সোমবার, ডিসেম্বর ৯, ২০২৪

সড়ক দুর্ঘটনার তথ্য প্রকাশে বেসরকারি সংস্থাগুলোর উপর কড়াকড়ি

পাঠক প্রিয়

সড়ক দুর্ঘটনা ও হতাহতের তথ্য প্রকাশের আগে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানোর জন্য চারটি বেসরকারি সংস্থাকে সম্প্রতি চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশের সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ বা বিআরটিএ।

নিরাপদ সড়ক চাই, বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি, রোড সেফটি ফাউন্ডেশন এবং সেভ দ্য রোড- এই চারটি বেসরকারি সংস্থা সড়ক দুর্ঘটনা ও হতাহতের বার্ষিক ও মাসিক তথ্য প্রকাশ করে আসছে।

বিআরটিএ বলছে, এসব পরিসংখ্যানে দুর্ঘটনা ও হতাহতের সংখ্যা বাড়িয়ে প্রকাশ করে ‘জনমনে বিভ্রান্তি’ সৃষ্টি করা হচ্ছে।

উল্টোদিকে বেশিরভাগ বেসরকারি সংস্থার দাবি সরকার সড়ককে নিরাপদ দেখাতে তাদের পরিসংখ্যানকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।

চিঠিতে কী বলা হয়েছে?

গত ১১ই মার্চ ইস্যুকৃত ওই চিঠিতে মূলত দুটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানের গড়মিল তুলে ধরা হয়।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, চলতি বছরের মার্চে ৪৮৬টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৫৬৪ জন নিহত এবং ১০৯৭ জন আহত হয়েছেন। পক্ষান্তরে যাত্রী কল্যাণ সমিতির পরিসংখ্যানে একই সময়ে ৪৮৭টি সড়ক দুর্ঘটনা, ৫৩৮ জন নিহত এবং ১১৩৮ জন আহত হয়েছেন।

বিআরটিএ বলছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের প্রকাশিত সড়ক দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। বিআরটিএর দাবি হচ্ছে, ওই সময়ের মধ্যে ৩২২টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৬০জন নিহত এবং ১০২৮ জন আহত হয়েছেন।

অর্থাৎ বিআরটিএ এবং রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পরিসংখ্যানে বড় ধরণের পার্থক্য দেখা যাচ্ছে। বিআরটিএর পরিসংখ্যানে নিহতের সংখ্যা রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তুলনায় ১০৪ জন কম।

বিটিআরসি ওই চিঠিতে উল্লেখ করেছে ‘প্রকৃত তথ্যের’ চেয়ে বেশি হারে দুর্ঘটনা ও হতাহতের সংখ্যা দেখানো হয়েছে। সরেজমিনে শতভাগ যাচাই করা হলে এ সংখ্যা আরও কমবে বলে বিআরটিএ’র পক্ষ থেকে জানানো হয়।

বিআরটিএ বলছে, এসব বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো একেক রকম পরিসংখ্যান প্রকাশ করায় ‘জনমনে বিভ্রান্তি’ তৈরি হচ্ছে।

নতুন করে এই চিঠি দেয়ার মাধ্যমে সড়ক দুর্ঘটনার সঠিক চিত্র তুলে ধরতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী। বিআরটিএ এর আগেও তাদের একাধিক প্রতিবেদন যাচাই বাছাই করেছে বলে জানা গিয়েছে।

তিনি বলেন, “একটি বিশ্বাসযোগ্য পরিসংখ্যান দেয়ার দায়িত্ব সরকারের। বিআরটিএ’র নিজস্ব জনবল আছে, ৬৪ জেলায় তাদের নেটওয়ার্ক আছে। তারা চাইলেই বিশ্বাসযোগ্য পরিসংখ্যান দিতে পারতো। তাদের ব্যর্থতার কারণে আমরা এই দায়িত্ব নিয়েছি। কিন্তু সরকার একে সাধুবাদ না জানিয়ে বার বার আমাদের বাধা দিচ্ছে।”

