প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ ও তুরস্কের সম্পর্কের শিকড় অনেক গভীরে। তাই তুরস্কের সঙ্গে সম্পর্ককে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয় বাংলাদেশ। দু’দেশের জনগণের স্বার্থে এই সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। সোমবার বিকালে সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে আঙ্কারায় নবনির্মিত বাংলাদেশ চ্যান্সেরি (দূতাবাস) কমপ্লেক্সের ভার্চুয়ালি উদ্বোধনকালে তিনি এ কথা বলেন।
প্রায় ৫০ বছর আগে ১৯৭৪ সালে দু’দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যদিও তুর্কি সেনাপতি ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বখতিয়ার খিলজির ১৩ শতকে বাংলা জয়ের ফলে দু’দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও অনেক আগেই স্থাপিত হয়। ঐতিহাসিক এই সম্পর্ক উদ্যাপন অনুষ্ঠানে, আমি ২০১২ সালের ১৩ এপ্রিল তুরস্কের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও বর্তমান প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোগানের আমন্ত্রণে আঙ্কারা সফরের কথা উৎফুল্লচিত্তে স্মরণ করছি।’
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতির কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়-জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেয়া এই নীতিই আমাদের পররাষ্ট্র নীতির মূলনীতি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুধু সমৃদ্ধ বাংলাদেশের স্বপ্নই দেখেননি। তিনি ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও সংঘাতমুক্ত বিশ্বের স্বপ্নও দেখেছেন। মানবকল্যাণে বিশ্ব শান্তি ও নিরাপত্তার ওপর গুরুত্বারোপ করে গেছেন তিনি।
রোহিঙ্গা সংকটসহ বিভিন্ন ইস্যুতে বাংলাদেশের পাশে থাকার জন্য তুর্কি জনগণ ও দেশটির সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বিশাল সংখ্যক রোহিঙ্গা আগমনের প্রায় তিন বছর হতে চলেছে। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর এখন নিজ দেশে ফিরে যাওয়া উচিত। আমি মনে করি, তুরস্ক এই ইস্যুতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তুরস্কের ফার্স্ট লেডি এমিন এরদোগানের বাংলাদেশ সফরের কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার মনে আছে, রোহিঙ্গারা যখন বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিল তখন আমার আমন্ত্রণে তুরস্কের ফার্স্ট লেডি বাংলাদেশে এসেছিলেন। তিনি কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছিলেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি জেনে আনন্দিত যে, তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শিগগির বাংলাদেশ সফর করবেন। আমি তাকে স্বাগত জানাই। পাশাপাশি তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোগানকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানাই। আমি আনন্দিত হব যদি তিনি (এরদোগান) বাংলাদেশ সফর করেন। দয়া করে আমার শুভেচ্ছা ও আমন্ত্রণের বার্তা প্রেসিডেন্ট ও ফার্স্ট লেডির কাছে পৌঁছে দেবেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘রূপকল্প ২০২১ ও ২০৪১ অর্জনে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী আরও অনেকগুলো কূটনৈতিক অফিস স্থাপন করছে, আর এর মাধ্যমে বহির্বিশ্বের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ বাড়াচ্ছে। বাংলাদেশ যে তুরস্কের সঙ্গে বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক জোরদারে অগ্রাধিকার দিচ্ছে, তার প্রমাণ আঙ্কারায় এই স্থায়ী দূতাবাস কমপ্লেক্স। ঢাকায় সম্প্রতি নির্মিত তুর্কি দূতাবাসও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে তুরস্কের আগ্রহের প্রমাণ। আমি আশা করছি, চলমান মুজিববর্ষে প্রেসিডেন্ট এরদোগানের সদয় উপস্থিতিতে শিগগির ঢাকায় আনুষ্ঠানিকভাবে তুরস্কের দূতাবাস ভবনের উদ্বোধন করা হবে।’
তিনি বলেন, দূতাবাসের এই কমপ্লেক্সটির নির্মাণ সম্পন্ন করতে দুই বছরেরও কম সময় লেগেছে। কমপ্লেক্সে লাল রঙের ইট বাংলাদেশি স্থাপত্য ও ঐতিহ্যের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যকে তুলে ধরবে। এই ভবনটি অত্যন্ত গর্বের সঙ্গে বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি আবক্ষ ভাস্কর্য ও একটি শহীদ মিনার ধারণ করে আছে। এ ছাড়া কমপ্লেক্সে চমৎকার একটি মিলনায়তনসহ সব ধরনের সুবিধা রয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমি আঙ্কারায় এই নতুন দূতাবাস কমপ্লেক্সটি ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করতে পেরে অত্যন্ত আনন্দিত। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হওয়ায় আমি খুশি।’
উল্লেখ্য, আঙ্কারায় বাংলাদেশ দূতাবাসের নিজস্ব ভবন নির্মাণে বরাদ্দ ছিল ৪৫ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। তবে ভবনটি নির্মাণে ২ কোটি ২৬ লাখ টাকা কম ব্যয় হয়েছে। ওই টাকা বাংলাদেশ সরকারের কোষাগারে ফেরত দেয়া হয়েছে। দূতাবাস ভবন নির্মাণে তুর্কি কর্তৃপক্ষের সহযোগিতার প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে (আঙ্কারা প্রান্তে) অন্যদের মধ্যে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত চোভুসৌলো, তুরস্কে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম আল্লামা সিদ্দিকী প্রমুখ বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে চ্যান্সেরি কমপ্লেক্সের ওপর একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, প্রেস সচিব ইহসানুল করিম, আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ গণভবন প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন
সুত্র: যুগান্তর।