শনিবার, ডিসেম্বর ৭, ২০২৪

পেয়াজ ইসুতে ৪২৪ কোটি টাকার কারসাজি

পাঠক প্রিয়

দেশে পেঁয়াজের মজুদ আছে সাড়ে তিন মাসের। মোকাম থেকে পাইকারি ও খুচরা বাজারে সরবরাহ পরিস্থিতিও একেবারে স্বাভাবিক। কিন্তু একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীর কারসাজিতে পেঁয়াজের বাজার এখনও অস্থির।

ওই চক্রটির অজুহাত-ভারত রফতানি বন্ধ করায় সৃষ্টি হয়েছে এমন পরিস্থিতি। যদিও দেশটির রফতানি বন্ধের ১৫ দিন আগ (৩১ আগস্ট) থেকেই পেঁয়াজের দামে ঊর্ধ্বগতি, যা এখনও অব্যাহত। এতে ১৮ দিনের ব্যবধানে ৪০ টাকা কেজির পেঁয়াজের দাম বেড়ে সর্বোচ্চ উঠেছে ১২০ টাকায়।

এ সময়ে গড়ে সর্বনিম্ন ১২ থেকে সর্বোচ্চ ৮০ টাকা পর্যন্ত প্রতি কেজিতে বাড়তি মুনাফা তুলে নেয়া হয়েছে ভোক্তার পকেট থেকে। প্রতিদিন কেজিতে গড়ে নেয়া হয়েছে ৪২ টাকা করে।

দেশে গড়ে পেঁয়াজের প্রতিদিনের চাহিদা ৬ হাজার ৯৪৪ টন বা ৬৯ লাখ ৪৪ হাজার ৪৪৪ কেজি। এ হিসাবে ১৮ দিনে মোট ৪২৪ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। এই ১৮ দিনে ৬টি ধাপে পেঁয়াজের দাম বাড়ানো হয়েছে।

তবে বাজারে ক্রেতা না-থাকা এবং সরকারের নানা উদ্যোগে গত বুধবার থেকে নিত্যপণ্যটির দাম কমতে শুরু করেছে। বৃহস্পতিবার আগের দু’দিনের তুলনায় পাইকারি ও খুচরা বাজারে কেজিতে গড়ে ২০-৩০ টাকা কমেছে।

এদিন পাইকারি বাজারে দেশি পেঁয়াজ কেজি বিক্রি হয়েছে ৭৫ টাকা ও আমদানি করা পেঁয়াজ ৬০-৬৫ টাকা। এ ছাড়া খুচরা বাজারে দেশি পেঁয়াজ কেজি বিক্রি হয়েছে ৮৫-৯০ টাকা ও আমদানি করা পেঁয়াজ ৭০-৭৫ টাকা।

প্রসঙ্গত, গত বছরের একই সময়েও ভারত পেঁয়াজের রফতানিমূল্য বাড়িয়ে দিলে দেশে এর দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে। পরে রফতানি বন্ধ করে দিলে দাম আরও বেড়ে যায়।

ওই সময়ও পেঁয়াজের সরবরাহ ও মজুদ পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল। তারপরও দাম বেড়েছে পাগলা ঘোড়ার গতিতে। প্রতি কেজির দাম বেড়ে সর্বোচ্চ ৩২০ টাকায় উঠেছিল।

গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত ২৪ দিনে অসাধু সিন্ডিকেটটি ভোক্তার পকেট থেকে প্রায় ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছিল। সে বছর কারসাজির সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করলেও কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

ফলে এ বছরও একই সিন্ডিকেট সুযোগ পেয়ে দেশে পেঁয়াজের পর্যাপ্ত সরবরাহ ও মজুদ থাকার পরও ভারত রফতানি বন্ধ ঘোষণার পর বাজার অস্থিতিশীল করে তোলে।

