নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু করার ব্যাপারে প্রস্তুতি গ্রহণ করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা বোর্ডগুলো। সাপ্তাহিক ও সরকারি ছুটি বাদে পরীক্ষা শুরুর পর থেকে প্রতিদিন পরীক্ষা চলবে। যত দ্রুত সম্ভব পরীক্ষা শেষ করতে চায় মন্ত্রণালয়। সব বিষয়েই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে, তবে পূর্ণ নম্বর কমতে পারে। আজ মঙ্গলবার এই পরীক্ষার ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে সরকারের উচ্চপর্যায়ের সঙ্গে আলোচনা করা হবে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।
গত সপ্তাহে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময়সভায় শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চার সপ্তাহের সময় দিয়ে এইচএসসি পরীক্ষার সূচি ঘোষণা করব। কোন পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেব, কতটুকু পরীক্ষা নেব, সে ব্যাপারে বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনা ৬ অক্টোবরের মধ্যে জানিয়ে দেওয়া হবে। ছয় মাস ধরে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে ধরে রাখা যায় না। তাই দ্রুততম সময়ের মধ্যে কতগুলো বিষয়ে এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়া যায়, সেটা আমরা চিন্তা-ভাবনা করছি। যখন আমরা পরীক্ষা নেব, তখন কেউ যদি করোনায় আক্রান্ত হয়, তাদের কিভাবে মূল্যায়ন করা যায় সেই বিবেচনাও আমাদের থাকবে।’
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, শিক্ষামন্ত্রীর কথামতোই নির্দিষ্ট সময়ে এইচএসসি পরীক্ষার ব্যাপারে জানানো হবে। আজ মঙ্গলবার জানিয়ে দেওয়া হতে পারে কখন বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করা হবে। মঙ্গলবারে যদি সম্ভব না হয় তাহলে বুধ-বৃহস্পতিবার পর্যন্তও সময় লাগতে পারে।
সূত্র জানায়, এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা আয়োজনে দুটি বিকল্প সামনে রাখা হয়েছে। একটি হচ্ছে, প্রতি বিষয়ে ৫০ শতাংশ নম্বর কমানোর প্রস্তাব আছে। সে ক্ষেত্রে যেসব বিষয়ে ব্যাবহারিক নেই, সেগুলোতে এমসিকিউ ও সৃজনশীল উভয় অংশের পূর্ণ মান থেকে ৫০ শতাংশ করে কমানোর চিন্তা আছে। আর যেগুলোতে ব্যাবহারিক আছে, সেগুলোতে ব্যাবহারিক নম্বর ঠিক রেখে অবশিষ্ট অংশের (এমসিকিউ ও সৃজনশীল) নম্বর সমন্বয় করে পূর্ণ নম্বর ৫০ শতাংশ কমানো হবে।
অন্য প্রস্তাবে কেবল এমসিকিউ কিংবা সৃজনশীল অংশের যেকোনো একটির পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়টি আছে। এ ক্ষেত্রেও ব্যাবহারিকের নম্বর ঠিক রেখে বাকি অংশের ওপর নম্বর সমন্বয়ের চিন্তা আছে। আর করোনা পরিস্থিতির বিষয়টি বিবেচনায় রেখে নিজ নিজ কলেজকে ব্যাবহারিক পরীক্ষা নেওয়ার অনুমতি দেওয়ার প্রস্তাবও আছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় যে প্রস্তাব গ্রহণ করবে সেটি বাস্তবায়ন করবে বোর্ডগুলো। তবে কোনো প্রস্তাবেই বিষয় কমানোর কথা বলা হয়নি।
আন্ত শিক্ষা বোর্ড সূত্র জানায়, স্বাস্থ্যবিধি মেনে এইচএসসি পরীক্ষা নিতে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন সে ব্যাপারে এরই মধ্যে পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে শিক্ষা বোর্ডগুলো। প্রতি বেঞ্চে একজন শিক্ষার্থী বসিয়ে পরীক্ষা নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এক বেঞ্চে একজন শিক্ষার্থীকে যে পাশে বসানো হবে, পরের বেঞ্চের শিক্ষার্থীকে তার অন্য পাশে বসানো হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষার্থীদের ঢোকানো ও বের করা হবে।
জানা যায়, চলতি বছরের ১ এপ্রিল এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল। ১৪ লাখ শিক্ষার্থীর জন্য ১১টি শিক্ষা বোর্ড প্রায় দুই হাজার ৫০০ কেন্দ্রে পরীক্ষা গ্রহণের প্রস্তুতি নিয়েছিল। কিন্তু এখন প্রতি বেঞ্চে একজন শিক্ষার্থী বসিয়ে পরীক্ষা নিতে হলে প্রায় পাঁচ হাজার কেন্দ্রের প্রয়োজন হবে। সে ব্যাপারেও প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে শিক্ষা বোর্ডগুলো।
নাম প্রকাশ না করে একটি বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক জানান, মার্চের শুরুতেই কিছু বোর্ডের প্রশ্ন মাঠপর্যায়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তবে মার্চের মাঝামাঝি করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ায় মাদরাসা বোর্ডসহ কিছু বোর্ডের প্রশ্ন পাঠানো সম্ভব হয়নি, যা এত দিন বিজি প্রেসে সংরক্ষিত ছিল। গত সপ্তাহে প্রশ্নপত্র পাঠানো শেষ হয়েছে। এই মুহূর্তে নতুন করে প্রশ্ন ছাপানোর সুযোগ নেই। আগের প্রশ্নেই পরীক্ষা নিতে হবে। যদি সরকার আংশিক নম্বরে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে সকালবেলা কেন্দ্র সচিবদের নির্দেশনা জানিয়ে দেওয়া হবে। সে অনুযায়ী তাঁরা শিক্ষার্থীদের অবহিত করবেন।
আন্ত শিক্ষা বোর্ডের সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এইচএসসি পরীক্ষার ব্যাপারে এরই মধ্যে শিক্ষামন্ত্রী কথা বলেছেন। মন্ত্রণালয় থেকে যেভাবে নির্দেশনা পাব, সে অনুযায়ী আমরা পরীক্ষা গ্রহণে প্রস্তুত রয়েছি।
সূএ:কালের কন্ঠ