নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেছেন, কোনো প্রার্থীর প্রার্থিতা সরাসরি বাতিলের একক ক্ষমতা থেকে সরে আসা নির্বাচন কমিশনের একটি আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত।
কোনো প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতা এককভাবে সরাসরি নির্বাচন কমিশনের কাছে থাকা আবশ্যক। প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতা নির্বাচন কমিশন থেকে ছিনিয়ে নেয়া হলে নির্বাচন কমিশন নখদন্তহীন বাঘ নয়, বিড়ালে পরিণত হবে। আজ সোমবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি জানান, সোমবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদার সভাপতিত্বে আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে ইসির ৬৯তম কমিশন সভা অনুষ্ঠিত হয়। তিনটি বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ চার নির্বাচন কমিশনারের কাছে তিনি লিখিতভাবে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছেন।
তিনি সেখানে বলেন, ‘আমি সবিস্ময়ে লক্ষ্য করেছি, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় ইতোপূর্বে ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২’ রহিত করে ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আইন ২০২০ বিল-এর খসড়া আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। আইন মন্ত্রণালয়ের মতে এই প্রস্তাবে ১১টি মৌলিক ও পদ্ধতিগত বিধান বাদ দিয়ে খসড়াটি ওই মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।’
ইসি কমিশনার বলেন, “এতে সবচেয়ে আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে, আরপিও বা ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ -এর ৯১-ই ধারায় কোনো প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিলের সরাসরি ক্ষমতা, যা নির্বাচন কমিশনের কাছে ন্যন্ত ছিল, তার বিলোপ সাধন। এই ধারাটি সব রাজনৈতিক দলের সম্মতিতে আরপিওতে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছিল”
তিনি বলেন, ‘রকিবউদ্দীন কমিশন এটি বাতিলের উদ্যোগ নিয়ে চরম সমালোচনার মধ্যে পড়ে এবং পরে ওই উদ্যোগ থেকে সরে আসে। প্রার্থিতা সরাসরি বাতিলের একক ক্ষমতা থেকে সরে আসা নির্বাচন কমিশনের একটি আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত বলে মনে করি। এতে নির্বাচন কমিশন নখদন্তহীন বাঘ নয়, বিড়ালে পরিণত হবে। আমি এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জ্ঞাপন করছি। আমার মতে প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতা এককভাবে সরাসরি নির্বাচন কমিশনের কাছে থাকা আবশ্যক।’
মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচন পরিচালনা আইনের যে সংস্কারের যে প্রস্তাব করেছে, আমি তার সঙ্গেও একমত নই। কেবল নির্বাচন পরিচালনার জন্য ভিন্ন আইন হতে পারে না, তা সার্বজনীন হবে হবে। বিশেষত স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন পদ ও পদবি পরিবর্তন নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ার নয়। এই সংস্কার কার্যক্রম নিতান্তই স্থানীয় সরকারের বিষয়। বর্ণিত অবস্থায় আমি উল্লিখিত তিনটি বিষয়ে ভিন্নমত পোষণকরে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছি।” মি. তালুকদার বলেন, “নির্বাচন কমিশনের ২৪ আগস্ট ২০২০ তারিখের ৬৯তম সভায় স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচন পরিচালনা আইনের খসড়া অনুমোদনের জন্য পেশ করা হয়েছে। এই খসড়ায় গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ রহিত করে সংশোধনসহ ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আইন, ২০২০’ প্রতিস্থাপনের প্রস্তাব করা হয়েছে। আমি এই উদ্যোগের সম্পূর্ণ বিরোধিতা করি।