জানতে চাইলে কনজুমার ইয়ুথ বাংলাদেশের (সিওয়াইবি) নির্বাহী পরিচালক পলাশ মাহমুদ বৃহস্পতিবার যুগান্তরকে বলেন, গত বছরের পেঁয়াজ নিয়ে কারসাজি করা চিহ্নিত সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থা না হওয়ায় এবারও তারা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।

এই ১৫/১৬ দিনে কোনো কারণ ছাড়াই পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে ভোক্তার পকেট থেকে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার বেশি হাতিয়ে নিয়েছে। তারপরও এই চক্রের সদস্যারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, গত বছর দেশে পেঁয়াজ নিয়ে লঙ্কাকাণ্ড ঘটানোর পর সিওয়াইবির পক্ষ থেকে একটি জরিপ করা হয়েছিল। সেখানে সিন্ডিকেটের সদস্যরা কীভাবে ভোক্তার পকেট থেকে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছিল, তা আমরা সংবাদ সম্মেলন করে গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলাম।

এবারও একটি জরিপ করা হচ্ছে। তবে জরিপের কাজ পুরোপুরি সম্পন্ন না হওয়ায় আমরা এবার এখনও সংবাদ সম্মেলন করতে পারছি না।

তবে প্রাথমিকভাবে বলা যায়, এবার পেঁয়াজকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে সরকারের নাকের ডগার ওপর দিয়ে শক্তিশালী সেই পুরনো সিন্ডিকেট শত শত কোটি টাকার বেশি হাতিয়ে নিয়েছে।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, দেশের বাজারে ৩০ আগস্ট প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ছিল ৪০ টাকা। ৩১ আগস্ট থেকে দাম বাড়তে থাকে। ওইদিন কেজিতে দাম ১২ টাকা বেড়ে হয় ৫২ টাকা।

২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত একই দরে পেঁয়াজ বিক্রি হয়। দেশে প্রতিদিন পেঁয়াজের চাহিদা ৬ হাজার ৯৪৪ টন বা ৬৯ লাখ ৪৪ হাজার ৪৪৪ কেজি। এ হিসাবে আলোচ্য ৩ দিনে ভোক্তার পকেট থেকে নেয়া হয়েছে ২৫ কোটি টাকা।

৩ সেপ্টেম্বর পেঁয়াজের দাম আরও এক দফা বেড়ে প্রতি কেজির দাম দাঁড়ায় ৫৫ টাকা। ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই দাম স্থির ছিল।

ওই দু’দিন ভোক্তার পকেট থেকে প্রতি কেজিতে বাড়তি মুনাফা নেয়া হয়েছে ১৫ টাকা করে। এ হিসাবে ২ দিনে মোট নেয়া হয়েছে ২০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা।

৫ সেপ্টেম্বর তা আরও একধাপ বেড়ে হয় ৭০ টাকা। ১৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই দরেই বিক্রি হয়। আলোচ্য ৯ দিনে প্রতি কেজিতে মুনাফা নেয়া হয়েছে ৩০ টাকা করে। ফলে ওই সময়ে মোট মুনাফা নেয়া হয়েছে ১৮৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা।

তবে ১৪ সেপ্টেম্বর সোমবার ভারত রফতানি বন্ধ করলে পেঁয়াজের দাম আরও বেড়ে ৮৫ টাকা ছাড়িয়ে যায়। এই দর একদিন স্থির ছিল। ওইদিন প্রতি কেজিতে ভোক্তার পকেট থেকে বাড়তি নেয়া হয়েছে ৪৫ টাকা। এ হিসাবে একদিনে নেয়া হয়েছে ৩১ কোটি ২৫ লাখ টাকা।

এরপর ১৫ সেপ্টেম্বর পেঁয়াজের বাজারে রীতিমতো আগুন ছড়িয়ে পড়ে। অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে প্রতি কেজির দাম ওঠে ১২০ টাকা পর্যন্ত। এই একদিনে প্রতি কেজিতে বাড়তি নেয়া হয়েছে ৭০ টাকা। এ হিসাবে নেয়া হয়েছে ৪৮ কোটি ৬১ লাখ টাকা।

