প্রাক বাজেট পর্যালোচনা সম্পর্কিত একটি ওয়েবেনার বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর-এর ঢাকাস্থ লিয়াজোঁ অফিসে জুন ০৪, ২০২০ খ্রি. তারিখে বেলা ০২:০০টা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানটি ড. ওয়াজেদ রিসার্চ এন্ড ট্রেনিং ইন্সটিটিউট, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর, এমিনেন্স এসোসিয়েট ফর সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট, বাংলাদেশ ও ডিজিটাল হেলথকেয়ার ফাউন্ডেশন কর্তৃক আয়োজন করা হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়-এর ম্যানেজমেন্ট বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক ও আহসানউল্লাহ ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি, ঢাকা-এর স্কুল অব বিজনেস-এর বর্তমান অধ্যাপক প্রফেসর ড. মোহাম্মদ মহিউদ্দিন মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন। তিনি বলেন, বাজেট হলো পরিকল্পনার সংখ্যাতাত্বিক প্রকাশ। যার মধ্য দিয়ে সরকার ও দলের স্বপ্ন, দর্শন, ও কল্যাণকর চিন্তার বহিঃপ্রকাশ ঘটে। তিনি বলেন ২০১৯-২০ অর্থ বছরের অর্জনগুলোর মধ্যে কতিপয় হলো-মাথাপিছু আয় ১৯০৯ মার্কিন ডলারে ( মার্চ, ২০২০) উন্নীত, দারিদ্র্য সীমা ৯.২%-এ নামা (২০১৯), বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়া, মূল্যস্ফীতির সন্তোজনকহারে ৫.৬০% ( মার্চ ২০২০) থাকা, জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৮.১৩ শতাংশ হওয়া, বেকারত্বের হার ৪.২৯% হওয়া এবং দারিদ্র্য বিমোচনে বিভিন্ন প্রকল্প চালু করার সাফল্যসহ নানান দিক তুলে ধরেন।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপক বলেন, করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি ও উন্নয়ন মহাসংকটজনক পরিস্থিতিতে সম্মুখীন হওয়ার পাশাপাশি অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে স্থবিরতা নেমে এসেছে। বিশেষ করে নি¤œ আয়ের মানুষেরা অস্বাভাবিক বিরূপ অবস্থায় পড়া, ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের পুঁজি হারনো, ও বিরাট সংখ্যক শ্রমিক চাকুরি হারানো যা ২২ লক্ষ হবে বলে অনুমান করা যাচ্ছে। এছাড়াও দেশের ৭৪% পরিবারের আয় কমা, নি¤œ মধ্যবিত্ত মানুষ দারিদ্র্য সীমায় নেমে গিয়ে প্রায় সাড়ে ৫ কোটি মানুষ চরম দরিদ্র হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। অন্যদিকে তৈরি পোশাক খাত পণ্যের অর্ডার হারানো এবং স্বাস্থ্য খাতের চরম অব্যবস্থাপনা, এবং অদক্ষতার চিত্র আমাদের সামনে প্রকাশ পাওয়ার পাশাপাশি চলমান স্বাস্থ্য ব্যবস্থা প্রতিনিয়তই উন্নয়ন বাজেট ও তাদের অন্যান্য কার্যকলাপ নিয়ে প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছে। কোভিড-১৯ মোকাবেলায় ইতোমধ্যে সরকার কর্তৃক পোশাক শিল্প ও কৃষি খাতসহ অন্যান্য জরুরী খাতের জন্য ১লক্ষ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা, নতুন করে ৫০ লক্ষ দরিদ্র পরিবারকে অর্থ সহায়তা দেয়া, আয় হারানো পরিবারকে ১০ টাকা কেজি দরে মাসে ৩০ কেজি চাউল বিক্রি কার্যক্রম শুরু করাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপকে ইতিবাচক বলে মন্তব্য করেন।
বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে আসন্ন বাজেটে নি¤েœাক্ত বিষয়গুলো অগ্রাধিকার দেয়ার জন্য তিনি বলেন- আয় বৈষম্য কমিয়ে সুষম বণ্টন ব্যবস্থা নিশ্চিত করে দারিদ্র্য শুন্য করার পথে এগিয়ে যাওয়া, সাধারণ মানুষের হাতে অর্থ যাতে যেতে পারে তার ব্যবস্থা করা, পুঁজি হারানো ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের স্বল্প বা বিনা সুদে জামানত ছাড়া ঋণ দেয়া, বন্ধ হয়ে যাওয়া ১,১২৬টি কারখানা চালু করার জন্য প্রণোদনা দেয়া, প্রবাস ফেরত ১৪ লক্ষ-এর মতে প্রবাসী শ্রমিকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা, স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় উন্নয়ন ব্যয় বাড়ানো, কৃষি খাতের যান্ত্রিকীকরণ, জমির ব্যবহার ও আওতা বাড়ানো ইত্যাদি বিষয়ে বাজেটে প্রতিফলন হলে বর্তমান সংকট কাটিয়ে উঠা সম্ভব হবে।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ-এর মাননীয় সংসদ সদস্য (চাঁদপুর-১) জনাব ড. মহিউদ্দীন খান আলমগীর বলেন, বর্তমান বাজেটে যে বিষয়গুলো মনোযোগ দিতে হবে, তার মধ্যে সামাজিক নিরাপত্তায় বরাদ্দ বাড়ানোর পাশাপাশি কৃষি খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে।
