বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এ অনুদানের আবেদন জানান। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মো. মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, ‘নিজস্ব অর্থায়নে পরিচালিত সারাদেশে প্রায় ৪০ হাজার কিন্ডারগার্টেন স্কুল রয়েছে। এসব স্কুলে এক কোটিরও বেশি শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছে। এসব স্কুলগুলোতে শিক্ষক কর্মচারীর সংখ্যা রয়েছে প্রায় ছয় লাখ। বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের কারণে বন্ধ রয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। শিক্ষার্থীদের মাসিক বেতনের ওপর নির্ভর করেই শিক্ষকদের বেতন ও বাড়িভাড়া পরিশোধ করতে হয়। এ দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতিতে দুর্বিষহ কষ্টে পড়ে গেছেন কিন্ডারগার্টেন শিক্ষক ও কর্মচারীরা।’
মহাসচিব বলেন, ‘পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে প্রধানমন্ত্রী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন, তাতে কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোর শিক্ষক-কর্মচারীরা পরিবার-পরিজন নিয়ে করুণ অবস্থায় দিনাতিপাত করতে বাধ্য হবে। এছাড়াও বেসরকারি স্কুল শিক্ষকরা কখনো সরকারের কাছে বেতন ভাতার জন্য আবেদন করেনি। এ সকল স্কুলগুলো যদি না থাকতো তাহলে সরকারকে আরও ২৫ থেকে ৩০ হাজার বিদ্যালয় স্থাপন করে প্রতি মাসে শিক্ষক বেতন বাবদ কোটি কোটি টাকা ব্যয় করতে হতো। সেদিক থেকে বলা চলে আমরা সরকারের বিরাট রাজস্ব ব্যয় কমিয়ে দিয়েছি। বেসরকারি স্কুলের শিক্ষক ও কর্মচারীরা এই করোনার কারণে আজ ভয়ানক আর্থিক সংকটে পড়ে গেছেন। তাদের কথা ও তাদের প্রতিষ্ঠানের কথা সরকারের গুরুত্বের সঙ্গে ভাবা আজ একান্ত দরকার। বর্তমান প্রেক্ষাপটে কিন্ডারগার্টেন স্কুল ও স্কুলের শিক্ষকদের টিকিয়ে রাখার স্বার্থে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের সবিনয় আবেদন তিনি যেন আমাদের জন্য কমপক্ষে ৫০০ কোটি টাকার আর্থিক অনুদানের ব্যবস্থা করেন।’
এ সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘দেশের প্রাথমিক শিক্ষার প্রায় শতকরা ৩০ ভাগ চাহিদা এ স্কুলগুলো পূরণ করে থাকে। চল্লিশ হাজার স্কুলে এক কোটি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে। কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলো সময়ের চাহিদা অনুসারে শিক্ষার্থীদের জ্ঞান দান করে থাকে। কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন যারা অধ্যয়ন করে তাদের অধিকাংশই কিন্ডারগার্টেন বা প্রাইভেট স্কুলের শিক্ষার্থী। যদি কোনো কারণে শিক্ষা ব্যাহত হয় তাহলে প্রাথমিক শিক্ষাও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
এ অবস্থা চলতে থাকলে দেশের প্রায় ৮০% ভাগ বেসরকারি স্কুল বন্ধ হয়ে যাবার উপক্রম হবে এবং তাতে এক কোটি শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। স্কুল খোলার পরও যে শিক্ষার্থীদের স্কুলে আসার কথা, খরচ বহন করার অপারগতার জন্য তারা হয়ত স্কুলে আসবে না। কারণ যেসব শিক্ষার্থী কিন্ডারগার্টেনগুলোতে পড়াশোনা করে তাদের অধিকাংশ অভিভাবক নিম্ন মধ্যবিত্ত ও সাধারণ আয়ের লোক।
এ দুর্যোগের পরে তাদের অনেকে সংসার চালাতেই অক্ষম হয়ে পড়বে। শহরে বসবাসকারী অনেকে তাদের স্ত্রী ছেলে-মেয়েদের গ্রামে পাঠিয়ে দেবে। সেক্ষেত্রে কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলো আরও বেশি সংকটে পড়ে যাবে এবং অনেক পরিচালক তাদের স্কুল স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দিতে বাধ্য হবে। এ অবস্থায় আমাদের টিকে থাকার স্বার্থে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে আর্থিক অনুদান একান্ত প্রয়োজন।’
বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মিসেস মনোয়ারা ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল মাজেদ, যুগ্ম মহাসচিব মো. ফারুক হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ হামিদুর রহমান সহ কেন্দ্রীয় নেতারা।