করোনা একটি বৈশ্বিক মহামারি। করোনার ভয়াল থাবায় সারা বিশ্ব আজ ক্ষতবিক্ষত,লন্ডভন্ড। বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর আমেরিকা আজ মৃত্যুপুড়িতে পরিণত হয়েছে। বিশ্বের তাবৎ ক্ষমতাধর দেশ যথা ফ্রান্স,বৃটেন,চীন,রাশিয়া,জার্মানী, ইটালি সহ উন্নত বিশ্বের দেশগুলো আজ করোনার কাছে অসহায় আত্মসমর্পন করেছে। করোনার প্রভাবে সারা বিশ্বের অর্থনীতি আজ চরমভাবে বিপর্যস্ত। ইতোমধ্যে বিশ্বের অনেক বড় বড় কোম্পানি বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সারা বিশ্বে কোটি কোটি কর্মজীবী মানুষ বেকার হয়ে পড়েছে।
বৈশ্বিক এই মহামারির প্রভাব পড়েছে আমাদের বাংলাদেশেও। তৃতীয় বিশ্বের ব্যপক জনসংখ্যা অধ্যুষিত এই দেশটি যখন শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছিল। নিন্মমধ্যবিত্ত থেকে মধ্যম আয়ের দেশে পা রাখতে যাচ্ছে ঠিক সেই সময় করোনা ভাইরাস এই নৃশংস আক্রমণ হেনেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গোপন রিপোর্টে আশংকা করা হয়েছে করোনার এই ভয়াল থাবায় বাংলাদেশে প্রায় বিশ লক্ষ মানুষের প্রাণহানি ঘটতে পারে। ষেখানে আমেরিকা,ইউরোপ সহ অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধশালী এবং আধুনিক পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধায় সমৃদ্ধ বিশ্বের বড় বড় দেশগুলো করোনা মোকাবেলায় ব্যর্থ হয়েছে সেই ধারণা থেকেই হয়ত অপেক্ষাকৃত অনেক দুর্বল বাংলাদেশের আর্থসামাজিক অবস্থার কথা বিবেচনা করেই হয়তো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই পুর্বাবাস দিয়েছিল।
বিশ্ব পরিস্হিতির আলোকে শেখ হাসিনা সরকার বৈশ্বিক এই মহামারি মোকাবেলা করার জন্য সবরকম পরিস্থিতির কথা চিন্তা করে যথা সম্ভব সবরকম প্রস্তুতি গ্রহণ করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক এই মহাদুর্যোগ মোকাবিলা করার জন্য দেশের সকল রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ সহ দেশের সকল স্তরের, সকল শ্রেণি পেশার মানুষের সহযোগিতা কামনা করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনা ভাইরাসকে একটি যুদ্ধ হিসাবে ঘোষণা করে এই যুদ্ধে সকলকে অংশগ্রহণ করার জন্য আহবান জানান। তিনি একাত্তরের মত দলমত নির্বেশেষে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে এই যুদ্ধে শরীক হওয়ার আহবান জানিয়ে এই বিজয়ী হওয়ার দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বাংলাদেশে করোনা বিরোধী এই যুদ্ধ গত দুইমাসের অধিককাল যাবৎ চলছে। এ সময়ের মধ্যে বাংলাদেশে এপর্যন্ত তিনশ’র অধিক মানুষ নিহত হয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ত্রিশ হাজার। করোনার প্রভাবে দেশে লক্ষ লক্ষ মানুষ বেকার হয়ে পড়েছে। বড় বড় মিল ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়ে গেছে। শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পুর্ণ ভেঙে পড়েছে। বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ বেকার হয়ে পড়েছে।
অর্থনৈতিকভাবে দ্রুত অগ্রসরমান বাংলাদেশে আকস্মিক এই করোনা ঝড়ে চরম এক বিপর্যয়ের সম্মুখীন। সরকার পরিস্থিতি মোকাবেলায় সম্ভাব্য সব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। অর্থনৈতিক সমুহ সমস্যার কথা বিবেচনা করে এক লক্ষ কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করেছে। বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের পোষাক রপ্তানি বাজার ধরে রাখার জন্য সীমিত আকারে গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি খোলার অনুমতি দিয়েছে। করোনায় আক্রান্ত মানুষদের চিকিৎসার জন্য যতটুকু করা সম্ভব ব্যবস্হা গ্রহণ করেছে। পর্যাপ্ত না হলে এখন পর্যন্ত চিকিৎসা সামাল দিতে সক্ষম হয়েছে। এইসব বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে বিশ্ব মিডিয়ায় শেখ হাসিনা সরকারের প্রসংশা করছে।
দেশ যখন এক ভয়াবহ সংকটের সম্মুখীন । যেখানে স্বয়ং বিশ্ব স্বাস্হ্য সংস্হা বিশ লক্ষ মানুষের জীবনহানির আশংকা ব্যক্ত করেছে। সেখানে আমাদের দেশের রাজনীতিবিদদের ভূমিকা খুবই হতাশাজনক। দেশের শতাধিক রাজনৈতিক দলের অস্তিত্বের কথা শুনা গেলেও সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও এর অংগ সংগঠন ছাড়া আর কারো কোন দৃশ্যমান কর্মকান্ড চোখে পড়ছে না। বিএনপির মাঝে মধ্যে দুই একটি ত্রাণের ফটোসেশন এবং বিবৃতি প্রদান ছাড়া এ পর্যন্ত আর তেমন কোন কর্মকান্ড চোখে পড়েনি। দেশে কোন বিরোধী দল আছে বলে দৃশ্যমান কিছু দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না।
মিডিয়া সর্বস্ব কিছু রাজনৈতিক দল, যারা সারা বছর মিডিয়ার মাধ্যমে মাঠ গরম করে রাখে তাদের চেহারাও আজ দেখা যায় না। সুশিল সমাজ নামিদামি যেসব বিশেষ ব্যক্তিরা সারাবছর চটকদার কথা বলেন, জাতিকে প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে অহরহ জ্ঞান দান করেন। টকশো’তে টিভির পর্দা গরম করে রাখেন তাদের ছায়াও জাতি আজ কোথাও দেখতে পাচ্ছে না। তারা এমনই হোম কোয়ারান্টাইনে আছেন গত দুইমাসের অধিককালেও তাদের কোয়ারান্টাইন শেষ হয়নি। কবে শেষ হবে তাও কেউ জানে না। জতি কখন তাদের দর্শন পাবে তাও কেউ বলতে পারছে না।
জাতি এই ক্রান্তিকালে সমগ্র জাতি যেখানে এগিয়ে আসা উচিত সেখানে একমাত্র শেখ হাসিনা ছাড়া আর কারো কোন মাথাব্যথা আছে বলে মনে হয় না। সার্বিক সবদিক বিবেচনা করে মনে হচ্ছে বাংলাদেশটাকে রক্ষার দায়িত্ব শেখ হাসিনার একার। আর কারো কোন দায় দায়িত্ব নেই। করোনা যুদ্ধে তিনি একাই লড়ছেন। তিনি সফলভাবে এই যুদ্ধে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ভয় নেই জননেত্রী শেখ হাসিনা। আপনি জাতির জনকের সুযোগ্য কন্যা। আপনি এগিয়ে যান। বঙ্গবন্ধুর ও এদেশের মানুষের দোয়া আছে আপনার সাথে।
লেখক : (সচিব, শিক্ষক কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্ট, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সাধারণ সম্পাদক, স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদ) – প্রেস রিলিজ