পুলিশ যখন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) প্রশাসনের সহায়তায় একটি জালিয়াত চক্রকে আটক করে, তখন অধিকার সুরক্ষার নাম করে একজন শিক্ষক প্রশাসনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মনগড়া, ভ্রান্ত এবং নানান নেতিবাচক মন্তব্য প্রচার করায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মনগড়া এসব মন্তব্য করার প্রতিবাদ জানিয়েছে বেরোবি নবপ্রজন্ম শিক্ষক পরিষদ।
নবপ্রজন্ম শিক্ষক পরিষদ এক বিবৃতিতে জানায়, বেগম রোকেয়াবিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর আইন, ২০০৯ এর ৪নং ধারার (ড) নং উপধারার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় এর শিক্ষকদের নৈতিক শৃঙ্খলা তত্ত্বাবধান করা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়িত্ব এবং ঐ আইনের ৫৪নং ধারা দ্বারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রশাসনিক ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবে। সেক্ষেত্রে কোন শিক্ষকের নিয়মিত ভুল তথ্য অপপ্রচারের নিরীখে প্রশাসন কেন কারণ দর্শানোর জন্য নোটিশ জারি করবেনা সেটাই নবপ্রজন্ম শিক্ষক পরিষদ জানার আগ্রহ প্রকাশ করছে।
উল্লেখ্য, অধিকার সুরক্ষা পরিষদ নামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে অভিযুক্ত শিক্ষকের দর্শানো নোটিশকে বেআইনি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
নবপ্রজন্ম শিক্ষক পরিষদ জানায়, বিজ্ঞপ্তিটিতে কিছু আপত্তিকর শব্দ উপস্থাপন করা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয় “উপাচার্য অনুপস্থিত থেকে একটি অন্যায় করেছে, তার হাজিরা খাতা বানিয়ে অনুপস্থিতির হিসাব করা হচ্ছিলো, করোনাকালের মত বৈশ্বিকমহামারীতেও তিনি ক্যাম্পাসে অনুপস্থিত, কিন্তু তিনি অনুপস্থিত থেকেও অন্যায় করা বন্ধ করেননি”। এহেন ন্যাক্কারজনক শব্দের মাধ্যমে মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ডক্টর মেজর নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ, বিএনসিসিও স্যারের প্রতি চরমভাবে মানহানিকর বক্তব্য উপস্থাপন করা হয়েছে। একজন শিক্ষকের সু-নির্দিষ্ট দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে, কিন্তু সেসব কিছু বাদ দিয়ে হাজিরা খাতা বানানোর দায়িত্ব তাদেরকে প্রদান করেছেন? বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর আইন, ২০০৯ আইনের ধারা-১১(১) ও ১১(২) এ উল্লেখিত আছে যে “ভাইস-চ্যান্সেলর বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বক্ষণিক প্রধান একাডেমিক ও প্রশাসনিক নির্বাহী কর্মকর্তা। ভাইস চ্যান্সেলর তাঁর দায়িত্ব পালনে চ্যান্সেলর এর নিকট দায়ী থাকিবেন”। ফলে এই আইনে ভাইস-চ্যান্সেলর এর আবাসিক দায়িত্বের কথা কোথাও বলা হয়নি। কোভিড-১৯ মহামারী ও আপদকালীনসময়ে বেগম রোকেয়াবিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর -এর সম্মানীত রেজিস্ট্রার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী সার্বক্ষনিক দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় ও রেজিস্ট্রার পরিচালিত কার্যক্রমকে বিতর্কিত করার জন্য অধিকার সুরক্ষা পরিষদ অবস্থান নিয়েছে। এর প্রেক্ষিতে নব প্রজন্ম শিক্ষক পরিষদ অধিকার সুরক্ষা পরিষদের এ হীন মানসিকতার কঠোর নিন্দা জানাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দৃষ্টিতে অসদাচরণের দায়ে অভিযুক্ত শিক্ষক যাকেঅ ধিকার সুরক্ষাপ রিষদ এক বিবৃতিতে সংগঠনটির একজন সক্রিয় কর্মী ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে দাবী করছে। কিন্তু তার নেতিবাচক আচরণ মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে প্রকাশ করেনা। অধিকার সুরক্ষা পরিষদের আরেকজন অন্যতম সক্রিয় সদস্য দূর্নীতির দায়ে জেলখাটা ২য় উপাচার্যের ঘনিষ্ট আত্মীয় এবং তার সকল