ভালো ফলাফলের লক্ষ্যে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে অপ্রয়োজনীয় ব্যয় এড়াতে এবং কৃচ্ছ্রতা বজায় রাখতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো আরো সতর্ক থাকতে হবে, বলেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
তিনি বলেন, ‘আমরা সকলেই একমত হয়েছি যে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে আমাদের কেবল কোভিড-১৯ পরিস্থিতি নয়, সর্বদা কৃচ্ছ্রতা বজায় রাখতে হবে এবং অপ্রয়োজনীয় ব্যয় এড়াতে হবে। এটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।’
পরিকল্পনামন্ত্রী আজ নগরীর শেরে বাংলা নগর এলাকায় এনইসি সম্মেলন কক্ষে গত অর্থবছরের (অর্থবছর ২০) আরএডিপি বাস্তবায়নের অগ্রগতি পর্যালোচনা এবং চলতি অর্থবছরের (অর্থবছর ২১) এডিপি বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদানের লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সভাপতিত্বের পর সাংবাদিকদের ভার্চ্যুয়ালি ব্রিফিং করছিলেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব এবং প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিবসহ মোট ২৯ জন সচিব বৈঠকে অংশ নেন।
মান্নান বলেন, বৈঠকে গত অর্থবছরের আরএডিপি বাস্তবায়নের বিভিন্ন দিক এবং গত বছর থেকে অভিজ্ঞতা নিয়ে সেগুলো চলতি বছরে কাজে লাগানোর বিষয়ে আলোচনা করা হয়।
তিনি বলেন, সচিবরা বিভিন্ন বিষয় উত্থাপন করেন এবং পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা তাদের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, বৈঠকে প্রকল্প ব্যয় এবং বিদেশ ভ্রমণ, সাজসজ্জা, আতিথেয়তা বিল এবং যানবাহন ক্রয়ের মতো অন্যান্য সম্পর্কিত ব্যয়ের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন সময় তহবিলের অপব্যবহার এবং অপ্রয়োজনীয় ব্যয়কে ‘অগ্রণযোগ্য’ হিসাবে সতর্ক করেছেন। তিনি প্রকল্পের অত্যধিক সংশোধনকে নিরুৎসাহিতও করেন।
মান্নান যোগ করেন, ‘প্রধানমন্ত্রী এবং আমরাও মনে করি যে প্রকল্পের অত্যধিক সংশোধন একটি রুটিন হয়ে উঠতে পারে না।’
কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার ওপর আরো জোর দিয়ে তিনি বলেন, জাতীয় পরিকল্পনা ও উন্নয়ন একাডেমি (এনএপিডি) প্রশাসন ক্যাডার ছাড়া বিশেষত বিভিন্ন ক্যাডার থেকে আগত কর্মকর্তাদের দক্ষতা ও কর্মক্ষক্ষতা বাড়ানোর জন্য ক্র্যাশ কর্মসূচির মাধ্যমে তাদের প্রশিক্ষণ দেবে।
মান্নান বলেন, সচিবদের তাদের মন্ত্রণালয় এবং বিভাগগুলোর পক্ষ থেকে এ বিষয়টি নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে যে প্রকল্প পরিচালকরা একাধিক প্রকল্পের দায়িত্বে থাকবেন না এবং তারা প্রকল্পের সাইটে অবস্থান করবেন।
তিনি বলেন, আমরা সকলেই এ বিষয়ে একমত হয়েছি।
চলমান বন্যা অবকাঠামো ও অন্যান্য খাতকে কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বন্যা চলে যাওয়ার পর সবাইকে একটি দল হিসাবে দ্বিগুণ মনোবল নিয়ে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে।
তিনি বলেন, ‘দয়া করে সবাই মনে রাখবেন যে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় কোরো সুপার মন্ত্রণালয় নয়। আমাদের কেবল অন্যের দোষ খোঁজার মানসিকতা নেই ’(ত্রুটি)। আমাদের সকলকে সহযোগিতা, সমন্বয় ও সংহতির মাধ্যমে কাজ করতে হবে।’
গত অর্থবছরে (অর্থবছর ২০) তুলনামূলকভাবে এডিপি বাস্তবায়নের হার মাত্র ৮০ শতাংশের কিছু বেশি হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, সরকার আগে ভেবেছিল, গত অর্থবছরের শেষ ভাগে বাস্তবায়নের হার বাড়বে, কিন্তু এরপর করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হয়।
তিনি বলেন, অবশ্য দেশের অর্থনীতির মূল স্তম্ভ কৃষিতে কোভিড-১৯ প্রভাব ফেলেনি এবং অনেকের আশংকাকে দূরে ঠেলে রেমিট্যান্স প্রবাহেও তেমন কোনো ধস নামেনি।
মান্নান বলেন ‘বরং, অভ্যন্তরীণ রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং নতুন বাজারের অনুসন্ধানের পাশাপাশি ক্রেতারা আবার ফিরে আসতে শুরু করেছেন।’
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রকল্প তহবিল সাধারণ মানুষের তহবিল এবং তহবিলের কোনো অপব্যবহার মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। ‘সরকার সর্বদা এর ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়। কোভিড -১৯ পরিস্থিতি হোক বা না হোক, সরকারি তহবিলের অপব্যবহার বা অযথা ব্যয় করা যায় না।’
মান্নান আরো বলেন, পরিকল্পনা কমিশন এখন থেকে নতুন উন্নয়ন প্রকল্প গঠনের আগে আরো কঠোর হবে এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণলয় ও বিভাগগুলোও কোনো প্রকল্প হাতে নেওয়ার সময় আরো সতর্ক হবে।
উন্নয়ন প্রকল্পগুলিতে অতিরিক্ত প্রাক্কলন এবং তহবিলের অপব্যবহার সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বৈঠকে সংশ্লিষ্ট সচিবদের বিষয়টি কঠোরভাবে নিষ্পত্তি করতে বলা হয়েছে এবং পরে সচিবরা তা করার আশ্বাস দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, আগামী দিনগুলোতে আপনারা এর একটি জোরালো প্রতিফলন দেখতে পাবেন।’
পরিকল্পনামন্ত্রী গণমাধ্যমকে উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে কথিত অনিয়মের তথ্য ও পরিসংখ্যান নিয়ে আসার পরামর্শ দেন এবং প্রতিটি ঘটনা খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেন।
– বাসস