জুলাই থেকেই থমকে গেছে প্রবাসী আয়ের প্রবাহ।
অথচ মাত্র এক মাস আগেই অর্থাৎ জুন মাসে প্রায় চার বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছিলো বাংলাদেশে। যার পরিমাণ ছিল দুই দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলার।
এটি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১৬ শতাংশ বেশি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ইন্টারনেট বন্ধ থাকা ও ব্যাংকিং চ্যানেল বন্ধ থাকায় ১৯শে জুলাই থেকে ২৪শে জুলাই সপ্তাহে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে মাত্র সাত কোটি আশি লাখ ডলার।
অথচ মাসের প্রথম ১৮ দিনে প্রতিদিন গড়ে সাত কোটি ৯০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল।
১৬ই জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করে। একপর্যায়ে সরকার কারফিউ জারি করে সেনা মোতায়েন করে। ১৯শে জুলাই থেকে ২৩শে জুলাই পর্যন্ত কার্যত ব্যাংকিং কার্যক্রম বন্ধ থাকায় ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসী আয় আসা সম্ভব ছিল না।
এরই মধ্যে সামাজিক মাধ্যমে রেমিট্যান্স না পাঠানোর ক্যাম্পেইন শুরু হয়। ফলে ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসী আয়ের প্রবাহ কমে যাওয়ায় খোলা বাজারে প্রভাব পড়েছে।
যদিও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাফর আলম বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, “ব্যাংকিং সেবা নিরবচ্ছিন্ন থাকলে ধীরে ধীরে প্রবাসী আয় স্বাভাবিক হয়ে আসবে। কারণ এ আয় বাড়াতে বেশ কিছু পদক্ষেপ ইতোমধ্যেই নেয়া হয়েছে।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত দামে ব্যাংকগুলোকে ডলার বেচাকেনা করতে হয়। বুধবার ডলার প্রতি এ দাম ১১৮ টাকা নির্ধারিত ছিল।
কয়েকটি ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, গত কয়েক বছর ধরেই ডলার সংকটের যে ধারাবাহিকতা তা এখনো চলছে। তবে নির্ধারিত মূল্যেই ডলার বিক্রি হয় ব্যাংকগুলোতে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ডলারের এক্সচেঞ্জ রেট এ বছরই বাজার-ভিত্তিক হবে বলে আশা করা হয়েছিল কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি আরো সংকট বাড়িয়ে তুলেছে। ফলে মূল্যস্ফীতি আরো বেড়ে যেতে পারে।
পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বিবিসি বাংলাকে বলেন, “একটা আশা ছিল মে মাসে এক্সচেঞ্জ রেটটা বাজারভিত্তিক করা, ইন্টারেস্ট রেট বাজার-ভিত্তিক করা। এক্সচেঞ্জ রেটটা স্থির হয়ে যাচ্ছিল। আড়াই মাস স্থির ছিল, ১১৭-১১৮ টাকার মধ্যেই ছিল। আশা ছিল এটা থাকলে আগামী চার-পাঁচ মাসে ইনফ্লেশন কমে আসবে।”
“কিন্তু এখন যে চিত্র তাতে বড় রকমের আউটপুট লস হয়েছে আমাদের। এতে সামগ্রিক অর্থনীতিতে এক লাখ কোটি টাকা বা দশ বিলিয়ন ডলারের মতো লস হয়েছে,” বলেন মি. মনসুর।
