কলেজছাত্রী মোসারাত জাহান মুনিয়ার মৃত্যুর ঘটনায় বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীরের গ্রেপ্তার এবং তার শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জোরালোভাবে তোলা হয়েছে। পাশাপাশি, বাদীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে উত্থাপন করা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানান মোসারাতের বড় বোন নুসরাত জাহান তানিয়া। তিনি অভিযোগ করেন যে সায়েম সোবহান আনভীর মোসারাতকে ধর্ষণের পর হত্যা করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে নুসরাত জাহান লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। এতে তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের কাছে মুনিয়া হত্যার ন্যায়বিচারের আহ্বান জানান।
বক্তব্য শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে নুসরাত জাহান আবেগপ্রবণ হয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। কয়েকজন সাংবাদিক মুনিয়ার বিলাসবহুল জীবনযাপন নিয়ে প্রশ্ন করলে নুসরাত বলেন, “আপনারা প্রশ্ন করতে পারেন, কিন্তু এই প্রশ্নগুলো আনভীরের প্রভাবের প্রতিফলন।”
নুসরাত আরও জানান, বসুন্ধরার মালিকানাধীন একটি গণমাধ্যমে কর্মরত একজন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকের মাধ্যমে মুনিয়ার সঙ্গে আনভীরের পরিচয় হয়। ওই সাংবাদিক মুনিয়াকে নিউজ টোয়েন্টিফোরে সংবাদ উপস্থাপনার প্রস্তাব দিয়েছিলেন, কিন্তু নুসরাত তখন বোনকে পরামর্শ দেন যেন এইচএসসি শেষ না করা পর্যন্ত সে এতে যুক্ত না হয়।
নুসরাত অভিযোগ করেন, কিছু সাংবাদিক কোনো প্রমাণ ছাড়াই তাদের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করেছেন। তিনি আরও দাবি করেন যে আনভীর তাকে আপসের প্রস্তাব হিসেবে ১০০ কোটি টাকা দিতে চেয়েছিলেন, যা তিনি প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি বলেন, “আমাকে মেরে ফেললেও আমি নীতি থেকে সরে আসবো না।”
বাবার মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় উল্লেখ করে নুসরাত কিছু সাংবাদিকের উদ্দেশ্যে বলেন, “আমার বোনের কিছু ভুল থাকতে পারে, কিন্তু আপনারা যে অন্যায় করেছেন, তা ক্ষমার অযোগ্য। আমি আদালতের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরছি, হুমকির মুখোমুখি হচ্ছি, তবুও আপনারা কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন না।”
তিনি আরও দাবি করেন, একটি জাতীয় দৈনিকের কুমিল্লা প্রতিনিধি তাকে ২০ কোটি টাকার বিনিময়ে মামলা তুলে নেওয়ার প্রস্তাব দেন।
একজন সাংবাদিক জানতে চান, মামলা খারিজ হওয়ার পর উচ্চ আদালতে যাওয়ার কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে কি না। এর উত্তরে নুসরাতের আইনজীবী জানান, তারা সেই আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যেই রয়েছেন।
২০২১ সালের এপ্রিলে গুলশানের একটি ফ্ল্যাট থেকে মোসারাত জাহানের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নুসরাত জাহান শুরু থেকেই দাবি করে আসছেন যে তার বোনকে হত্যা করা হয়েছে এবং এতে বসুন্ধরার এমডি সায়েম সোবহান আনভীর জড়িত।
মোসারাতের বাড়ি কুমিল্লা শহরে। তার বাবা ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুর রহমান। গুলশানের সেই ফ্ল্যাটে তিনি একাই থাকতেন।