১৬ ও ১৭ সেপ্টেম্বর দাম কিছুটা কমে প্রতি কেজি সর্বোচ্চ ৯০-১০০ টাকা বিক্রি হয়েছে। আলোচ্য ২ দিনে প্রতি কেজিতে গড়ে বাড়তি মুনাফা নেয়া হয়েছে ৮০ টাকা করে। এ হিসাবে মোট মুনাফা নেয়া হয়েছে ১১১ কোটি ১১ লাখ টাকা।

৩১ আগস্ট থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১৮ দিনে ৬ ধাপে প্রতি কেজি পেঁয়াজে দাম সর্বোচ্চ ৮০ টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এ হিসাবে গড়ে ১৮ দিনে ভোক্তার পকেট থেকে অসাধু ব্যবসায়ীরা লোপাট করেছেন প্রায় ৪২৪ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের পক্ষ থকে বলা হচ্ছে, দেশে উৎপাদন ও আমদানি মিলিয়ে পেঁয়াজের পর্যাপ্ত সরবরাহ ও মজুদ রয়েছে। তাই পণ্যটির কোনো ধরনের সংকট নেই।

প্রতিষ্ঠানটির সদস্য আবু রায়হান আলবেরুনী বৃহস্পতিবার বলেন, বর্তমানে দেশে সাড়ে ৫ লাখ টনের মতো পেঁয়াজ মজুদ আছে। এই পেঁয়াজ দিয়ে আরও তিন মাস বা সাড়ে তিন মাস চলবে।

এ ছাড়া আমদানি করা যেসব পেঁয়াজ আছে, তা আগের চেয়ে কম দরে এলসি করা। সে ক্ষেত্রে দাম বৃদ্ধি অযৌক্তিক ও অনৈতিক।

বিআইডিএসের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, বিক্রেতারা সুযোগ পেলেই কারসাজি করে। তারা বেশি দামের আশায় পেঁয়াজ দু-তিন দিন পণ্য ধরে রেখে বিক্রি করে।

এ জন্য বাজারে পণ্যের দাম বাড়তে থাকে। এ ছাড়া যেসব ক্রেতার ক্রয়ক্ষমতা আছে তারা আবার চাহিদার তুলনায় বেশি করে কেনে। তারা ভাবেন সামনে দাম আরও বেড়ে যাবে।

এতে বাজারেও পণ্যটির সরবরাহ কমে যায়। সুযোগ পেয়ে অসাধুরা আরও দাম বাড়ায়, যা কোনোভাবেই ঠিক নয়।

সরকারের উদ্যোগ : বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এক মাসের মধ্যে পেঁয়াজের বাজার স্বাভাবিক হয়ে আসবে।

এ ছাড়া চাহিদা মোতাবেক পেঁয়াজের মজুদ, সরবরাহ ও মূল্য স্বাভাবিক রাখতে গত বছরের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে সরকার বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

এর মধ্যে রয়েছে- পেঁয়াজ রফতানির ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়ে ভারত সরকারের সঙ্গে কূটনৈতিক মাধ্যমে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের জন্য পররাষ্ট্র সচিবকে চিঠি দেয়া হয়েছে।

আমদানি করা পেঁয়াজ স্থলবন্দর থেকে দ্রুততম সময়ে ছাড় করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে এনবিআর চেয়ারম্যান এবং বন্দর কর্তৃপক্ষ চেয়ারম্যানকে চিঠি দেয়া হয়েছে।

আগামী বছরের মার্চ পর্যন্ত পেঁয়াজ আমদানির ওপর আরোপিত ৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক আপাতত প্রত্যাহারের বিষয়ে সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে।

এদিকে পেঁয়াজ আমদানির ওপর এলসি মার্জিন শিথিল করা হয়েছে। শূন্যতম এলসি মার্জিন রাখতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

সুত্রঃ যুগান্তর।

সর্বশেষ সংবাদ

এসটিএস গ্রুপের জন্য কো-ব্র্যান্ডেড লংকাবাংলা ক্রেডিট কার্ড

লংকাবাংলা ফাইন্যান্সপি এলসি, এসটিএস ক্যাপিটাল লিমিটেড (এসটিএসগ্রুপ) ও মাস্টারকার্ডের সহযোগিতায় সম্প্রতি একটি কো-ব্র্যান্ডেড টাইটেনিয়াম ক্রেডিট কার্ড চালু করা হয়েছে।...

