যতই শক্তিশালী হোক, শেয়ারবাজারে কারসাজি করে আর পার পাওয়া যাবে না। এখান থেকে টাকা নিয়ে পালানোর দিন শেষ। এক্ষেত্রে যারা আগে, বিভিন্নভাবে অনিয়মে যুক্ত ছিলেন, তাদের চিহ্নিত করে, ব্যবস্থা নেয়া হবে।
শেয়ারবাজার বিষয়ক এক ভার্চুয়াল সেমিনারে শনিবার পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ) এবং ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরাম (সিএমজেএফ) যৌথভাবে এই সেমিনারের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চেয়ারম্যান ও সাবেক সচিব মো. ইউনুসুর রহমান, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহীম, ডিএসই ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) প্রেসিডেন্ট শরীফ আনোয়ার হোসেইন, এসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিজ অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ড. হাসান ইমাম। আরও ছিলেন- বিএমবিএ সভাপতি মো. ছায়েদুর রহমান এবং সিএমজেএফ সভাপতি হাসান ইমাম রুবেল। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএমবিএ’র প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. মনিরুজ্জামান।
অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, পুঁজিবাজারের ব্যবসা সহজ করার জন্য যে ধরনের পদক্ষেপ নেয়া দরকার বিএসইসির পক্ষ থেকে সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করে, সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হবে।
তিনি বলেন, পুঁজিবাজার থেকে অনিয়ম এবং বিভিন্ন কারসাজি দূর করতে ডিএসইর তথ্য-প্রযুক্তি বিভাগে সংস্কার জরুরি। ডিএসইর ওয়েবসাইট নিয়ে যে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছিল তার জন্য গঠিত তদন্ত কমিটি রিপোর্ট চূড়ান্ত করেছে। শিগগিরই তারা আমাদের কাছে এই রিপোর্ট জমা দেবেন। রিপোর্ট অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা নিতে বলব।
বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, শেয়ারবাজারে সুশাসন নিশ্চিত করতে বেশ কিছু উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে বিএসইসি। এককভাবে ২ শতাংশ ও সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার নেই এমন কোম্পানির ব্যাপারে কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হতে পারে। অনেক বোর্ড ভেঙেও দেয়া হতে পারে। পাশাপাশি স্বতন্ত্র পরিচালকদের কার্যক্রম কঠোরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে। এ ছাড়া সম্প্রতি ‘জেড’ ক্যাটাগরির কোম্পানিগুলো কিছু উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বাজারকে আরও বড় করতে হবে, যাতে তিন থেকে পাঁচ হাজার কোটি টাকা দৈনিক লেনদেন হয়।
তিনি বলেন, পুঁজিবাজারে শতভাগ সুশাসন নিশ্চিত করতে না পারলে, মানুষ এখানে বিনিয়োগের ঝুঁকি নেবে না। পুঁজির নিরাপত্তা দিতে না পারলে, তারা কষ্টার্জিত অর্থ শেয়ারবাজারে নিয়ে আসবে?- প্রশ্ন রাখেন তিনি। বলেন, এ কারণে সবার আগে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনা জরুরি।
বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, মানুষের কাছ থেকে টাকা নেয়ার পর কিছু কোম্পানি ঠিকমতো কাজ করছে না। হঠাৎ কোম্পানি করে বন্ধ করে চলে যাচ্ছে। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মানুষকে ঠকানোর চেষ্টা করেছেন, সেসব কোম্পানিতে সম্ভবত আমাদের বোর্ডও ভেঙে দিতে হতে পারে। সেখানে আমরা স্বতন্ত্র পরিচালকের সংখ্যা বাড়ানোর চেষ্টা করব। আইনের মধ্যে থেকেই এগুলো করা হবে। না হলে শেয়ার বাইব্যাক (পুনঃক্রয়) করে নেয়ার ব্যবস্থা করা হবে।
বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, শেয়ারবাজারে বৈচিত্র আনতে হবে। সেকেন্ডারি মার্কেট না থাকলে হবে না। এই বাজারটাকে অনেক বড় করতে হবে। তারমতে, বর্তমানে প্রতিদিন ১ হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয়। এই লেনদেনকে দ্রুত ৩ থেকে ৫ হাজার কোটিতে নেয়ার জন্য কাজ করতে হবে। এজন্য সারা দেশে ব্রোকারেজ হাউজের শাখা ছড়িয়ে দিতে হবে। এমনকি দেশের বাইরেও ডিজিটাল আউটলেট করার ব্যাপারে চিন্তা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ইক্যুইটিভিত্তিক শেয়ারবাজার থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করছি। গত সাড়ে ৩ মাসে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার সাব-অর্ডিনেটে এবং পার্পিচুয়াল বন্ড এবং ৮৫০ কোটি টাকার জিরো কুপন বন্ডের অনুমোদন দিয়েছি। এতে বাজারের সবকিছু বৃদ্ধি পাবে।