নড়াইল-২ আসন থেকে দুইবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন মাশরাফি বিন মুর্তজা, তবে তিনি ক্রিকেটার হিসেবেই বেশি পরিচিত এবং দেশের তরুণ প্রজন্মের কাছে অন্যতম আদর্শ। তা সত্ত্বেও, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় তার নীরব ভূমিকা ভক্ত-সমর্থকদের হতাশ করেছে। সরকারের পতনের পর দুর্বৃত্তরা নড়াইলে তার বাড়িতে হামলাও চালিয়েছে।
জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি সম্প্রতি একটি অনলাইন পোর্টালকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে স্বীকার করেছেন যে তিনি ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নিতে না পারায় আক্ষেপ বোধ করছেন। তিনি বলেন, “যদি সরাসরি বলি, তাহলে অবশ্যই আমি অনেক মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছি। কোটা সংস্কারের আন্দোলন অবশ্যই যৌক্তিক ছিল। আমার নিজের কাছেও মনে হচ্ছিল, এটা হয়ে যাবে। তবে সবাই যখন চাচ্ছিল যে আমি কিছু বলি বা স্ট্যাটাস দেই (ফেসবুকে)… তখন আসলে সবকিছু এত দ্রুত ঘটছিল… ভাবছিলাম, আমি যদি কিছু লিখি বা মন্তব্য করি, তার সম্ভাব্য পরিণতি কী হতে পারে… অনেক কিছু ভাবছিলাম। সব মিলিয়ে কিছু লেখা হয়নি।”
মাশরাফি আরও বলেন, “আমি কিছু করার চেষ্টা করিনি, তা নয়। আমি শুধু কিছু লেখার ভাবনায় থাকতে চাইনি। আমি চেয়েছিলাম ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলতে, আলোচনার মাধ্যমে কিছু করা যায় কি না। সেই শুরুর দিকেই চেষ্টা করেছি। কারণ তাদের দাবি আমার কাছে যৌক্তিক মনে হয়েছে। কিন্তু সেটাও করতে পারিনি। সব মিলিয়ে অবশ্যই ব্যর্থ হয়েছি।”
শেখ হাসিনার পতনের আগে থেকেই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা দেশ ছেড়ে পালাতে শুরু করেন। সরকারের পতনের পরেও অনেকে পালিয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে, যদিও মাশরাফি জানিয়েছেন যে তিনি ঢাকায় নিজ পরিবারের সঙ্গে আছেন। নিজের শারীরিক ও মানসিক অবস্থার বিষয়ে তিনি বলেন, “শারীরিকভাবে ঠিক আছি। মানসিকভাবে অবশ্যই ভালো অবস্থায় নেই। ঢাকাতেই আছি, পরিবারের সঙ্গে।”
মাশরাফি তার সম্পত্তি নিয়ে বলেন, “আমার যা কিছু আছে, সব খেলোয়াড়ি জীবনেই গড়া। পূর্বাচলে একটি জমি আছে, ২০০৫ সালে অস্ট্রেলিয়াকে হারানোর পর সরকার থেকে সবাই পেয়েছিলাম ৫ কাঠা করে। মিরপুরে একটা বাড়ি আছে, ২০০৮ সালে আইপিএল খেলে আসার পর করা। মিরপুরে আরেকটি বাড়ি করছি, যেখানে পরিবার নিয়ে উঠব, এটাও ২০১৫ সালে কাজ শুরু করেছি। এখনও উঠতে পারিনি, কাজ চলছে। ২০১৮ সালের পরের আয় দিয়ে তেমন কোনো সম্পদ গড়তে পারিনি। ২০১৮ সালের নির্বাচনের হলফনামা ও ২০২৪ সালের হলফনামা দেখলেই বুঝতে পারবেন।”
রাজনীতিতে আসার আগে তার অনেক এন্ডোর্সমেন্ট ছিল, মাশরাফি বলেন, “২০টির ওপরে প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ ছিলাম। খেলাধুলা ও স্পন্সরশিপের আয় থেকেই এসব করেছি। নড়াইলের বাড়িটা মায়ের জন্য করেছিলাম। এখন শেষ। অনেকেই বলেছেন মামলা করতে, ব্যবস্থা নিতে। ছবি-ভিডিও সবই আছে অনেকের কাছে। তবে আমি বলেছি, এসব করব না। আমার বাবাকেও বলে দিয়েছি। এখনকার সরকার বা ভবিষ্যতে নির্বাচন করেও যে সরকার আসুক, কারও কাছেই বিচাই চাইব না। কোনো অভিযোগ নেই। খুলনা-যশোর থেকে বা ঢাকা থেকে গিয়ে কেউ এই বাড়ি ভাঙেনি। নড়াইলের কোনো না কোনো জায়গা থেকে উঠে আসা মানুষই পুড়িয়েছে। নড়াইলের মানুষের বিরুদ্ধে বিচার আমি চাইব না। নিজের ভাগ্য মেনে নিয়েছি। হয়তো কোনো ভুল করেছি, সেটার ফল পেয়েছি। কষ্ট আছে, তবে রাগ-ক্ষোভ নেই কারও প্রতি। আমার প্রতি এখনও কারও ক্ষোভ থাকলে, আমি ক্ষমাপ্রার্থী।”
তিনি বলেন, “আমি জানতাম, ক্রিকেটার হিসেবে হয়তো আমার গ্রহণযোগ্যতা ছিল, কিন্তু রাজনীতিতে নামলে সেটা থাকবে না। কিন্তু ওই চ্যালেঞ্জটা আমি নিতে চেয়েছি। মানুষের জন্য বড় পরিসরে কিছু করতে চেয়েছি। এই জায়গায় নিজের কাছে পরিষ্কার ছিলাম। এখন যে সরকার এসেছে, আমরা যদি আমার জায়গা থেকে, আপনার জায়গা থেকে সমালোচনা করে নিচে নামাই, তাহলে তো এভাবেই যুগ যুগ ধরে চলতে থাকবে। তো, আমি যে জায়গায় ছিলাম, হয়তো রাজনীতিতে না এলেও পারতাম। ভালো ছিলাম। কিন্তু চ্যালেঞ্জটা নিয়েছি।”