জুলাই মাসে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ১৩০ কোটি ডলার কমে ২০.৪৯ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। জুন মাস শেষে যা ছিল ২১.৭৯ বিলিয়ন ডলার। একই সাথে নিট রিজার্ভ কমে ১৫.৪৭ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বিদেশি ঋণ পরিশোধ এবং রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রির কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, যা ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভকে আরও কমিয়ে দিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে বৃহস্পতিবার জুলাই মাসের রিজার্ভের এই তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। জুন মাসের পর এই তথ্য প্রকাশ করা হলো, যদিও এর আগে প্রতি সপ্তাহের রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করা হতো।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত জুলাই মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ১৯০ কোটি ডলার, যা আগের মাস জুনে ছিল ২৫৪ কোটি ডলার। অর্থাৎ, আগের মাসের তুলনায় রেমিট্যান্স কমেছে ৬৪ কোটি ডলার বা প্রায় ৩৪ শতাংশ। আগের বছরের একই মাসে রেমিট্যান্স ছিল ১৯৭ কোটি ডলার, সে হিসেবে কমেছে ৭ কোটি ডলার বা ৩.৫৫ শতাংশ।
মে পর্যন্ত রপ্তানি আয় কমেছে ৫.৯০ শতাংশ। এরকম পরিস্থিতিতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আবার কমে এসেছে।
আইএমএফসহ বিভিন্ন উৎস থেকে গত জুন মাসে বাংলাদেশ ২.০৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ পেয়েছিল। এতে করে বিপিএম৬ অনুযায়ী জুন শেষে নিট রিজার্ভ দাঁড়িয়েছিল ১৬.৭৭ বিলিয়ন ডলার। জুলাই মাসের শুরুর দিকে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নে (আকু) ১.৪২ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হয়।
বিলাস পণ্য আমদানিতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে এবং প্রয়োজনীয় পণ্য ছাড়া অন্য পণ্য আমদানিতেও ব্যাংকগুলোকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছিল। তবে ডলার সংকট মোকাবিলায় বিদায়ী অর্থবছরে বাংলাদেশ ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ১২.৬৯ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে, ফলে ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ কমে গেছে।
দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করে ২০২১ সালের আগস্টে। তবে করোনা পরবর্তী অর্থনীতিতে বাড়তি চাহিদা এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি, বিদেশি ঋণ ও বিনিয়োগ কমে যাওয়া এবং আগের দায় পরিশোধ বেড়েছে। গত ৩ অর্থবছরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ৩৩.৮৯ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে, ফলে ধারাবাহিকভাবে রিজার্ভ কমছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বিদেশি ঋণের সুদ এবং আসল পরিশোধের পরিমাণ অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে। গত অর্থবছরে বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধ ২০২২-২৩ অর্থবছরের চেয়ে ৪৪ শতাংশ বেড়ে ১৩৫ কোটি ডলার হয়েছে, যা আগের অর্থবছরে ছিল ৯৪ কোটি ডলার। একই সাথে, বিদেশি ঋণের আসল পরিশোধে ব্যয় ১৬ শতাংশ বেড়ে ২০১ কোটি ডলার হয়েছে, যা আগের অর্থবছরে ছিল ১৭৩ কোটি ডলার। অর্থাৎ, এক বছরের ব্যবধানে বিদেশি ঋণের আসল বেড়েছে ২৮ কোটি ডলার।