বলিউড তারকা শাহরুখ খানের জন্মদিন আজ। জন্মদিনটা অন্তত একটা ক্ষেত্রে চিন্তাশূন্য কাটবে, তা বলাই যায়। রাজস্থান রয়্যালসকে রীতিমতো পর্যুদস্ত করেছে কলকাতা নাইট রাইডার্স। ফিরে এসেছে আইপিএলের প্লে-অফে ওঠার লড়াইয়ে বেশ ভালোভাবেই। বেন স্টোকস-জফরা আর্চার-স্টিভেন স্মিথদের রাজস্থানকে কলকাতা হারিয়েছে ৬০ রানের বড় ব্যবধানে।
এটা ছিল লিগ পর্বে কলকাতার শেষ ম্যাচ। প্রথম পর্ব শেষে কলকাতার পয়েন্ট এখন ১৪। আজ রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু ও দিল্লি ক্যাপিটালসের ম্যাচে জয়ী দল যদি বড় ব্যবধানে জেতে, প্লে-অফের রাস্তা খুলে যাবে শাহরুখের দলের সামনে। আবার মঙ্গলবারের ম্যাচে সানরাইজার্স হায়দরাবাদ যদি হেরেও যায়, তাহলে সরাসরি প্লে–অফে চলে যাবে কলকাতা। গত রাতে ম্যাচের আগেও পয়েন্ট তালিকার একদম তলানিতে থাকা কলকাতা তাই ম্যাচটা জিতে একটু দম নেওয়ার ফুরসত পাচ্ছে। আর সে ফুরসত নেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন দুজন মূলত—অধিনায়ক এউইন মরগান ও দলের মূল পেসার প্যাট কামিন্স।
প্যাট কামিন্সের কথাটা না বললেই নয়। আইপিএল ইতিহাসের সবচেয়ে দামি বিদেশি তারকা তিনি। অস্ট্রেলিয়ার এই পেসারকে দলে টানার জন্য সাড়ে ১৫ কোটি রুপি খসিয়েছিল কলকাতা। দলে কিউই পেসার লকি ফার্গুসন থাকা সত্ত্বেও আরেক বিদেশি পেস বোলারের পেছনে এত বেশি টাকা ঢালার অর্থ কী, অনেকেই বুঝতে পারেননি তখন। মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে ৩ ওভার বল করে ৪৯ রান দিয়ে নিজেই আকাশছোঁয়া পারিশ্রমিকের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ করে দিয়েছিলেন সমালোচকদের; যদিও ব্যাট হাতে ঝলসে উঠেছিলেন সেদিন। যশপ্রীত বুমরার মতো বোলারের এক ওভারে ২৬ রান নিয়েছেন, সব মিলিয়ে ১২ বলে ৩৩ রান করে দলের পরাজয়কে একটু সম্মানজনক করেছেন। দ্বিতীয় ও তৃতীয় ম্যাচে দলের জয়ে আঁটসাঁট বোলিং করলেও উইকেট পেয়েছিলেন মাত্র একটি করে। দিল্লির বিপক্ষে আবারও খরুচে কামিন্স। পরের ম্যাচে ব্যাট হাতে লোয়ার অর্ডারে কিছু গুরুত্বপূর্ণ রান করলেও মূল কাজ যেটা, সে বোলিংয়ে থেকেছেন উইকেটশূন্য। মাঝে পাঁচ ম্যাচ উইকেট নিতেই ভুলে গিয়েছিলেন। একেক ম্যাচ উইকেটশূন্য থাকতেন, আর ‘ফ্লপ’, ‘ফ্লপ’ রব উঠত চারপাশে। সে রব কী দুর্দান্তভাবে থামিয়ে দিলেন গত রাতে!
ম্যাচটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিল কলকাতার কাছে। হারলে প্লে-অফের আশা একেবারেই শেষ হয়ে যেত। ব্যবধানটা বড় না হলে জিতেও সমস্যাটা থেকেই যেত। বল হাতে রাজস্থানকে নাকাল করার জন্য তাই প্যাট কামিন্সের জ্বলে ওঠাটা বড্ড দরকার ছিল। দলের প্রয়োজনের সময়ে সাড়া দিয়েছেন কামিন্স। প্রথম ওভারে একটু বেশি রান দিলেও পরে রবিন উথাপ্পা, বেন স্টোকস, স্টিভেন স্মিথকে তুলে নিয়ে রাজস্থানের টপ অর্ডার একাই ধসিয়ে দিয়েছেন। পরে রিয়ান পরাগের উইকেটটা নিয়ে ৪ ওভার বল করে ৩৪ রান দিয়ে ৪ উইকেটে ম্যাচ শেষ করেছেন। হয়েছেন ম্যাচসেরা।
তবে কামিন্স যে ফর্মে ফিরছেন, সেটা বোঝা গিয়েছিল চেন্নাইয়ের বিপক্ষে ম্যাচেই। শেষে রবীন্দ্র জাদেজার ঝড়ে ম্যাচ হেরে না বসলে কামিন্সের ৪-০-৩১-২ বোলিং পরিসংখ্যানটা ভূমিকা রাখতে পারত দলের জয়ে। সব মিলিয়ে আইপিএলের প্রথম পর্ব শেষে কামিন্স ১৪ ম্যাচে উইকেট নিয়েছেন ১২টি, সর্বোচ্চ উইকেটশিকারির তালিকায় আছেন ১৫ নম্বরে। এই ফর্ম ধরে রাখলে তালিকায় উন্নতিটাও দেখা যাবে, সেটি বলাই যায়। তবে ইনিংসের শুরুর পাওয়ার প্লেতে বল করতে আসা কামিন্সের বলে রান নিতে ব্যাটসম্যানদের যে সমস্যা হয়, সেটা বোঝা গেছে তাঁর ডট বল দেওয়া দেখে। গোটা আসরে এ পর্যন্ত ১৪০টা ডট বল দিয়েছেন। তাঁর চেয়ে বেশি ডট বল দিয়েছেন শুধু রাজস্থানের আর্চার, মুম্বাইয়ের বুমরা ও হায়দরাবাদের রশিদ খান।
তবে অপ্রত্যাশিতভাবে এবার ব্যাট হাতেও ভালো করেছেন কামিন্স। দেখিয়েছেন, তাঁকে চাইলে অলরাউন্ডার বলা যেতেই পারে। যে সময়টায় উইকেট পাচ্ছিলেন না, তখন আবার ব্যাট হাতে পুষিয়ে দিয়েছেন টুকটাক। মুম্বাইয়ের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে বুমরাকে পিটিয়ে ছাতু বানানোর পর দ্বিতীয় ম্যাচে করেছেন ফিফটি। তাঁর ৩৬ বলে ৫৩ রানের ইনিংসটা দলকে একটা সম্মানজনক স্কোর এনে দেয়, যদিও শেষমেশ ম্যাচ হারে কলকাতা।