সাম্প্রতিক সংঘাতময় পরিস্থিতির কারণে অভ্যন্তরীণ পণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হয়েছে। আবার অভ্যন্তরীণ কারণে চট্টগ্রাম বন্দরের আন্তর্জাতিক পণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থাও বিঘ্নিত হয়েছে। এসব কারণে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেছে বলে জানান তিনি। ।
মি. মনসুর বলেন, “ডলারের এই এক্সচেঞ্জ রেটের স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পড়বে। কারণ রেমিট্যান্সের প্রবাহে বড় রকমের পতন হয়েছে। হয়তো এটা থেকে উত্তরণ ঘটবে। কিন্তু পুরোপুরিভাবে আগের অবস্থায় যেতে পারবো কি না সেটা নিয়ে সন্দিহান।”
তথ্যপ্রযুক্তি খাতে যে অবস্থা
তথ্যপ্রযুক্তি খাতের ব্যবসায়ীরা বলছেন, ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় সব ব্যবসার ক্ষতি হলেও এ খাতের ক্ষতির পরিমাণ একটু বেশিই। কারণ যারা সফটওয়ার ব্যবসায় জড়িত তাদের ব্যবসার লাইফ লাইনই হচ্ছে ইন্টারনেট।
কিন্তু অন্য ব্যবসার সাপোর্ট লাইন হিসেবে ইন্টারনেট কাজ করে। একইসাথে ই-কমার্স খাতও ইন্টারনেট ছাড়া চলে না।
গত কয়েক বছরে বাংলাদেশ ধীরে ধীরে যে বাজার তৈরি করতে পেরেছে এবং বিদেশি ক্লায়েন্টদের কাছে আস্থার জায়গায় পরিণত হয়েছে এবারের পরিস্থিতিতে সেটি অনেকটাই হুমকির মুখে পড়েছে।
ইন্টারনেট না থাকার কারণে তাদের এবং ক্লায়েন্টদের সাথে যোগাযোগ করে কিছু জানাতে না পারায় যে অনাস্থা তৈরি হয়েছে তাতে তারা বিকল্প বাজারের দিকে চলে যাওয়ার শঙ্কা আছে বলে মনে করছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতের উদ্যোক্তারা।
তথ্য প্রযুক্তি খাতের ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) এর তথ্য অনুযায়ী, ইন্টারনেট সংযোগ না থাকার সময়ই শুধু পাঁচশ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে।
আরও ক্ষতির শঙ্কায় আছেন এ খাতের উদ্যোক্তারা।
বেসিসের সভাপতি রাসেল টি আহমেদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, “দৈনন্দিন ক্ষতির চেয়ে এখন স্থায়ী ক্ষতি নিয়ে ভাবছি। কারণ ক্লায়েন্টরা আস্থা হারিয়েছে। আবার আস্থা অর্জন করে তাদের ফিরিয়ে আনা বেশ কঠিন ব্যাপার।”
এ খাতে বাংলাদেশে যে বাজার তৈরি হয়েছে এর বিকল্প হিসেবে এখন বিদেশি ক্লায়েন্টরা অন্য দেশের দিকে ঝুঁকছে।
সফটওয়ার কোম্পানি ভাইজার এক্স লিমিটেডের এমডি ও সিইও ফয়সাল মোস্তফা বিবিসি বাংলাকে বলেন, “তারা বিকল্প হিসেবে বিভিন্ন দেশের কথা ভাবছে। ভারত, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন এই ধরনের দেশে বিজনেসগুলো চলে যেতে পারে।”
পোশাক খাতের যে অবস্থা
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে কারফিউ জারি হলে বন্ধ হয়ে যায় পোশাক কারখানাগুলোও। ইন্টারনেট সংযোগ না থাকার কারণে সংকটে পড়ে এ খাতও। বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮৫ শতাংশ আসে এই খাত থেকে।