সরকারি বেসরকারি পরিসংখ্যানে ফারাক

বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর পরিসংখ্যান যাচাই করে দুর্ঘটনা ও হতাহতের সংখ্যায় অমিল পাওয়া গিয়েছে।

বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনার তথ্য-উপাত্ত সরকারিভাবে পুলিশ সংগ্রহ করে। বিআরটিএ সেই পরিসংখ্যান ব্যবহার করে এতোদিন তাদের কর্ম পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছিল। কিন্তু জানুয়ারির পর থেকে তারা নিজেরা তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু করেছে বলে সংস্থাটি জানায়।

তবে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে পুলিশ যে তথ্য দেয় তা ‘অসম্পূর্ণ’ বলে দাবি করেছে দুর্ঘটনা বিষয়ক বিশেষজ্ঞ এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো।

কারণ যেসব সড়ক দুর্ঘটনার মামলা দায়ের হয় পুলিশের কাছে শুধু সেগুলোর তথ্য থাকে।

কিন্তু বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর দাবি, বাস্তবে বাংলাদেশের ৭০% সড়ক দুর্ঘটনায় কোন মামলাই হয় না। ফলে সরকারি পরিসংখ্যানে বিশাল সংখ্যক দুর্ঘটনার তথ্য বাদ পড়ে যায়।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ” বাংলাদেশে বছরে যতো সড়ক দুর্ঘটনা হয় তার ৭০% ঘটনার কোন মামলা হয় না। মামলা দায়ের হওয়া সেই ৩০% ডাটার ওপর ভিত্তি করে পুলিশ রিপোর্ট তৈরি করে। যা অসম্পূর্ণ, অপর্যাপ্ত।”

বেসরকারি সংগঠনগুলো মূলত পত্র-পত্রিকা ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রকাশিত খবর স্ক্যান করে তাদের পরিসংখ্যান তৈরি করে। এগুলো হল তথ্য সংগ্রহের সেকেন্ডারি উৎস।

প্রাইমারি উৎস হচ্ছে,পুলিশ, হাসপাতাল, জেলা/ উপজেলা প্রশাসন, স্বাস্থ্য অধিদফতর ইত্যাদি।

শুধুমাত্র সেকেন্ডারি উৎসের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা এসব পরিসংখ্যানে সঠিক তথ্য পাওয়া যায় না বলে দাবি বিআরটিএ’র।

বিআরটি’র পরিচালক (সড়ক নিরাপত্তা) শেখ মোঃ মাহবুব-ই-রব্বানী বিবিসি বাংলাকে বলেন বেসরকারি সংস্থাগুলো শুধু পত্রিকার খবরের উপর নীর্ভর করে প্রতিবেদন তৈরি করে।

“সেটা তো সরেজমিনে যাচাই করে না। এজন্য বস্তুনিষ্ঠতা থাকে না। তাই এসব তথ্য যাচাই হওয়া প্রয়োজন,” বলেন মি. রব্বানি।

তথ্যে গড়মিলের কারণ হিসেবে মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলছেন, রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের সাথে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্যের ব্যবধান খুব বেশি নয়।

“ঊনিশ-বিশ ফারাক রয়েছে। খুব বেশি না। এটাই স্বাভাবিক, কারণ কেউ ১০টা পত্রিকা দেখে রিপোর্ট করে, কেউ ১০০টা পত্রিকা স্ক্যান করে,” বলেন মি. চৌধুরী।

সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা নিয়ে সরকারি দফতরগুলোর সঙ্গে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে তথ্যে গড়মিল নতুন কিছু নয়। প্রতিবছরই দেখা যায়, এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব লেগেই থাকে।

