অনলাইনের পাশাপাশি কাউন্টারেও ট্রেনের টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। শনিবার সব কাউন্টার থেকে ২১ সেপ্টেম্বরের অগ্রিম টিকিট বিক্রি হয়েছে। তবে ওই দিনের আগে যাত্রার টিকিট কিনতে এসে অনেক যাত্রী ফেরত গেছেন। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আন্তঃনগর ট্রেনের ২৫ শতাংশ অগ্রিম টিকিট বিক্রি হচ্ছে কাউন্টারে। আর মেইল ও লোকাল ট্রেনের ৫০ শতাংশ টিকিট চলতি কাউন্টারেই পাওয়া যাচ্ছে। এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৫ থেকে ২০ শতাংশ টিকিট অবিক্রীতই থেকে যাচ্ছে।
শনিবার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ঘুরে দেখা গেছে, কাউন্টারে যাত্রীদের ভিড় তেমন ছিল না। যারা এসেছেন, তারা আগামী দুই-তিন বা চারদিন পরের টিকিট নিতে এসেছেন। তারা কাঙ্ক্ষিত যাত্রার টিকিট না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা বলেন, এসব দিনের টিকিট যে পাওয়া যাবে না তা কর্তৃপক্ষের আগেই জানানো উচিত ছিল। এ ছাড়া এদিন দেখা গেছে, লোকাল ও কমিউটার ট্রেনে সব ধরনের স্ট্যান্ডিং টিকিট ইস্যু বন্ধ রয়েছে। টিকিট ও মাস্ক ছাড়া কাউকে স্টেশনে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না।
কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার যুগান্তরকে বলেন, আমরা প্রথম দিন ২১ সেপ্টেম্বরের টিকিট বিক্রি করেছি। কাল (আজ) ২২ সেপ্টেম্বরের টিকিট বিক্রি করব। যাত্রীদের ভোগান্তি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অনেকে এসেছেন আন্তঃনগর ট্রেনের চলতি টিকিট বা ২০ তারিখের আগের টিকিট কাটার জন্য। ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট অনলাইনেই কাটতে হবে। তবে লোকাল-মেইল ও কমিউটার ট্রেনের ৫০ শতাংশ অর্থাৎ ছাড়কৃত সব টিকিটই কাউন্টার থেকে দেয়া হচ্ছে। মাসুদ আরও বলেন, কমলাপুর স্টেশনে প্রতিদিন ৩৬টি আন্তঃনগর ও ২০টি লোকাল মেইল ও কমিউটার ট্রেন আসছে এবং ছেড়ে যাচ্ছে। এসব ট্রেনের কিছু টিকিট অবিক্রীতও থাকছে।
টিকিট অবিক্রীত থাকছে অথচ যাত্রীরা বলছেন পাওয়া যাচ্ছে না- এ বিষয়ে জানতে চাইলে সংশ্লিষ্টরা জানান, অধিকাংশ যাত্রী কেবিন ও এসি চেয়ারের টিকিট খোঁজেন। না পেয়ে কেউ নন-এসি চেয়ারের টিকিটও নেন। কিন্ত সাধারণ সিটের টিকিট কেউ অনলাইন বা কাউন্টারে খোঁজ করেন না। এসব টিকিট অবিক্রীত থেকে যায়। এছাড়া নন এসি চেয়ারেরও কিছু টিকিট অবিক্রীত থাকছে।
সূত্রমতে, করোনাকালে (শনিবার পর্যন্ত) সারা দেশে ১০২টি আন্তঃনগর ও ৬০টি মেইল, লোকাল ও কমিউটার ট্রেন চলাচল করছে। ১৬ সেপ্টেম্বর আরও ২৮ জোড়া মেইল, লোকাল ও কমিউটার ট্রেন চালু করা হবে। চলমান আন্তঃনগর ট্রেনগুলোয় মোট ৩৭ হাজার টিকিট (৫০ শতাংশ হারে) বিক্রি হচ্ছে। কমলাপুর স্টেশন থেকে চলা ৩৬টি আন্তঃনগর ট্রেনের ২৫ শতাংশ হারে ৬ হাজার ৫১৬টি টিকিট কাউন্টার থেকে বিক্রি হবে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে সবচেয়ে আরামদায়ক ট্রেন সুবর্ণ এক্সপ্রেস। এ ট্রেনেও টিকিট অবিক্রীত থাকছে। ট্রেনটিতে মোট ৪৫৮টি সিট। এক সপ্তাহে কোনো দিনই শতভাগ টিকিট বিক্রি হয়নি। শনিবার ৪১৩টি, রোববার (১১ সেপ্টেম্বর) ৩৯৬টি, ১০ সেপ্টেম্বর ৩৪৫টি, ৯ সেপ্টেম্বর ৩৪০টি, ৮ সেপ্টেম্বর ৪৫১টি, ৬ সেপ্টেম্বর ৪১৭টি, ৫ সেপ্টেম্বর ৪০৮টি এবং ৪ সেপ্টেম্বর ৪১৯টি টিকিট বিক্রি হয়েছে। অন্য ট্রেনগুলোর চিত্রও একই।
চলমান ৬০টি মেইল, লোকাল ও কমিউটার ট্রেনে ৫০ শতাংশ হারে প্রায় ৯ হাজার টিকিট বরাদ্দ রয়েছে। গড়ে একটি ট্রেনে সাধারণ সময়ে ৩০০ আসন থাকে। করোনাকালে ১৫০টি বিক্রি হচ্ছে। আরও ২৮ জোড়া লোকাল, মেইল ও কমিউটার ট্রেন চালু হলে এ সংখ্যা বাড়বে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রেলওয়ের ঢাকা বিভাগীয় প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা শওকত জামিল মোহসী যুগান্তরকে বলেন, যাত্রীদের বলা উচিত- এসি-কেবিনের টিকিট পাচ্ছেন না, সাধারণ টিকিট তো অবিক্রীত থেকেই যাচ্ছে। তিনি বলেন, অনলাইনে বিক্রি না হওয়া টিকিট পাঁচদিন পর অর্থাৎ যাত্রার পাঁচদিন আগে থেকে কাউন্টারে চলে যায়। যাত্রীরা তাই ওই সময়ে কাউন্টার থেকেই টিকিট কাটতে পারবেন। অনলাইন তো আছেই। আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট সব সময়ই ১০ দিন আগে ছাড়া হয়।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ আনসার আলী জানান, শনিবার থেকে চট্টগ্রামের সঙ্গে চলাচলরত ১০ জোড়া আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট কাউন্টারে বিক্রি শুরু হয়েছে। ২৫ শতাংশ টিকিট কাউন্টার থেকে দেয়া হচ্ছে। প্রথম দিন স্টেশনে আসা সব যাত্রী টিকিট কাটতে পেরেছেন। লোকাল-মেইল ও কমিউটার ট্রেনের ৫০ শতাংশ চলতি টিকিট কাউন্টার থেকে দেয়া হচ্ছে। আমরা শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মেনে টিকিট বিক্রি করছি।
সিলেট ব্যুরো জানায়, শনিবার সকাল ৮টা থেকে সিলেট রেলওয়ে স্টেশন কাউন্টারে টিকিট বিক্রি শুরু হয়। সিলেট রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার মো. খলিলুর রহমান জানান, নির্দেশ অনুযায়ী আমরা ২৫ শতাংশ টিকিট বিক্রি করছি। আন্তঃনগর ট্রেনের সঙ্গে লোকাল মেইল ও কমিউটার ট্রেনের টিকিটও বিক্রি হচ্ছে।
সুত্রঃ যুগান্তর।