দুষ্কৃতির দোসর হিসেবে সক্রিয় ছিলেন। তিনিই এখন রূপ বদলিয়ে অধিকার সংরক্ষণের কথা বলছেন যা গ্রহণযোগ্য নয়। অধিকার সংরক্ষণের নামে বরং তারা উল্টোটাই করছেন। তিনি নিজস্ব ব্যাবসায়িক স্বার্থে দীর্ঘদিন ক্যাফেটেরিয়া বন্ধ রেখেছিলেন। জানা যায়, তার ক্যাটারিং ব্যাবসা রয়েছে। ছাত্র-ছাত্রীদের, শিক্ষক, কর্মকর্তাএবংকর্মচারীদের বৃহত্তর কল্যাণেও তিনি ক্যাফেটেরিয়া চালু করেননি। যখন নানা রকম বাঁধা পেরিয়ে ক্যাফেটেরিয়া চালু করা হয় তখন তিনি তার পদ থেকে অব্যাহতি নেন। এর অর্থ দাড়ায় তিনি শুধুতা র ব্যক্তিগত স্বার্থের ব্যাপারেই সচেতন। এছাড়া তিনি ২য় উপাচার্যের সহযোগিতায় বিশ্ববিদ্যালয়ে তার কতজন আত্মীয়কে চাকুরী দিয়েছেন নবপ্রজন্ম শিক্ষক পরিষদ সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তালিকা জানতে চায়। সংগঠনটির অন্য একজন সদস্য তার নিয়োগের শর্ত ভঙ্গ করে কম্পিউটার সায়েন্স ডিপার্টমেন্টে রয়েছেন। ১০ম সিন্ডিকেটের নিয়োগের শর্ত মোতাবেক অনতিবিলম্বে তাকে কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগ থেকে ফিজিক্স বিভাগে স্থানান্তরিত করা হোক। তিনি প্রক্টর থাকাকালীন সময়ে সহযোগী অধ্যাপক থেকে অধ্যাপক হয়েই প্রশাসনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। সংগঠনটিরআরেকজন সদস্য পোস্ট ডক্টরাল গবেষণা করার নমিনেশন এবং ফুলটাইম শিক্ষা ছুটি নিয়েছেন কিন্তু তিনি সেসবের তোয়াক্কা না করেই ক্যাম্পসে আনাগোনা করছেন এবং নানারকম অস্থিতিশীল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি বিনষ্ট হয় এরকম কার্যে লিপ্ত রয়েছেন। তার ফেলোশিপ ও শিক্ষাছুটি বাতিল করা হোক এবং ইউজিসি কে অনতিবিলম্বে এ বিষয়ে অবহিত করা হোক। তিনি জামাত-শিবিরের রাজনীতি করে কিভাবে আজকের জায়গায় পৌঁছেছেন এ বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে পত্রিকায় খবরও প্রকাশিত হয়েছে। উল্লেখ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে শর্ত থাকে যে প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ের চারটি(এস এসসি, এইচ এস সি, স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর) পরীক্ষায় যেকোন দুইটিতে ১ম শ্রেণি বা বিভাগ আবশ্যক। কিন্তু তিনি এস এস সি ও এইচ এস সি তে ২য় বিভাগ এবং স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় ২য় শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়ে কিভাবে একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন, যার আরও সুষ্ঠু তদন্ত প্রয়োজন।
এছাড়াও ক্যাম্পাস সবুজায়নের নামে অর্থ আত্মসাৎএর অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করার যে পায়তারা তারা করছে, অনতিবিলম্বে তাদের এইসব কার্যক্রমের বিহিত করার জোর দাবী জানাচ্ছে নব প্রজন্ম শিক্ষক পরিষদ। অধিকার সুরক্ষার কথা তারা বলছে, কিন্তু ছাত্র-ছাত্রীদের অধিকার, শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিয়ে তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। তারা অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে তামাশা করছেন এবং সেশন জট তৈরী করছেন।
নবপ্রজন্ম শিক্ষক পরিষদ এ সকল অবাঞ্ছিত ও অপ্রত্যাশিত কার্যক্রমের প্রতিবাদ জানাচ্ছে। নবপ্রজন্ম শিক্ষক পরিষদ মনে করে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ও শিক্ষার পরিবেশ বিনষ্ট করার জন্য অধিকার সুরক্ষা পরিষদের সাম্প্রতিক বিজ্ঞপ্তির উক্ত উস্কানিমূলক বক্তব্যই যথেষ্ট। বক্তব্যটির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি অধিকার সুরক্ষা পরিষদের আক্রমণাত্মক মনোভাব, ভাষাজ্ঞানের অভাব ও আচরণগত অসংগতি প্রকাশ পায়। এছাড়াও বিজ্ঞপ্তিটিতে বিভিন্ন মনগড়া ও বানোয়াট বক্তব্য উপস্থাপন করা হয়েছে। নবপ্রজন্ম শিক্ষক পরিষদ বিজ্ঞপ্তিটি প্রত্যাহারের জোর দাবি জানাচ্ছে।