চলমান সংঘর্ষের মধ্যে ব্যবসা বাণিজ্যে স্থবিরতা নেমে আসলে গত সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর নেতারা। তারা অবিলম্বে ইন্টারনেট সংযোগ এবং গার্মেন্টসগুলো খুলে দেয়ার দাবি জানান।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২৪শে জুলাই ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট এবং ২৮শে জুলাই মোবাইল ইন্টারনেট সংযোগ চালু করা হয়। পরে ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু হয়।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সাবেক সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, “কোম্পানিগুলো তাদের উৎপাদন ইউনিট খোলা রাখলেও ইন্টারনেটের অভাবে ব্যবসা কার্যত থেমে ছিল। এছাড়া সরবরাহ ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। শিপমেন্ট জমে গেছে, কারণ সময়মতো পণ্য সরবরাহ করা সম্ভব হয়নি।”
ফলে কিছু কোম্পানির অর্ডার বাতিল হয়েছে। কিছু কোম্পানি আকাশ পথে পণ্য পাঠাতে বাধ্য হয়েছে।
তিনি বলেন, “যদিও এখন সংকট নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে মনে হচ্ছে, তারপরও রপ্তানিকারকদের ওপর এক মাসের বেশি সময় এর প্রভাব থাকবে। কারণ সময়মতো সরবরাহ করতে না পারা অর্ডার জমে আছে।”
রেঁস্তোরা খাতে যে অবস্থা
চলমান অস্থিরতা এবং কারফিউর কারণে রাজধানীর রেস্টুরেন্টগুলোকেও কঠিন সময় পার করতে হচ্ছে।
২৪শে জুলাই থেকে কারফিউ শিথিল করা হলে ঢাকার ২৫ হাজার রেস্টুরেন্ট আবার তাদের কার্যক্রম শুরু করে। কিন্তু এখনো পুরোপুরি জমে উঠেনি ব্যবসা।
মিরপুরের একটি রেস্টুরেন্টের কর্ণধার শামীম ইসলাম বিবিসি বাংলাকে বলেন, “আগের মতো এখনো মানুষ আসছে না, কারণ এই আন্দোলনে মিরপুর একটা হট স্পট ছিল। ধীরে ধীরে সবকিছুই স্বাভাবিক হয়েছে কিন্তু ওই যে আতঙ্কটা, কখন কী হয়, সেটা রয়ে গেছে।”
প্রধানমন্ত্রীর সাথে ব্যবসায়ী নেতাদের বৈঠকের পর ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি সব সংগঠনগুলোকে আর্থিক ক্ষতির বিবরণ চেয়ে চিঠি দিয়েছে।
বাংলাদেশ রেস্টুরেন্ট ওনার্স এসোসিয়েশনের সচিব মো. আখতারুজ্জামান বিবিসি বাংলাকে বলেন, “এফবিসিসিআই সব চেম্বার অব কমার্সসহ সংস্থাগুলোকে আর্থিক ক্ষতির হিসাব চেয়ে একটা চিঠি দিয়েছে। কত টাকার ক্ষতি, কী কী ধরনের ক্ষতি হয়েছে তার বিবরণ চাওয়া হয়েছে। ৪ঠা আগস্টের মধ্যে এ বিবরণ জানাতে হবে।”
চট্টগ্রাম বন্দরের আমদানি রপ্তানি
দেশের মোট আমদানি-রপ্তানির প্রায় ৯৫ শতাংশ হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। এ বন্দরের কার্যক্রম টানা পাঁচ দিন বন্ধ থাকায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে জানাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।
আমদানি কার্যক্রম ও পণ্য ডেলিভারি বন্ধ থাকায় এ খাতে পাঁচ দিনে ক্ষতি হয়েছে কয়েক হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে কেবল চট্টগ্রাম কাস্টমসই ৯০০ কোটি টাকা রাজস্ব বঞ্চিত হয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল বিবিসি বাংলাকে বলেন, “একটা দিন ডেলিভারি বন্ধ থাকলে এর প্রভাব পুরো বাংলাদেশের অর্থনীতির উপর পড়ে। পোর্টও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কারণ আমাদের রেভিনিউ আমরা পাই নাই।”
