দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার মুকুন্দপুর মডেল কিন্ডারগার্টেন স্কুলে শিক্ষকতা করে সংসার চালাচ্ছিলেন জাহেদুল ইসলাম। স্বল্প আয়ে সন্তানদের নিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন তিনি। স্কুলের বেতনের পাশাপাশি সংসারের ব্যয় মেটাতে অতিরিক্ত সময় শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়িয়ে চলত তার সংসার। কিন্তু করোনার কারণে গত ৬ মাস ধরে স্কুলের বেতন বন্ধ। নেই সরকারি সহায়তা। এতে নিদারুণ কষ্টে কাটছে তার জীবন। বর্তমানে তিনি রংমিস্ত্রীর কাজ করেন।
বিরামপুর কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যমতে, উপজেলায় ৪৫টি কিন্ডারগার্টেনে প্রায় ৩ হাজার শিক্ষার্থী পড়াশুনা করছে। স্কুলগুলোতে শিক্ষক-কর্মচারি রয়েছেন ৪৫০ জন। তারা সবাই দূরাবস্থার মধ্যে পড়েছেন। শিক্ষক,কর্মচারিরা এখন পর্যন্ত কোনো সরকারি সহায়তা বা কোনো সুযোগ-সুবিধা পাননি।
সরেজমিনে উপজেলার বেশ কিছু স্কুল ঘুরে দেখা গেছে,শিক্ষার্থীদের পদাচরণ না থাকায় বিদ্যালয় মাঠে ঘাসগুলো বেশ বড় হয়েছে। অনেক বিদ্যালয়ে বারান্দায় আবার জালসে ধরে গেছে। কিছু বিদ্যালয়ের ঘরগুলোর মেঝে কাঁচা হওয়ায় শিক্ষার্থীদের বসার বেঞ্চগুলোতে ধরেছে উঁইপোকার আক্রমণ। সব মিলে বিদ্যালয়গুলো এক ভূতুড়ে পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।
জাহেদুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, স্কুলের বেতন আর শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়ে সংসার চলত। কিন্তু গত ছয়মাস বেতন বন্ধ, বন্ধু-বান্ধব আত্মীয় স্বজনদের কাছ থেকে ধারদেনা করে সংসার চালিয়ে আসছি। মাঝে মাঝে মানুষের জমিতে ধান রোপণ করার কাজও করেছি। কিন্তু এখন ধার চাইতেও লজ্জা লাগে। দোকানেও অনেক বাকি পড়ায় দোকান মালিকও কথা শোনায়। তিনি বলেন, সংসারে কষ্ট ছিল। কিন্তু এমন সমস্যায় পড়তে হবে ভাবতেও পারিনি। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন স্থানে রংমিস্ত্রীর কাজ করছি।
মঞ্জুরুল ইসলাম নামের আরেক শিক্ষক জানান, কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর পড়াশোনার পর মেধাবিকাশ স্কুলে শিক্ষকতার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়িয়ে সংসার চলাতেন। অভিভাবকরা করোনার ভয়ে প্রাইভেট পড়াচ্ছেন না। তিনি বলেন, ছয় মাস কষ্ট করলাম আর কত কষ্ট করতে হবে কে জানে। মালিকপক্ষ শুধু ধৈর্য্য ধরতে বলছেন।
শিক্ষকরা বলছেন, আগামী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত সরকারি নির্দেশনা থাকায় বিদ্যালয়গুলো খোলা সম্ভব হচ্ছে না। এতে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের বেতন বন্ধ করে দিয়েছেন। বিদ্যালয়গুলোর বন্ধ যদি দীর্ঘায়িত হয় তাহলে এই কষ্ট দিগুণ হবে।
রোজগার্ডেন স্কুলের পরিচালক মো. আমিনুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ওই বিদ্যালয়ে মোট শিক্ষক রয়েছেন ১৩ জন। তাদের মাসিক বেতন পরিশোধ করতে ৪৯ হাজার টাকা দরকার হয়। শিক্ষকদের গত মার্চ মাসের বেতন পরিশোধ করা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু অভিভাবকরা মাসিক বেতন বন্ধ করায় আর শিক্ষকদের বেতন পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি।
বিরামপুর উপজেলা কিন্ডারগার্টেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো.মাহাবুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, মার্চ মাস থেকে দেশের সকল কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলো বন্ধ থাকায় অভিভাবকদের কাছ থেকে বেতন আদায় করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু বিদ্যালয়গুলো ঘরভাড়া নিয়মিত পরিশোধ করতে হচ্ছে। সরকারি সহায়তা না পেলে শিক্ষকদের হাহাকার আরও বাড়বে।
বিরামপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার পরিমল কুমার সরকার কালের কণ্ঠকে বলেন, কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোর নামে সরকারি কোনো বরাদ্ধ এখন পর্যন্ত আসেনি। যদি আসে সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সূত্র:কালের কন্ঠ