এ বছর বিশ্বের অনুপ্রেরণাদায়ী ও প্রভাবশালী ১০০ নারীর তালিকা প্রকাশ করেছে বিবিসি। করোনাভাইরাস মহামারির এই সময়ে নিজ নিজ ক্ষেত্রে ভিন্নধর্মী অবদানের জন্য তাঁদের এই তালিকায় রাখা হয়েছে। তালিকায় রয়েছেন বাংলাদেশের দুই নারী। তাঁরা হলেন রিনা আক্তার ও রিমা সুলতানা।
তালিকায় ৬ নম্বরে রয়েছেন রিনা আক্তার। ৮ বছর বয়সে রিনাকে তাঁর এক স্বজন যৌনপল্লিতে বিক্রি করে দেন। সেখানেই তিনি বেড়ে ওঠেন। যৌনকর্মী রিনা অন্য যৌনকর্মীদের জীবনমান উন্নয়নে সহায়তা করেছেন। করোনা মহামারির সময় রিনা ও তাঁর সহায়তাকারীরা কাজ হারানো যৌনকর্মীদের খাবারের বন্দোবস্ত করেন। সপ্তাহে তিনি ৪০০ জনের খাবার সরবরাহ করেন। এসব খাবারের মধ্যে ছিল ভাত, সবজি, ডিম ও মাংস।
বিবিসির খবরে জানা যায়, রিনা বলেন, ‘যৌনকর্মীরা যাতে ক্ষুধার্ত না থাকেন, আমি সেই চেষ্টা করেছি। তাঁদের সন্তানেরাও যেন এ কাজ করতে বাধ্য না হয়, সেই চেষ্টা করেছি।’
রিনা আক্তার যৌনকর্মীদের সংগঠন দুর্জয় নারী সংঘের সাংগঠনিক সম্পাদক। আর যৌনকর্মী সংগঠনগুলোর জোট সেক্স ওয়ার্কার্স নেটওয়ার্ক অব বাংলাদেশের সদস্য।
প্রভাবশালী নারীর তালিকায় আরেক বাংলাদেশি নারী হলেন রিমা সুলতানা। তিনি কক্সবাজারে ইয়ং উইমেন লিডারস ফর পিসের সদস্য। এটা যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক নারী অধিকার সংগঠন গ্লোবাল নেটওয়ার্ক অব উইমেন পিসবিল্ডার্সের কর্মসূচির অংশ। সংঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর নারীদের উন্নয়নে কাজ করছে এই সংস্থা।
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মানবিক উন্নয়নে কাজ করছেন রিমা। তিনি রোহিঙ্গা শরণার্থী বিশেষ করে নারী ও মেয়েশিশুদের শিক্ষা নিয়ে কাজ করছেন। তিনি রোহিঙ্গা নারী ও শিশুদের শিক্ষা নিয়ে কাজ করেন।
রিমা বলেন, ‘আমি বাংলাদেশে লিঙ্গসমতা প্রতিষ্ঠা করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আমি অধিকার আদায়ে নারী ও মেয়েশিশুদের ক্ষমতায়নে বিশ্বাসী। আমরা উন্নতি করব।’
করোনায় আক্রান্ত এ বিশ্ব এক অস্বাভাবিক পরিস্থিতির মধ্যে আছে। বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন নারী লড়াই করে যাচ্ছেন পরিবর্তিত এ পরিস্থিতির সঙ্গে। বিবিসির তালিকায় অগণিত নারীকে শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে। তালিকার প্রথম স্থানটি রাখা হয়েছে তাঁদের স্বীকৃতি দিতে। এর নামকরণ করা হয়েছে ‘আনসাং হিরো’।
যৌনকর্মীরা যাতে ক্ষুধার্ত না থাকেন, আমি সেই চেষ্টা করেছি। তাঁদের সন্তানেরাও যেন এ কাজ করতে বাধ্য না হয়, সেই চেষ্টা করেছি।
১০০ নারীর তালিকায় আরও রয়েছেন ইথিওপিয়ার ফুটবলার লোজা আবেরা জেইনোরে, মরক্কোর র্যাপার হুদা আবুজ। এ ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে ভারতের চারজন, পাকিস্তানের দুজন, আফগানিস্তানের দুজন এবং নেপালের একজন নারী রয়েছেন।
ভারতের বিলকিস বানু (৮২) বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করেন। আছেন আফগানিস্তানের রোবোটিকস টিমের নেতা সোমা ফারুকি। তিনি করোনাভাইরাসে সংক্রমিত রোগীদের চিকিৎসায় কম খরচে ভেন্টিলেটর তৈরির কাজে যুক্ত ছিলেন। তালিকায় আছেন ভারতের সংগীতশিল্পী ইসাইবানি। আছেন ভারতের অ্যাথলেট মানসি যোশি।
যুক্তরাজ্যের বিজ্ঞানী সারাহ গিলবার্টও রয়েছেন প্রভাবশালী ১০০ নারীর তালিকায়। করোনাভাইরাসের টিকা তৈরিতে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করেছেন সারাহ ও তাঁর দল।
ফিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সানা মারিনও রয়েছেন ১০০ প্রভাবশালী নারীর তালিকায়। রয়েছেন পাকিস্তানের জনপ্রিয় অভিনেত্রী মাহিরা খান। যৌনসহিংসতার বিরুদ্ধে সোচ্চার মাহিরা।
লেবাননের নারী আন্দোলনকর্মী, সাংবাদিক হায়াত মিরশাদও রয়েছেন এই ১০০ নারীর তালিকায়।
বিবিসির বিভিন্ন ভাষার নেটওয়ার্ক টিমের সমন্বয়ে নামের এই তালিকা করা হয়। সেখানে যেসব নারীদের কাজ নিয়ে বছরের আলোচিত খবর হয়েছে সেগুলো প্রাধান্য পায়। খবরে না আসা নারীদেরও তুলে ধরা হয়।
সূএ: বিবিসি