দেশে আগামীকাল রবিবার থেকে প্রতিদিন ৩ ঘণ্টা করে ইন্টারনেট ও ক্যাবল টিভি (ডিশ) সংযোগ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে আইএসপিএবি ও কোয়াব। ঝুলন্ত ক্যাবল (তার) অপসারণের প্রতিবাদে তারা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা গেছে। এরইমধ্যে তারা বিভিন্ন এলাকার ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রাহকদের মুঠোফোনে এসএমএস ও ই-মেইলের মাধ্যমে জানিয়ে দিচ্ছে।
এদিকে, রাজধানীর বিভিন্ন স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবকরা আছেন উৎকণ্ঠায়। রাজধানীর এক গৃহিণী জানান, সমন্বয়হীনতার এই বেড়াজালে বলির পাঠা হচ্ছি আমরা। মেয়ের ক্লাস, পরীক্ষা সব হচ্ছে ইন্টারনেটে। এরজন্য ব্রডব্যান্ড সংযোগই ভরসা। মোবাইল ইন্টারনেট সহজলভ্য না আবার নেটওয়ার্কের গতিও স্থির থাকে না। আবার নাকি ডিস বন্ধ থাকবে। আমরা গ্রাহকেরা অর্থ খরচ করেও সেবা পাবো না। উল্টো ভোগান্তিতে পড়তে হবে।
দেশজুড়ে আরও বেশি আতঙ্কে আছেন ব্যবসায়ীরা। যত ছোট উদ্যোক্তা আতঙ্ক তত বেশি। কারণ তার পুঁজি হারানোর ভয় বেশি। ইন্টারনেট বন্ধ থাকলে করোনা মহামারীর এই সময়ে অনেকেই আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
কর্মসূচির ঘোষণায়ও অনড় অবস্থানে আছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি র্কপোরেশন (ডিএসসিসি)। আইএসপিএবি, কোয়াব ও এনটিটিএন অপারেটরদের সঙ্গে বৈঠক করে মাটির নিচ দিয়ে তার সম্প্রসারণ না হওয়া পর্যন্ত তার না কাটার এক প্রকার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি)। তবে তার অপসারণ এখনও অব্যাহত রেখেছে ডিএসসিসি।
অন্যদিকে, ঝুলন্ত ক্যাবল (তার) অপসারণের প্রতিবাদে আগামীকাল থেকে প্রতিদিন তিন ঘণ্টা ইন্টারনেট ও ক্যাবল টিভি (ডিশ) সংযোগ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তে অনড় আছে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি) ও ক্যাবল অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (কোয়াব)। মাটির নিচ দিয়ে তার সম্প্রসারণের সুযোগ না দিয়েই ঝুলন্ত তার কাটায় সংগঠন দুটির এই সিদ্ধান্ত বলে জানিয়েছে।
আইএসপিএবি’র সভাপতি এম এ হাকিম গণমাধ্যমকে বলেন, বিকল্প ব্যবস্থা না করেই সিটি কর্পোরেশন তার কেটে দিয়েছে। ফলে, এরিমধ্যে আইএসপিএবি এবং কোয়াবের আনুমানিক ২০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। ইন্টারনেট সংযোগ না থাকায় ৩৩টি টিভি চ্যানেলের সাংবাদিক, এক লাখের বেশি চাকরিজীবী এবং এক হাজার আইএসপিএবি ও কোয়াব সদস্য চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে আছেন।
তথ্যপ্রযুক্তি খাতের শীর্ষ সংগঠন বেসিসের পরিচালক দিদারুল আলম সানি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন বাস্তবায়নে যে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথে আমরা এগোচ্ছি, এমন সিদ্ধান্ত সেই পথে একটা বড় বাধা। তবে তাদের এমন ধর্মঘট ডাকার সিদ্ধান্তও যৌক্তিক। তার সম্প্রসারণের বিকল্প না করেই যদি তার কাটা হয় তাহলে তারাই বা কী করবে?
‘একটা সুপারশপের পজ (পয়েন্ট অব সেল) মেশিনও ইন্টারনেটে চলে। একদম তৃণমূল পর্যায়েও এর বিরূপ প্রভাব পড়বে। আমরা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে ইতোমধ্যে যোগাযোগ রাখছি যেন বিষয়টির একটা সুরাহা হয়।’
তিনি আরও বলেন, ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকলে আমাদের প্রচুর ক্ষতি হবে। আমরা সার্ভিস দিতে না পারলে বিদেশি গ্রাহকেরা আমাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারেন। এটা তো আর সাবমেরিন ক্যাবলের সমস্যা না যে পুরো পৃথিবীজুড়ে হচ্ছে। বিদেশি ব্যবসায়ীদের কাছে এই বার্তাই যাবে যে, এই দেশে সরকার আর ব্যবসায়ীদের মধ্যে সম্পর্কের টানাপড়েনে এমনটা হচ্ছে।
সূত্র:বাংলাদেশ প্রতিদিন