প্রতি বছরের মতো এবারও দেশে ০৫ থেকে ১১ অক্টোবর ২০২০ উদযাপিত হচ্ছে ”বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ”। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য বিষয় হলো ’ বাংলাদেশের উন্নয়নে শেয়ারবাজারের ভ‚মিকা”। ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অব সিকিউরিটিজ কমিশনের (আইওএসকো ) সঙ্গে যেীথবাবে দিবসটি উদযাপন করছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
বিনিয়োগকারীদের শিক্ষার উন্নতি ও উন্নয়নের জন্য আইওএসকো এর গুরুত্বপূর্ণ প্রতিশ্রুতি রয়েছে, এটি একটি বিশ্বব্যাপী প্রচার, যার লক্ষ্য বিনিয়োগকারীদের শিক্ষা এবং বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা প্রচার করা । সেই ধারবাহিকতায় সিএসই (চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ লি.) ০৭ এবং ০৮ অক্টোবর ২০২০ এ ০২টি ওয়েবিনার এর আয়োজন করেছে। আজ প্রথম ওয়েবিনার ” বর্তমান মহামারী পরিস্থিতিতে পুঁজিাবাজারের ডিজিটালাইজেশনের প্রয়োজনীতা” অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এখানে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ, কমিশনার, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), সম্মানিত অধ্যাপক আবু আহমেদ, অর্থনীতি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, মূল নিবন্ধ উপস্থাপনা করেছেন ডঃ এস এম এম সোহরাব উদ্দিন, অধ্যাপক, অর্থ বিভাগ ও পরিচালক, ব্যবসায় গবেষণা ব্যুরো, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং সিএসই এর সম্মানিত ট্রেক এর প্রতিনিধিগন। স্বাগত বক্তব্য রাথেন জনাব মো. মামুন-উর-রশিদ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক সিএসই এবং বিশেষ বক্তব্য রাখেন জনাব আসিফ ইব্রাহিম, চেয়ারম্যান, সিএসই।
স্বাগত বক্তব্যে জনাব মো. মামুন-উর-রশিদ বলেন ” বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহের দুটি প্রাথমিক উদ্দেশ্য রয়েছে: মূল বার্তাগুলি ছড়িয়ে দেওয়া । বিনিয়োগকারীদের শিক্ষা এবং সুরক্ষা এবং সেই সাথে আর্থিক স্বাক্ষরতার প্রয়োজন , বিনিয়োগকারীদের জন্য শিক্ষার সুযোগ বাড়ানো। সিএসই বিএসইসি এর সাথে একাতœ হয়ে হয়ে ওয়েবিনার এর আয়োজন করতে পেরে আনন্দিত”।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জনাব আসিফ ইব্রাহিম, চেয়ারম্যান, সিএসই বলেন, ”বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের অধিকাংশই খুচরা বিনিয়োগকারী। বিশ্বের অন্য পুঁজিবাজারের তুলনায় খুচরা বিনিয়োগকারীদের সংখ্যাটি খুব বেশী। এছাড়াে যেহেতু বাংলাদেশ বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) জানুয়ারী ২০১৭ থেকে তার দেশব্যাপী আর্থিক স্বাক্ষরতা কার্যক্রম শুরু করেছে, আমরা নিঃসন্দেহে বলতে পারি যে, আইওএসকো এর উদ্যোগে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার এবং বিনিয়োগকারীদের উপর এক বিরাট প্রভাব ফেলেছে। আমরা সর্বদা সম্মানিত বিনিয়োগকারীদের স্মরণ করিয়ে দেই যে, পঁজিবাজারে বিনিয়োগের ঝুঁকি রয়েছে এবং আমরা বিনিয়োগকারীদের অর্থ বিনিয়োগের আগে বাজারটি জানতে, বুঝতে এবং বিশ্লেষণ করতে বলি। বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের সকল স্টেকহোল্ডাররা বিশ্বের অন্যান্য দেশের সাথে আইওএসকোর বিশ্ব বিনিয়োগ সপ্তাহের কর্মসূচিতে সক্রিয়ভাবে অংশ নিচ্ছেন। আমরা বিনিয়োকারীদের সিএসইসি এবং স্টক এক্সচেঞ্জের বিভিন্ন আর্থিক স্বাক্ষরতা প্রোগ্রামে অংশ নিয়ে পুঁজিবাজার সর্ম্পকে তাদের সচেতনতা বাড়াতে অনুরোধ করি। বিএসইসি আর্থিক স্বাক্ষরতা সম্পর্কিত বিষয়গুাল সর্বোচ্চ বিবেচনায় নিয়েছে এবং বিএসইসির স্বল্পমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী কর্মসূচির মাধ্যমে এগুলি সারা দেশে পেীঁছে যাবে।