এম এ হোসাইন
গত দুই দশকে, ভারত মহাসাগর কে ঘিরে ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এক গভীর পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। যে চীন একসময় ভারত মহাসাগরকে ‘দূর সাগর’ হিসাবে দেখতো, আজ তারাই পূর্ব এশিয়ায় তার প্রভাব বৃদ্ধি করে ইউরোপ পর্যন্ত তার প্রসার ঘটাচ্ছে। ভারত মহাসাগরে, ভারত একটি প্রভাবশালী সামুদ্রিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এদিকে ভারতকে আটকাতে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী চীন আফগানিস্তান, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, নেপাল, শ্রীলংকা এবং মিয়ানমার সহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। দক্ষিণ চীন সাগরে, চীনের শক্তিশালী উপস্থিতির সাথে দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়ায় চীনের ভূ-কৌশলগত পদক্ষেপ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে তার ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তারের জন্য কেবলমাত্র বঙ্গোপসাগরের থিয়েটারটিই খোলা রয়েছে।
গত অর্ধ শতাব্দী থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশগুলো প্রাথমিকভাবে মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকার দিকে মনোনিবেশ করেছিল। ঐ সকল অঞ্চলে তাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে আমরা প্রায়শই কঠোর কৌশল অবলম্বন করতে দেখেছি। যেমন: শাসক পরিবর্তন, ভয়-ভীতি প্রদর্শন, কিছু ক্ষেত্রে সম্ভাব্য হুমকি কে সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় করা ইত্যাদি। তার বিপরীতে, চীন পূর্ব এবং দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে “নরম শক্তি” কৌশল অবলম্বন করে সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটিয়েছে। যার মধ্যে ছিল কোন দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করে দেশটির অর্থনৈতিক ও অবকাঠামো উন্নয়নে অংশীদার হওয়া। যাই হোক, এই নতুন শতাব্দীর সূচনা লগ্ন থেকে, চীন তার “গো গ্লোবাল” প্রচেষ্টার সাথে সঙ্গতি রেখে দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়ার সাথে তাদের সম্পর্ক আরো সম্প্রসারিত ও গভীরতর হতে শুরু করে।
এই রূপান্তর মূলক পরিবর্তন বেইজিংকে এমন এক সময়ে ওয়াশিংটনের এর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য একটি শক্তিশালী অবস্থানে রেখেছে যখন ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশগুলি ক্রমবর্ধমানভাবে চীনের দিকে ঝুঁকছে। ফলস্বরূপ, বঙ্গোপসাগর বিশেষ করে বাংলাদেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূ-কৌশলগত অবস্থান হিসেবে স্থান পেয়েছে।
গত দুই দশক ধরে, দক্ষিণ এশিয়ায় ওয়াশিংটনের অগ্রাধিকার গুলি আফগানিস্তানের সংঘাতের দ্বারা উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত হয়ে আসছিল। একই সঙ্গে, এশিয়া-প্যাসিফিক পরে ইন্দো-প্যাসিফিকের ভূ-রাজনীতিতে নয়া দিল্লির সঙ্গে একটি কৌশলগত অংশীদারিত্ব গড়ে উঠছিল। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পই প্রথম ওয়াশিংটনের “ফ্রি এন্ড ওপেন ইন্দো-প্যাসিফিক” ভিশন প্রবর্তন করেন। ওয়াশিংটনের ইন্দো প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি(আই, পি, এস)চীনকে অবরোধ করার লক্ষ্যে মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোটের সূচনা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। কিন্তু চীনের ‘নরম শক্তি’ কৌশলের কাছে ইন্দো-প্যাসিফিক উপকূলবর্তী দেশগুলো অনেকটা নির্ভরশীল বা খাঁচাবন্দী হয়ে পড়েছে।