আবার সরকারি দুটি সংস্থা অর্থাৎ পুলিশ ও বিআরটিএ’র দেয়া তথ্যেও রয়েছে গড়মিল।বিআরটিএ’র তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশে ৬৩০টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৬৩৬ জন নিহত ও ৭৫২ জন আহত হয়েছেন।

অথচ পুলিশের তথ্যমতে, ওই সময়ের মধ্যে ৫৫৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৫৪২ জন নিহত এবং ৪২০ জন আহত হয়েছেন।

তথ্য কম-বেশি দেখানোর পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা এবং এতে মানুষের হতাহতের বিষয়টি যেন নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতি বছর দুটি ঈদের মতো বড় উৎসবে সড়ক দুর্ঘটনা ও হতাহতের সংখ্যা যেন আরও বেড়ে যায়।

বেসরকারি সংস্থাগুলোর অভিযোগ, সরকার তাদের কর্মপরিকল্পনার লক্ষ্য অর্জনে ইচ্ছাকৃতভাবে দুর্ঘটনা ও হতাহতের কমিয়ে দেখাতে চাইছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, “সড়ক দুর্ঘটনার প্রকৃত চিত্র উপস্থাপন হলেই এর ভয়াবহতা দূর করা যাবে। এর মাধ্যমে সঠিক দিক নির্দেশনা ও সঠিক কর্ম পরিকল্পনা ঠিক করা যাবে। কিন্তু সরকার গত কয়েক বছর যাবত তথ্য কমিয়ে দেখানোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। ”

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর এমন দাবি নিয়ে প্রবল আপত্তি তুলেছেন বিআরটিএ’র পরিচালক শেখ মোঃ মাহবুব-ই-রব্বানী।

তার দাবি, বেসরকারি সংগঠনগুলো মনগড়া তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরেছে। তারা দুর্ঘটনা ও হতাহতের সংখ্যা বাড়িয়ে প্রকাশ করছে।

বিআরটিএ’র এখতিয়ার আছে?

বেসরকারি সংস্থাগুলোর পরিসংখ্যান যাচাই বাছাই করার বিষয়ে বিআরটিএ যে চিঠি দিয়েছে সেটির এখতিয়ার সংস্থাটির আছে কিনা সেটা প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে বা বুয়েটের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইন্সটিটিউট-এর শিক্ষক কাজী মোহাম্মদ সাইফূন নেওয়াজ বিবিসি বাংলাকে বলেন, কেউ যদি স্বাধীনভাবে কোন পরিসংখ্যান তৈরি করে সেখানে বাধা দেয়ার এখতিয়ার কারও থাকার কথা নয়।

বিআরটিএ যদি মনে করে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বাড়িয়ে তথ্য দিচ্ছে। তাহলে কোন কোন তথ্যগুলো বাড়িয়ে দেখানো হয়েছে, কোনগুলো ভিত্তিহীন সেটা তারা তথ্য প্রমাণসহ প্রকাশ করতে পারে। এতে তাদের পরিসংখ্যানের প্রতিও আস্থা বাড়বে।” বলেন মি. নেওয়াজ।

তিনি বলেন বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে তথ্য সংগ্রহের কোন সিস্টেম দাঁড় করানো সম্ভব হয়নি। এজন্য সরকারি এবং বেসরকারি তথ্যের মধ্যে ফারাক থাকে এবং বিতর্ক তৈরি হয়।

এক্ষেত্রে দেশের যে কোন প্রান্তে ছোট-বড় সব সড়ক দুর্ঘটনা যেন লিপিবদ্ধ হয় সেই ব্যবস্থা বা ডাটাবেস গড়ে তোলার ওপর জোর দেন তিনি।

তার মতে, সব তথ্য একটি বিশ্বাসযোগ্য সূত্র থেকে আসতে হবে। তাহলে এ ধরণের বিভ্রান্তি কমে যাবে।

— বিবিসি বাংলা।

 

সর্বশেষ সংবাদ

এসটিএস গ্রুপের জন্য কো-ব্র্যান্ডেড লংকাবাংলা ক্রেডিট কার্ড

লংকাবাংলা ফাইন্যান্সপি এলসি, এসটিএস ক্যাপিটাল লিমিটেড (এসটিএসগ্রুপ) ও মাস্টারকার্ডের সহযোগিতায় সম্প্রতি একটি কো-ব্র্যান্ডেড টাইটেনিয়াম ক্রেডিট কার্ড চালু করা হয়েছে।...