“আমাদের এখান থেকে যে পরিমাণ মালামাল ডেলিভারি হওয়ার কথা ছিল সেটা হয়নি। বন্দরে পড়ে রইল মালটা, ডেলিভারি করা গেল না, ফলে বর্তমানে তো ক্ষতি হলোই, ভবিষ্যতেও অর্ডারগুলোতে সমস্যা হতে পারে। ইমেজ, রেপুটেশন সবগুলো মিলেই ক্ষতি হলো। দেশের অর্থনীতিতে সার্বিকভাবে আঘাত ফেলবে এটি,” যোগ করেন মি. সোহায়েল।
অর্থনীতিবিদরা যা বলছেন
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, চলমান পরিস্থিতি অর্থনীতির সংকটকে আরো বাড়িয়ে তুলবে। কারণ উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ডলার সংকট ও রপ্তানি কমে যাওয়ার কারণে গত কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশ কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে। আর সাম্প্রতিক পরিস্থিতি সংকটকে আরো দীর্ঘায়িত করবে।
তারা বলছেন, যেহেতু অর্থনীতির চাকা অচল হয়ে পড়েছিল তাই উৎপাদন, আমদানি রপ্তানি থেকে শুরু করে অর্থনীতির সব সূচকেই একটা বিরূপ প্রভাব পড়েছে।
ইন্সটিটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক মুস্তফা কে মুজেরি বিবিসি বাংলাকে বলেন, “অর্থনীতির আগের সংকট থেকে উত্তরণে সরকারের যে প্রচেষ্টা ছিল এবারের ধাক্কা সেই প্রচেষ্টাকে আরো অনেকটাই দুর্বল করে দিয়েছে। এই বিরূপ প্রভাবটা আরো দীর্ঘায়িত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। মূল্যস্ফীতি, উৎপাদনসহ প্রতিটি ক্ষেত্রেই সমস্যা আরো প্রবল হওয়ার সম্ভাবনা।”
মানবসৃষ্ট এই সংকটের ব্যয় সাধারণ মানুষকেই বহন করতে হয়। বিশেষ করে নিম্নবিত্ত ও দরিদ্র জনগণ এই বিরূপ প্রভাবের সবচেয়ে বেশি শিকার হয়। কারণ তাদের দুর্যোগ মোকাবেলার ক্ষমতা অত্যন্ত সীমিত বলে মনে করেন মি. মুজেরি।
“এক্ষেত্রে জরুরিভাবে তাদের জীবনযাত্রাকে সচেষ্ট করার জন্য সরকারের বিভিন্ন সহায়তা কর্মসূচিগুলোকে আরো বেশি দীর্ঘায়িত না করা গেলে তাদের জীবনধারণ করা কঠিন হয়ে পড়বে। ফলে এদিকে বিশেষ নজর দিতে হবে,” বলছেন মি. মুজেরি।
কোটা সংস্কারের দাবিতে হওয়া আন্দোলন ঘিরে সৃষ্ট সংঘাতময় পরিস্থিতিতে আর্থিক এবং জানমালের ক্ষতির পরিমাণ এখনো নিরূপণ করা না হলেও এর পরিমাণ অনেক বেশি হবে বলে মনে করেন মি. মুজেরি।
রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে অনেকেই অর্থ-পাচারের চেষ্টা করবে। পাচার হলে ডলারের সরবরাহ কমে যাবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বিবিসি বাংলাকে বলেন, “ডলারের কারণে ব্যালেন্স অব পেমেন্টের ঘাটতি, ফান্ডিং ফর পেমেন্ট সার্ভিস যদি কমে যায় আরেকটা ধাক্কা আসতে পারে। ধাক্কাটা অলরেডি খেয়েছে। যদি এটা দীর্ঘায়িত হয় তাহলে আরো বড় ধাক্কা আসতে পারে।”
“দেশের ভাবমূর্তি প্রচণ্ডভাবে ব্যাহত হয়েছে। বিদেশিরা যারা ডিল করবে তারাও আশ্বস্ত হতে পারছে না। কাজেই এই অবস্থা চলতে থাকলে ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার হবে সেটার সম্ভাবনাও কম দেখছি। একটা ফান্ডামেন্টাল চেইন যদি সিস্টেমেটিক না হয় তাহলে এখান থেকে বেরিয়ে আসতে পারবো না,” যোগ করেন মি. মনসুর।
-BBC Bangla