ভারতের প্রভাব রোধে এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে কৌশলগত সুবিধা অর্জনের লক্ষ্যে চীনের “স্ট্রিং অফ পার্লস” কৌশলটি উল্লেখযোগ্য সাফল্য এনে দিয়েছে। এই কৌশলের অংশ হিসাবে পাকিস্তানের গোয়াদর, শ্রীলংকার হাম্বানটোটা, এবং মিয়ানমারের কিয়াউক পিউ এর মত সমুদ্র বন্দরে চীনের অবকাঠামো প্রকল্প উন্নয়ন উল্লেখযোগ্য। চীনের সাথে উত্তর কোরিয়া, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, মালদ্বীপ, বাংলাদেশ, এবং মিয়ানমারের কৌশলগত সম্পর্ক মার্কিন ও ভারতের ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে তাদের ভূ-কৌশলগত যে কোন পদক্ষেপ কে সফল ভাবে ভারসাম্য রক্ষা করছে। বেইজিং নয়া দিল্লীকে বাধ্য করেছে তার পূর্ব এশিয়ায় প্রভাব বিস্তারের পরিবর্তে প্রতিবেশীদের জন্য সময় ও সম্পদ ব্যবহার করতে। পরবর্তীতে, ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) সরকার প্রতিবেশী দেশগুলোতে চীনের ভূমিকা প্রতিস্থাপন করতে পারেনি। এ কারণেই, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে ওয়াশিংটনের আধিপত্য এখন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। তাই, এই অঞ্চলে মার্কিনীদের শক্তিশালী উপস্থিতি প্রতিষ্ঠায় আরো কঠোর ও তড়িৎ পদক্ষেপ সহকারে বঙ্গোপসাগর কে প্রধান থিয়েটার হিসাবে গন্য করা হচ্ছে।
প্রতিক্রিয়া হিসেবে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই অঞ্চলের প্রতি তার ভূ-কৌশলগত পদ্ধতির পুনর্মূল্যায়ন করেছে যাতে মিত্র দেশের সরকার গুলোকে প্রভাবিত করার পরিবর্তে জনগণের সাথে সম্পৃক্ততা বৃদ্ধির বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে। যদিও, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিজেপিকে তার চোখে চীনকে দেখাতে চেয়েছিল এবং বিজেপিও তার চোখে যুক্তরাষ্ট্রকে ইন্দো-প্যাসিফিক জাতিগুলোকে দেখাতে চেষ্টা করেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত, ওয়াশিংটন বিজেপির কাছ থেকে কোন ভূ- রাজনৈতিক সুবিধা অর্জন করতে পারেনি। যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এশিয়ায় চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই নিযুক্ত ছিল এবং সন্ত্রাসবাদীর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য সেই দেশগুলির সক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা করছিল, সেই সময়ে চীন ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের জাতিগুলোর সাথে অর্থনৈতিক সহযোগিতা, স্বল্প মূল্যের বাজার সৃষ্টি এবং জনগণের সাথে সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি করছিল।
ভারতের রাশিয়ার সাথে ঐতিহাসিক সম্পর্ক, তার নিরপেক্ষ জোটের সদস্যপদ এবং সর্বোপরি ব্রিকস এর সম্প্রসারণ রোধের ব্যর্থতা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বিরক্ত করেছে। গত জি-২০ সম্মেলনে, ভারত কর্তৃক রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব না করে কূটনীতিক ভারসাম্যপূর্ণ ঘোষণা ওয়াশিংটন কে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বেশ বেকায়দায় ফেলে দিয়েছিল। তদুপরি, ভারতের আভ্যন্তরীণ সমস্যা, যেমন বিজেপির মানবাধিকার লংঘন ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা হরণের জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে অংশীদারিত্বমূলক পদক্ষেপ এর ক্ষেত্রে ওয়াশিংটন কে পুনঃ বিবেচনা করতে বাধ্য করছে। ভারতের দুই দিকে চীন এবং রাশিয়ান ব্লকের অবস্থান, তার দুর্বলতাকে আরো স্পষ্ট করে তুলেছে।
বাংলাদেশ, ভারত ও মিয়ানমারের সাথে সীমানা ভাগ করা দক্ষিণ এশিয়ার একটি দেশ, যে সৃষ্টির পর থেকে সকলের সাথে ভারসাম্যপূর্ণ পররাষ্ট্র নীতি বজায় রেখেছে। এ পর্যন্ত বাংলাদেশ ভারত, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সাথে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখেছে। কিন্তু গত এক দশক ধরে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন এজেন্ডদের সাথে চীনের বিলিয়ন ডলারের বহু প্রকল্পের প্রস্তাবনা মিলে যায়। এটি মার্কিন নীতি নির্ধারকদের উদ্বিগ্ন করে তুলে এবং বাংলাদেশে চীনের ব্যাপক প্রভাব হিসাবে চিহ্নিত করে। তদুপরি, সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের জন্য চীনের কাছে শেখ হাসিনার প্রস্তাবটি ভারত, জাপান এবং যুক্তরাষ্ট্রকে সন্ধিহান করে তুলে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মতে, তার সরকার ওয়াশিংটনের বঙ্গোপসাগরে একটি নৌ ঘাটি স্থাপনের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায়, পশ্চিমা শক্তিগুলোর মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। তাছাড়া আরাকান বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের সাথে হাসিনা সরকারের অবস্থানের ভিন্নতা দুই দেশের মধ্যে দূরত্ব আরো বৃদ্ধি করেছে।
