লাদাখ ইস্যুতে টানা ১৪০ মিনিট (২ ঘণ্টা ২০ মিনিট) ধরে বৈঠক করেছে ভারত-চীন। সীমান্ত সংঘাত নিরসনের লক্ষ্যে রাশিয়ার মস্কোতে শুক্রবার চীনা প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওয়েই ফেংহে ও ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের মধ্যে দীর্ঘ এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
কয়েক মাস আগে হিমালয় অঞ্চলে ভারতীয় ও চীনা বাহিনীর মধ্যে ভয়াবহ সংঘাতের পর প্রথমবারের মতো দুই দেশের মন্ত্রীপর্যায়ের এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হল।
বৈঠকে সীমান্ত যুদ্ধাবস্থার জন্য একে অপরকে দায়ী করলেও উত্তেজনা হ্রাসে দুই পক্ষই আগ্রহ প্রকাশ করেছে। মূলত রাশিয়ার মধ্যস্থতায় দুই দেশের এই বৈঠক সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছেন কূটনীতিকরা।
এদিকে সীমান্ত সংকট মীমাংসায় নয়াদিল্লি-বেইজিংয়ের মধ্যে আবারও মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
লাদাখ সীমান্তে উত্তেজনার মধ্যেই সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের (এসসিও) সম্মেলন উপলক্ষে তিনদিনের সফরে রাশিয়া সফর করছেন রাজনাথ। সম্মেলনে হাজির চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রীও।
প্রথমে সম্মেলনের ফাঁকে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পার্শ্ববৈঠকের সম্ভাবনা খারিজ করে দেয় নয়াদিল্লি। তবে শুক্রবার রাতে চীনের পক্ষ থেকে আলোচনার ইচ্ছা প্রকাশ করা হয়।
কূটনৈতিক সূত্রের বরাত দিয়ে এনডিটিভি জানিয়েছে, এ ব্যাপারে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা নেয় মস্কো। কারণ কূটনীতিকদের মতে, এশিয়ার দুই শক্তিশালী দেশ সংঘাতে জড়িয়ে পড়ুক তা রাশিয়ার কাছে কোনোভাবেই কাম্য নয়।
গত মে মাসের গোড়ায় লাদাখের গালওয়ানে দুই দেশের সেনাদের মধ্যে প্রাণঘাতী সংঘর্ষের পরে এই প্রথম তাদের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের মধ্যে মুখোমুখি বৈঠক হল। মস্কোর আগ্রহে শেষ পর্যন্ত আলোচনায় রাজি হয় দিল্লি।
শুক্রবার ভারতীয় সময় রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ ওয়েই ফেংহের সঙ্গে রাজনাথের বৈঠকে প্রতিরক্ষা সচিব অজয় কুমার এবং রাশিয়ায় ভারতের রাষ্ট্রদূত ডি বি ভেঙ্কটেশ বর্মাও উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক হয় মস্কোর মেট্রোপোল হোটেলে। দু’ঘণ্টা কুড়ি মিনিট ধরে এই বৈঠক চলে বলে জানিয়েছে ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র। রাজনাথ সিংয়ের টুইটার হ্যান্ডেল থেকেও জানানো হয়, এই বৈঠক ১৪০ মিনিট ধরে চলেছে।
এর আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল পৃথকভাবে টেলিফোনে কথা বলেন চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই-র সঙ্গে। সেনাবাহিনী পর্যায়ের বৈঠক চলছে ধারাবাহিকভাবে। বৈঠকে রাজনাথ বলেছেন, বিশ্বাসের আবহ সৃষ্টি করা, আগ্রাসী মনোভাব পরিহার এবং আন্তর্জাতিক রীতি মেনে মতবিরোধ দূর করার ওপরেই গোটা এলাকার শান্তি এবং নিরাপত্তা নির্ভর করছে।
চীন দাবি করেছে, সীমান্ত উত্তেজনার সব দায় ভারতের। লাদাখে নিজেদের এক ইঞ্চিও জমি তারা ছাড়বে না বলেও হুশিয়ারি দিয়েছে বেইজিং। চীনের এই বিবৃতির পরে রাজনাথ সিং বলেন, সীমান্তে শান্তি বজায় রাখার জন্য আলোচনা চালিয়ে যেতে প্রস্তুত নয়াদিল্লি। তবে সেই সঙ্গে দেশের সীমান্ত রক্ষায় সেনা যথেষ্ট সমর্থ বলেও সতর্ক করেন তিনি।
শনিবার চীনের বিবৃতির পরেই রাজনাথ সিংয়ের দফতর থেকে একগুচ্ছ টুইট করে এ বক্তব্য দেয়া হয়। প্রথম টুইট করে জানানো হয়, ‘প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর সেনা সম্পূর্ণভাবে সরিয়ে নিয়ে শান্তি স্থাপন করার জন্য দুই দেশের উচিত কূটনৈতিকভাবে ও সেনা স্তরে নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা চালিয়ে যাওয়া।’
আরও একটি টুইটে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘প্রতিরক্ষামন্ত্রী আরও জানিয়েছেন, বর্তমান পরিস্থিতি দায়িত্ব নিয়ে সামলানো উচিত। সীমান্তে উত্তেজনা ছড়াতে পারে এমন কোনো পদক্ষেপ দু’দেশের কারোরই করা উচিত নয়।’ তিন নম্বর টুইটে জানানো হয়, ‘প্রতিরক্ষামন্ত্রী পরামর্শ দিয়েছেন, শান্তি প্রতিষ্ঠার এই কাজে ভারতের সঙ্গে চীনেরও যোগ দেয়া উচিত।
সুত্রঃ যুগান্তর।