নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেছেন,গণমাধ্যম গঠনমূলকভাবে সমালোচনা করুক, এটাই আমি চাইতাম। তবে কেবল আমাকে ছোট করার জন্য বা আমি একজন নারী বলে আমাকে যা খুশি তাই বলবেন; সেটা মেনে নেবো না। আমি সেই তথাকথিত নারী না।
তিনি বলেন, এই শহরের পরিস্থিতি কেমন ছিল তা সবাই জানেন। আমি কোনো কিছুর ভয় না পেয়ে মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছি।
আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে ২০০৩ সালে পৌরসভার নির্বাচন করেছিলাম। ৮ বছর এই শহরের কাজ করে ’১১-তে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন করি। সে সময় নারায়ণগঞ্জবাসী আমার পাশে দাড়িয়েছিল। আমিও তাদের জন্য কাজ করছি।
এই সিটির মেয়র হওয়া আমার উদ্দেশ্য ছিল না। উদ্দেশ্য ছিল জনসেবা। পত্রিকাগুলো আমার বিরুদ্ধে যখন লিখতো তখনও আমি কিছু মনে করতাম না।
আজ সোমবার (১৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নগরভবনের সম্মেলন কক্ষে এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।
অনুষ্ঠানে নারায়ণগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের মাঝে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ বই উপহার হিসেবে প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডের কমান্ডার শাহ্জাহান ভূইয়া জুলহাস, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদ কমান্ডের আহ্বায়ক শরীফ উদ্দিন সবুজ, সিদ্ধিরগঞ্জের সফর আলী স্কুল এন্ড কলেজের চেয়ারম্যান জাকিয়া আলী ভূইয়া। অনুষ্ঠানে সঞ্চালনা করেন দৈনিক সংবাদের চীফ রিপোর্টার সালাম জুবায়ের।
এ সময় মেয়র আইভী আরো বলেন, মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা বংশানুক্রমে আওয়ামী লীগের হয়ে গেছে। আবার বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা। আমি কিন্তু ছোটবেলা থেকেই আওয়ামী লীগ।
বিএনপি, জামাত কীভাবে করবো? আমরা তো জন্মের পর থেকেই শুনি জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু। আমাকে চাইলেও জামাত-বিএনপি বানাতে পরবে না।
আমি চিন্তা করি নাই আমি মেয়র হবো কিন্তু আমার টার্গেট ছিল আমি দেশের সেবা করবো। আমার বাবাকে যেদিকে গেছেন আমিও সেদিকে যাবো। আমি কিন্তু চেয়ারম্যান হয়েই থেমে যেতে পারতাম।
২০১১ সালে পদ ছেড়ে চলে যেতে পারতাম। আমি চাইলে উন্নত দেশে স্বামী, সন্তান নিয়ে আরামে বাস করতে পারতাম। তা না করে পাসপোর্ট জমা দিয়ে আমি ফিরে আসি।
আমি যাইনি আমার শহরের টানে, এই মানুষের টানে। আমি এই শহরে ভেসে আসিনি। আমার পৈত্রিক বাড়ি এই নারায়ণগঞ্জ।
আমি আমার নারায়ণগঞ্জের অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে আমি কথা বলবোই। নারায়ণগঞ্জের মানুষকে বলতে হবে, আমি নারায়ণগইঞ্জা।
তিনি বলেন, অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলতে আপনারাই সাহস জুগিয়েছেন। অনেকেই বলেছেন, তুমি করো, বলো আমরা তোমার পাশে আছি।
আপনাদের দোয়া, উৎসাহ, সহযোগিতা সব কিছু মিলিয়ে আজ আমি আইভী। আমি একার আইভী না।
আমার সাহস ছিল না, আপনারা আমাকে সাহস দিয়েছেন। আপনারা আমাকে পথ দেখিয়েছেন আর আমি কাজ করেছি।
অনেক অভিযোগ আমাকে শুনতে হয়েছে। তবে আমি আমার জায়গায় অটল ছিলাম। যত কথাই বলো না কেন, আমি সেই ঘোমটা পড়া নারী না যে কিছু বললেই লজ্জায় ঘরে ঢুকে যাবো।
আমি যখন এসেছি তখন চিন্তাভাবনা করেই এসেছি। যত কথাই বলো না কেন, এখান থেকে পিছ পা হবো না। আমি আর দশজন পুরুষের সঙ্গে সমান তালে তাল মিলিয়ে কাজ করে যাবো। তোমাদেরও তাই করতে হবে।
আইভী বলেন, আগে একটা প্রচলন ছিল, নারায়ণগঞ্জের মানুষ পড়াশোনা করতো না। বাপ-দাদার ব্যবসা ছিল। সেই ব্যবসায় গিয়ে বসে পড়তো। আর মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দিতো।
আমরা শিক্ষায় পিছিয়ে ছিলাম। কিন্তু এখন গর্ভের সঙ্গে সব জায়গায় বলি, আমার জেলার লোকজন অনেক লেখাপড়া করে।
আমি সব সময় বলি, মাছের মাথাটা শুধু ছেলেকে নয় মেয়েকেও দেবেন। একজন মেয়ে তার বাবা-মায়ের জন্য অসম্ভব দরকার। মেয়ে যেখানেই থাকুক না কেন সে তার বাবা-মায়ের প্রয়োজনে ছুটে আসে।
তাই মেয়েকে ছেলের মত করে গড়ে তুলুন। এর জ¦লন্ত উদাহরণ আমি। নাড়ির টানে আমি আমার সবকিছু ছেড়ে চলে এসেছিলাম।
মেয়র আইভী বলেন, একটা বিতর্কের অবসান ঘটিয়েছেন বঙ্গবন্ধু তার আত্মজীবনীতে। আমরা প্রায়ই বলে থাকি নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের জন্ম। বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনীতে নারায়ণগঞ্জের কথা বলেছেন।
সেদিন পাইকপাড়ায় বঙ্গবন্ধু যান এবং সে এলাকার বাসিন্দারা তাকে বলেন, আমরা আপনার পাশে আছি এবং আপনাকে সুরক্ষা করবো।
সেই পাইকপাড়ায় মিউচুয়াল ক্লাবে সেদিন মিটিং হয়েছিল। কমিটি নির্ধরাণ হয়েছিল। পরে তা আনুষ্ঠানিকভাবে রোজ গার্ডেনে ঘোষণা করা হয়েছিল।