দখলদার ইহুদিবাদী ইসরাইলের সাথে সংযুক্ত আরব আমিরাতের সমঝোতা হওয়ার প্রায় এক মাস পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইসরাইলের সাথে বাহরাইনের সমঝোতার ঘোষণা দিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গত ১৩ আগস্ট ইসরাইলের সঙ্গে আমিরাতের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার খবর দিয়েছিলেন। ওই সমঝোতার পর ধারণা করা হচ্ছিল খুব অল্পসময়ের মধ্যে ইসরাইলের সঙ্গে বাহরাইনেরও সমঝোতা হয়ে যাবে।
তেলআবিব-আম্মানের মধ্যকার সমঝোতা কয়েকটি দিক থেকে তাৎপর্যপূর্ণ। প্রথমত, আরব লীগের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের মাত্র দু’দিন পর ইসরাইলের সঙ্গে বাহরাইনের সমঝোতার খবর প্রকাশিত হলো। গত ১৯ সেপ্টেম্বর আরব লীগের ওই বৈঠকে ইসরাইলের সঙ্গে আমিরাতের সমঝোতার কোনো নিন্দা জানানো হয়নি বরং এর প্রতি তারা পরোক্ষ সমর্থন জানিয়েছে।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, আমিরাতের পর এখন ইসরাইলের সঙ্গে বাহরাইনের এই সমঝোতা নিঃসন্দেহে আরব দেশগুলোর জাতীয় পরিচিতিকে দুর্বল করে দেবে।
আমিরাতের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন জায়েদ দাবি করেছিলেন, ইসরাইলের সঙ্গে তার দেশের সমঝোতার বিনিময়ে ইসরাইল জর্দান নদীর পশ্চিম তীরকে নিজ ভূখণ্ডের সঙ্গে একীভূত করার পরিকল্পনা থেকে সরে আসবে। যদিও ওই সমঝোতায় এ ধরনের পরিকল্পনার কোন কথাই সেখানে উল্লেখ নেই। এ থেকে বোঝা যায়, আমিরাতের যুবরাজের ওই দাবি সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং আমিরাতের মত বাহরাইনের সঙ্গেও শান্তি স্থাপনের বিনিময়ে ইসরাইল কোন ছাড় দেবে না।
ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, দীর্ঘ ২৬ বছর অপেক্ষার পর তৃতীয় দেশ হিসেবে আমিরাতের সঙ্গে তাদের সমঝোতা হয়েছে, এরপর চতুর্থ আরব দেশ হিসেবে বাহরাইনের সঙ্গেও তাদের সম্পর্ক স্থাপন হবে।
ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে, ইসরাইল-আমিরাত সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ঘোষণার মতো এবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বাহরাইনের সঙ্গে ইসরাইলের সম্পর্ক স্থাপনেরও ঘোষণা দিলেন। এ থেকে বোঝা যায়, আরব এ দেশগুলোর স্বাধীনতা বলতে কিছু নেই এবং পররাষ্ট্র ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণের কোনো স্বাধীনতা বা ক্ষমতা এদের নেই। বাহরাইনে রয়েছে আমেরিকার পঞ্চম নৌবহরের ঘাঁটি এবং এই দেশটির জন্য হুমকি সৃষ্টি হয় এমন যেকোনো পরিস্থিতি থেকে বাহরাইনের আলে খলিফা সরকারকে রক্ষার দায়িত্ব নিয়েছে ওয়াশিংটন।
ফিলিস্তিনের ইসলামী জেহাদ আন্দোলনের কর্মকর্তা দাউদ শাহাব এ ব্যাপারে বলেছেন, বাহরাইনের সঙ্গে ইসরাইলের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ থেকে বোঝা যায় বাহরাইন আমেরিকার আজ্ঞাবহ একটি দেশ। রাজতন্ত্র শাসিত আরব দেশগুলো এতটাই নিচে নেমে এসেছে যে মিশরের জাতীয় দলের সাবেক একজন খ্যাতনামা খেলোয়াড় মোহাম্মদ আবু তাকিয়ে ইসরাইল বাহরাইন সম্পর্ক স্থাপনের এক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার উদ্যোগ বিশ্বাসঘাতকতার শামিল এবং ফিলিস্তিনিরা হচ্ছে বীরের জাতি তারা কখনো অন্যায়ের কাছে মাথা নত করবে না।
চতুর্থ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে, ইসরাইলের সঙ্গে বাহরাইনের সমঝোতা থেকে প্রমাণিত হয় এ ধরনের সম্পর্কের মাধ্যমে আরব দেশগুলোর রাজা-বাদশারা তাদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে পারবে কিনা সে নিশ্চয়তা না থাকলেও এটা আসন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের বিজয়ের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে। অর্থাৎ এককভাবে লাভবান হবে ট্রাম্প ও দখলদার ইসরাইল।
আমেরিকায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আর মাত্র চার মাস বাকি রয়েছে। গত চার বছরের শাসনকালে পররাষ্ট্র ক্ষেত্রে ট্রাম্প প্রশাসনের কোন অর্জন নেই। এ অবস্থায় আমিরাত ও বাহরাইনের সঙ্গে ইসরাইলের সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে ট্রাম্প এটাকে পররাষ্ট্র ক্ষেত্রে তার বিরাট বিজয় হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করবেন।
পঞ্চম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে, আমিরাতের মত বাহরাইনের অর্থনীতি অতটা শক্তিশালী নয়। এছাড়া বাহরাইনে রয়েছে সরকারবিরোধী শক্তিশালী দল এবং ২০১১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে বাহরাইনে আলে খলিফা সরকারের বিরুদ্ধে জনগণের আন্দোলন চলে আসছে। অন্যদিকে, আমেরিকা ও সৌদি আরব আলে খলিফা সরকারের সমর্থনে কাজ করছে। সে কারণে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য বাহরাইনের সরকার ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করাসহ আমেরিকার যেকোনো দাবি মেনে নিতে তারা বাধ্য।
যাইহোক, পর্যবেক্ষকরা বলছেন বাহরাইনের আলে খলিফা সরকার ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে কৌশলগত অনেক বড় ভুল করল। এটা এমন এক ভুল যা সরকার পতনের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। পার্সটুডে