বৈষম্য নিরসনে অর্থব্যবস্থার ৮ দফা সংস্কার প্রস্তাবনা

অর্থনৈতিক বৈষম্য নিরসনে সংস্কার কমিশন গঠন, সংবিধানে সামাজিক মালিকানার স্বীকৃতি ও অর্থব্যবস্থার ৮ দফা সংস্কার প্রস্তাবনা নিয়ে সংবাদ সম্মেলন ও আলোচনা সভা করেছে ফোরাম...

শেখ হাসিনা পালায় না !!!

জনরোষের মুখে শুধু পরিবারের সদস্যদের নিয়ে শেখ হাসিনার দেশ ছাড়ার ঘটনা মানতে পারছেন না আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা ও মন্ত্রীরা। তারা বলছেন, তিনি...

গুমবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদে স্বাক্ষর করল বাংলাদেশ

গুমবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদে স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ। বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের সাপ্তাহিক বৈঠকে অর্ন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস উপদেষ্টাদের করতালির মধ্যে এই সনদে...

বালা মুসিবত আমাদের হাতের কামাই: পীর ছাহেব ছারছীনা

পৃথিবীর সকল বালা মুসিবত আমাদের হাতের কামাই। মানুষ ধীরে ধীরে ইসলাম থেকে দূরে সরে যাওয়ায় আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাদের প্রকৃতিক দুর্যোগ দিয়ে সতর্ক করে...

জনপ্রিয় সংবাদ

সিভি এবং চাকুরী আবেদনের কিছু প্রয়োজনীয় টিপস

মানবসম্পদ বিভাগে কাজ করার বদৌলতে প্রতিনিয়ত নিত্য নতুন অভিজ্ঞতার সম্মুখে পরতে হয়। যার অধিকাংশই আসে সিভিকে কেন্দ্র করে। আমি সিরিজ আকারে সিভি এবং ক্যারিয়ার...

মিথ্যা সংবাদের প্রতিবাদ জানিয়েছে তুরাগ থানা ছাত্রলীগ

তুরাগ থানা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক মোঃ আরিফ হাসান জানায়, গত ১১-০৮-২০২০ তারিখে ’আমার প্রাণের বাংলাদেশ’ নামক পত্রিকার অনলাইন সংস্করণে ‘রাজধানীর উত্তরা যুবলীগ নেতা নাজমুল হাসান...

 ফিনান্সিয়াল অ্যাসোসিয়েট পদে নিয়োগ জোরদার করলো মেটলাইফ বাংলাদেশ

ফিনান্সিয়াল অ্যাসোসিয়েট হিসেবে যোগদানে আগ্রহী প্রার্থীদের জন্য ডিজিটাল নিয়োগ প্ল্যাটফর্ম উন্মোচন করেছে মেটলাইফ বাংলাদেশে। অনন্য এই ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম আগ্রহী প্রার্থীদেরকে বাসা থেকেই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে...

২৩ কোটি বছরের পুরনো হিরকখণ্ড উদ্ধার!

দেখতে কি সুন্দর হিরকখণ্ডটি । শুক্রবার রাশিয়ার অ্যানাবার নদীর ধারে আলরোসার এবেলিয়াখ খনি থেকে উদ্ধার হয় এই হিরক খণ্ডটি। এখনও স্থির হয়নি হিরকখণ্ডটি পালিশ...
Verified by MonsterInsights