প্রায় ৫0 বছর আগে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি স্বপ্ন দেখেছিলেন ‘সোনার বাংলা’, যেখানে দেশের সাধারণ নাগরিক সমৃদ্ধিতে বাস করেন এবং সরকার কর্তৃক নিশ্চিত মানসম্মত শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, আইন ও ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রে ন্যায়সঙ্গত প্রবেশাধিকার রয়েছে। বর্তমান সরকার সেই দৃষ্টি পুনরুত্থিত করেছে এবং একবিংশ শতাব্দীর সর্বোচ্চ বিশ্বায়িত বিশ্বের জন্য এটি প্রস্তুত করেছে এবং এর নাম দিয়েছে “ডিজিটাল বাংলাদেশ” (সুশাসনের জন্য ডিজিটাল বাংলাদেশ, ২০১০- প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার)।
করোনভাইরাস রোগ ২০১৯ এর বিশ্বব্যাপী মহামারীর অংশ হিসাবে বাংলাদেশে COVID-19 মহামারীজনিত কারণে 2020 সালের মার্চ থেকে বেশিরভাগ দিন ব্যবসা বন্ধ ছিল। যদি আমাদের সমস্ত সিস্টেম ডিজিটালাইজড হতো, আমরা আমাদের ব্যবসা খোলা রাখতে পারতাম।
বিএসইসি ইতিমধ্যে এ বিষয়ে উদ্যোগ নিয়েছে এবং উভয় স্টক এক্সচেঞ্জেকেই জুন ২২, 2020 নির্দেশনা দিয়েছে এর অর্ডার নম্বর নং SEC/SRMIC/94-231/942 এর মাধমে। আমাদের বাজারের সম্পূর্ণ ডিজিটালাইজেশনের জন্য বিধি ও প্রবিধানমালা সংশোধন, TREC ধারীদের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং কাগজবিহীন যোগাযোগের দরকার রয়েছে।উভয় স্টক এক্সচেঞ্জই এখন আমাদের পুঁজিবাজারের সম্পূর্ণ ডিজিটাইজেশনের দিকে কাজ করছে। আমরা আশা করি এটি ২০২১ সালে সম্পূর্ণ কার্যকর
জনাব শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ, কমিশনার, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) বলেন,”
কমিশনার বলেন, স্টক এক্সচেঞ্জরা চাওয়ার আগেই আমরা সফটওয়্যার ডেভোলপট করেছি। অন্যান্য আরও অনেক পরিকল্পনা আমাদের আছে। সেগুলো দ্রুততার সঙ্গে কাজ করার চেষ্টা করছি। এজন্য আমাদের নিজেদেরও টেকনিক্যাল লোকজন দরকার হচ্ছে। সে কারনে একজন আন্তর্জাতিকমানের আইটি বিশেষজ্ঞকে পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার জন্য টেন্ডার দিয়েছি। আশা করছি ২-৩ মাসের মধ্যে এ ধরনের একজন কর্মকর্তাকে আমাদের মাঝে পাব। যিনি আমাদের শেয়ারবাজারের উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। যার পরামর্শে শেয়ারবাজারকে ডিজিটালাইজডের পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে।তিনি বলেন, ৩টি কারনে টেকনোলজি গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত টেকনোলজি কাজের গতি বাড়িয়ে দেয় ও দ্বিতীয়ত ব্যয় কমায়। এ কারনে আমাদেরকে টেকনোলজির দিকে এগিয়ে যেতে হবে। আরেকটি বিষয় হচ্ছে স্টেকহোল্ডারদেরকে সহজেই এক জায়গায় নিয়ে আসে। এসব কারনে টেকনোলজির ব্যবহারটা খুব দরকার। ভবিষ্যতের দিকে তাকালেও সুশাসন ও স্বচ্ছতা নিশ্চিতের ক্ষেত্রে টেকনোলজির ব্যবহার বাড়াতে হবে। এর কোন বিকল্প নেই।শেখ সামসুদ্দিন বলেন, এই করোনায় অনেক খাতের ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু টেকনোলজি ক্রমানয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। কারন যেকোন পরিস্থিতিতেই টেকনোলজি ব্যবহার করে সে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যায়। আমাদের এখানেও করোনার মধ্যে টেকনোলজির অভাবে বিভিন্ন সমস্যা হয়েছে। আমরা আমাদের মতো করে নির্দেশনা দিয়ে তা সমাধানের চেষ্টা করেছি।