বৈষম্য নিরসনে অর্থব্যবস্থার ৮ দফা সংস্কার প্রস্তাবনা

অর্থনৈতিক বৈষম্য নিরসনে সংস্কার কমিশন গঠন, সংবিধানে সামাজিক মালিকানার স্বীকৃতি ও অর্থব্যবস্থার ৮ দফা সংস্কার প্রস্তাবনা নিয়ে সংবাদ সম্মেলন ও আলোচনা সভা করেছে ফোরাম...

শেখ হাসিনা পালায় না !!!

জনরোষের মুখে শুধু পরিবারের সদস্যদের নিয়ে শেখ হাসিনার দেশ ছাড়ার ঘটনা মানতে পারছেন না আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা ও মন্ত্রীরা। তারা বলছেন, তিনি...

গুমবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদে স্বাক্ষর করল বাংলাদেশ

গুমবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদে স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ। বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের সাপ্তাহিক বৈঠকে অর্ন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস উপদেষ্টাদের করতালির মধ্যে এই সনদে...

বালা মুসিবত আমাদের হাতের কামাই: পীর ছাহেব ছারছীনা

পৃথিবীর সকল বালা মুসিবত আমাদের হাতের কামাই। মানুষ ধীরে ধীরে ইসলাম থেকে দূরে সরে যাওয়ায় আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাদের প্রকৃতিক দুর্যোগ দিয়ে সতর্ক করে...

জনপ্রিয় সংবাদ

সিভি এবং চাকুরী আবেদনের কিছু প্রয়োজনীয় টিপস

মানবসম্পদ বিভাগে কাজ করার বদৌলতে প্রতিনিয়ত নিত্য নতুন অভিজ্ঞতার সম্মুখে পরতে হয়। যার অধিকাংশই আসে সিভিকে কেন্দ্র করে। আমি সিরিজ আকারে সিভি এবং ক্যারিয়ার...

মিথ্যা সংবাদের প্রতিবাদ জানিয়েছে তুরাগ থানা ছাত্রলীগ

তুরাগ থানা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক মোঃ আরিফ হাসান জানায়, গত ১১-০৮-২০২০ তারিখে ’আমার প্রাণের বাংলাদেশ’ নামক পত্রিকার অনলাইন সংস্করণে ‘রাজধানীর উত্তরা যুবলীগ নেতা নাজমুল হাসান...

 ফিনান্সিয়াল অ্যাসোসিয়েট পদে নিয়োগ জোরদার করলো মেটলাইফ বাংলাদেশ

ফিনান্সিয়াল অ্যাসোসিয়েট হিসেবে যোগদানে আগ্রহী প্রার্থীদের জন্য ডিজিটাল নিয়োগ প্ল্যাটফর্ম উন্মোচন করেছে মেটলাইফ বাংলাদেশে। অনন্য এই ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম আগ্রহী প্রার্থীদেরকে বাসা থেকেই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে...

২৩ কোটি বছরের পুরনো হিরকখণ্ড উদ্ধার!

দেখতে কি সুন্দর হিরকখণ্ডটি । শুক্রবার রাশিয়ার অ্যানাবার নদীর ধারে আলরোসার এবেলিয়াখ খনি থেকে উদ্ধার হয় এই হিরক খণ্ডটি। এখনও স্থির হয়নি হিরকখণ্ডটি পালিশ...
Verified by MonsterInsights