ওয়েবেনারে বক্তারা বাংলাদেশে অতিতের বাজেটের বিভিন্ন দিক নিয়ে পর্যালোচনা করে আগামী বাজেটে করণীয় সম্পর্কে বক্তব্য তুলে ধরেন। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়-এর সাবেক সিনিয়র সচিব মুহম্মদ হুমায়ন কবির হেলথ ফাইনেন্স-এর বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের প্রফেসর ড. শুচিতা শরমিন নারীর ক্ষমতায়ন ও ডিজিটাল হেলথকেয়ার ফাউন্ডেশন-এর চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আব্দুল হামিদ, (এল পি আর) ডিজিটাল হেলথকেয়ারের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা সম্পর্কে মতামত তুলে ধরেন।
রিসার্চ ইন্টারন্যাশনাল-এর সিইও প্রফেসর ড. আবুল হাসনাত মিল্টন হেলথ গভার্নেন্স-এর চ্যালেঞ্জসমূহ নিয়ে ও যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানা ইউনিভার্সিটি আর্নেট হসপিটাল-এর ক্লিনিক্যাল এসোসিয়েট প্রফেসর তাসবিরুল ইসলাম, এমডি, ক্লিনিক্যাল ম্যানেজম্যান্ট এন্ড মনিটরিং-এর বর্তমান প্রেক্ষাপটে সম্ভাবনা ও করণীয় সম্পর্কে বক্তব্য তুলে ধরেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়-এর সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সাবের আহমেদ চৌধুরী শিক্ষা খাতে সরকারের বাজেট বরাদ্ধ নিয়ে কথা বলেন। এমিনেন্স এসোসিয়েট ফর সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট, বাংলাদেশ-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ শামীম তালুকদার পুষ্টি সম্পর্কে , বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)-এর মধুসূধন মন্ডল মিডিয়া ও মিডিয়াকর্মীর স্বাস্থ্য সুরক্ষা সম্পর্কে, এবং দৈনিক দ্য নিউ ন্যাশন পত্রিকার সহকারী সম্পাদক এ আর. ফররুখ আহমাদ মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন।
এফবিসিসিআই-এর সাবেক সভাপতি ও দশদিশা গ্রæপ-এর চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আমিন হেলালী ব্যবসায়ের গতি প্রকৃতি সম্পর্কে , এবং ওয়েস্টার্ন সিডনী ইউনিভার্সিটি, অস্ট্রেলিয়ার হিউমেনিটারিয়ান এন্ড ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ (এইচএডিআরআই)-এর সদস্য জনাব আহমেদ খান মানবাধিকার ও জনশক্তির ক্ষমতায়ন নিয়ে তাদের অভিমত প্রকাশ করেন।
ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার এন্ড টেকনোলজি, কলেজ অব বিজনেস এডমেনিস্ট্রেশন-এর সহকারী অধ্যাপক দেওয়ান মুহাম্মদ নূর -এ ইয়াজদানি প্রাইভেট সেক্টরে ইনভেস্টম্যান্ট সম্পর্কে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পালি এন্ড বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ বিভাগের খÐকালীন শিক্ষক রোমানা পাপড়ি মা ও শিশু নিয়ে বক্তব্য প্রদান করেন।
এছাড়াও ফেসবুকে লাইভ, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় সংযুক্ত থেকে শ্রোতা ও দর্শকগণ উপর্যুক্ত বক্তাদের নিকট বিভিন্ন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেন। ওয়েবেনার-এর মডারেটর হিসেবে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার এন্ড টেকনোলজি, কলেজ অব বিজনেস এডমেনিস্ট্রেশন-এর এসোসিয়েট প্রফেসর ডক্টর তানভীর আবির উপস্থাপনা করেন। তিনি অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ও সভাপতি, সম্মানিত আলোচকবৃন্দ, দর্শক ও শ্রোতা, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া ব্যক্তিদের, এবং অনুষ্ঠানের সার্বিক সহযোগিতায় যারা জড়িত ছিলেন তাদের ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা জানান।
প্রাক বাজেট পর্যালোচনা: কোভিড-১৯ সমন্বিত সামাজিক উন্নয়নমূলক ভাবনা ও প্রত্যাশা সম্পর্কিত অনুষ্ঠানের সভাপতি হিসেবে ড. ওয়াজেদ রিসার্চ এন্ড ট্রেনিং ইন্সটিটিউট, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর-এর পরিচালক ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর-এর উপাচার্য প্রফেসর ডক্টর মেজর নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ, বিএনসিসিও উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের বলেন, ওয়েবেনারে অংশগ্রহণকারী সকল আলোচক বৃন্দকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়গুলো উঠে এসেছে তা পলিসি মেকারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে পদক্ষেপ গ্রহনে সহায়ক হবে বলে আশাবাদ ব্যাক্ত করেন। অনুষ্ঠান সফলভাবে সম্পন্ন করতে কারিগরি সহায়তা প্রদান কারী সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।
ওয়েবেনারের এসোসিয়েট মডারেটর ও রেপোটিয়ার হিসেবে ড. ওয়াজেদ রিসার্চ এন্ড ট্রেনিং ইন্সটিটিউট, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর-এর এম ফিল রিসার্চ ফেলো মোঃ হাবিবুর রহমান ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর (উপাচার্য দপ্তর)-এর সেকশন অফিসার, (গ্রেড-১) সাকিনা আক্তার সীমা রেপোটিয়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
দৈনিক যুগান্তর, দ্য ডেইলি নিউ ন্যাশন, দ্য ডেইলি সান, দ্য এশিয়ান এজ, এবং যমুনা টিভি মিডিয়া পার্টনার হিসেবে সংযুক্ত ছিলো।