তিনি বলেন, করোনা হওয়ার পরে বিএসইসি টেকনোলজি নির্ভর অনেকগুলো পদক্ষেপ নিয়েছে। যেগুলো প্রমাণ করে ডিজিটালাইজড স্টক এক্সচেঞ্জ খুব উপকারী। যেমন এজিএম, ইজিএম, বোর্ড মিটিং, রিপোর্টস জমা ইত্যাদি অনলাইনে করার ব্যবস্থা করেছি। এতে করে ব্যয় ও সময় লাঘব হয়েছে।তিনি আরো বলেন, বিএসইসির প্রাথমিক একটি লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে শেয়ারবাজারকে কত বেশি মানুষের কাছে সহজ করা যায়। এজন্য স্টক এক্সচেঞ্জের প্রত্যেকটি কার্যাবলিকে ডিজিটালাইজড করা হবে। এ নিয়ে কমিশন কাজ করছে। এছাড়া আপনাদের কাছে যদি কোন পরামর্শ থাকে, তাহলে তা কমিশন গ্রহন করবে।তিনি বলেন, আমাদের সরকার বাংলাদেশকে ডিজিটাল করতে চায়। যা করলে দেশের মঙ্গল হবে। আমরাও তার একটি অংশ হিসেবে শেয়ারবাজারকে ডিজিটালাইজড করতে চাই। এর মাধ্যমে বাজারে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বাড়বে। এছাড়া ব্যয় কমে আসবে। আর মার্কেটটাও সেব জায়গায় পৌছে যাবে।তিনি আরো বলেন, টেকনোলজি ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু জটিলতা বা ঝুঁকি আছে। এই ঝুঁকিকে আমাদের মোকাবেলা করতে হবে। কারন পুরো মার্কেটে টেকনোলজি আনার পরে যদি স্টেকহোল্ডারদের তা বোঝার সক্ষমতা না থাকে, তাহলে স্বার্থক হবে না। তাই টেকনোলজিকে যেনো প্রয়োগ করতে পারি, সে দৃষ্টিকোন থেকে স্টেকহোল্ডারদের যে ধরনের ট্রেনিং দরকার, তা করানোর জন্য বিএসইসির মাধ্যম আছে। যেমন বিআইসিএম ও বিএএসএম অন্যতম। ডিজিটালাইজেশনের ঝঁকি কমানোর জন্য আরো দুটি পদক্ষেপ ইতিমধ্যে নেওয়া হয়েছে- ইনসাইডার ট্রেডিং বন্ধের জন্য ডাটাবেজ তৈরী করা এবং স্যোশাল মিডিয়াতে ইনফ্লুয়েনশিয়াল ইনফরমেশান বন্ধ করা। এছাড়াও বলেন মিউচুয়াল ফান্ড এর ইনফরমেশন এর প্রকাশের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা নিয়ে কাজ চলছে।
মূল প্রবন্ধে ূল নিবন্ধ উপস্থাপনা করেছেন ডঃ এস এম এম সোহরাব উদ্দিন, অধ্যাপক, অর্থ বিভাগ ও পরিচালক, ব্যবসায় গবেষণা ব্যুরো, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। তিনি তার প্রবন্ধে বিশ্বের পুুুঁজিবাজারের ক্ষেত্রে ডিজিটাইজেশনের সার্বিক অবস্থা তুলে ধরেন। একই সাথে এই মহামারী পরবর্তী বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এর ব্যবহার , প্রয়োজনীয়তা এবং গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি আরো বলেন যে, সময়ের সাথে সাথে এর আরো ব্যাপক বিস্তৃতি সময়ের দাবি।
সম্মানিত অধ্যাপক আবু আহমেদ, অর্থনীতি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বলেন,” আমাদের মার্কেটে নতুন যে কোনো কিছুর আগমন সব সময়ই বাধার সম্মুখীন হয়েছে। ডিজিটাইজেশন এখন সময়ের দাবি এবং সব বাধা পেরিয়ে এটিও সফলতার মুখ দেখবে। এছাড়া মার্কেটে বিভিন্ন মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীগুলোর লিস্টেড হওয়ার ব্যাপারে কাজ করা প্রয়োজন। সিএসই সব সময়ই নতুন কিছুতে অগ্রনী ভ‚মিকা রেখেছে। এক্ষেত্রেও তিনি তেমনটাই আশা ব্যক্ত করেন।”
সবশেষে, সিএসই এর চিফ রেগুলেটরী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) জনাব মোহাম্মদ মতর্‚জা আলম সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে ওয়েবিনার প্রোগাম শেষ করেন।