চীনের প্রতি বিজেপির দৃষ্টিভঙ্গিতে ওয়াশিংটন অসন্তুষ্ট। বারাক ওবামা যখন ভারতের অখন্ডতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন তার মানে ওয়াশিংটন দক্ষিণ এশিয়ার প্রতি রূঢ় এবং দৃঢ় অবস্থান নিচ্ছে। হরদীপ সিং হত্যার জন্য বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে মার্কিন সমর্থিত ক্যানাডিয়ান সরকারের অভিযোগ ভারতের সাথে পশ্চিমা শক্তিগুলোর কূটনৈতিক সম্পর্ককে তিক্ত করে তুলেছে। ভারত যদি অভ্যন্তরীণ সমস্যায় ব্যস্ত হয় তাহলে সে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে মাথা ঘামাতে পারবে না। চীনকে ঠেকাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আরাকানে একটি স্বাধীন এবং পুতুল সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চায়।
ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চীন সবসময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে এক ধাপ এগিয়ে রয়েছে। অর্থনৈতিক এবং সামরিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে চীন ও মিয়ানমারের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক অত্যন্ত উষ্ণ। রোহিঙ্গা সংকটের মাধ্যমে মিয়ানমারে চীনের প্রভাব আরো স্পষ্ট। চীন রোহিঙ্গা মুসলিমদের সম্ভাব্য হুমকি হিসাবে বিবেচনা করে। মিয়ানমারে সামরিক জান্তা ব্যাপক নাগরিক বিক্ষোভ, জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সশস্ত্র প্রতিরোধ এবং ন্যাশনাল ইউনাইটেড গর্ভমেন্ট (এন, ইউ,জি) সমর্থিত নাগরিক প্রতিরক্ষা বাহিনীর মুখোমুখি হচ্ছে। এন, ইউ,জি আবার আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) কে স্বীকৃতি দিয়েছে যার সাথে আই, এস,আই (পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা) এর গভীর সম্পর্ক রয়েছে। এন, এউ,জি এবং আই, এস,আই উভয়ের সাথেই যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত সম্পর্ক রয়েছে। তবে এই আরসার সাথে হাসিনা সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি মার্কিন প্রত্যাশার সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ।
বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চল, মিজোরাম এবং আরাকান অঞ্চলের প্রতি পশ্চিমা শক্তিগুলোর গভীর আগ্রহ রয়েছে যা খনিজ সম্পদে অত্যন্ত সমৃদ্ধ। পশ্চিমা শক্তিগুলোর এই চাওয়াকে ভণ্ডুল করতে চীন মায়ানমারের সামরিক বাহিনী এবং কুকি-চিন জাতীয়তাবাদী ফ্রন্টের সাহায্যে অঞ্চলটিকে অস্থিতিশীল করতে কাজ করছে। এই পদক্ষেপটি ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের উপর চীনকে ভূ-কৌশলগত সুবিধা প্রদান করবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকাশ্যে ওয়াশিংটনের নিন্দা করে বলেছেন যে তার সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে ওয়াশিংটন বেশ সক্রিয়। অবশ্য তার কিছু কিছু নমুনা আমরা দেখতে পাচ্ছি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি মানবাধিকার, মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং সুষ্ঠু নির্বাচন অনুশীলনের উপর জোর দেয় তাহলে সৌদি আরব, সিরিয়া, মিশর এবং ইসরাইলের কি হবে? যুক্তরাষ্ট্র এর আগেও নাইজেরিয়া এবং উগান্ডার বিরুদ্ধে নির্বাচন পরবর্তী ভিসা নিষেধাজ্ঞার নীতি ব্যবহার করেছিল। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তা নির্বাচনের পূর্বেই কার্যকর করা হচ্ছে। তার মানে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন পশ্চিমা শক্তির কাছে মুখ্য বিষয় নয়। তাছাড়া বাংলাদেশ কোয়াডের সামরিক জোটে যোগ দিতে অস্বীকার করেছে। সুতরাং চীনকে আটকাতে, যুক্তরাষ্ট্রের বঙ্গোপসাগর কেন্দ্রিক সাহসী ভূ-কৌশলগত পদক্ষেপের জন্য ভারত ও বাংলাদেশে পশ্চিমা পন্থী নির্ভরযোগ্য অংশীদার প্রয়োজন।
বাংলাদেশ ও অন্যান্য দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো পরাশক্তির প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাঝে সময়ের সাথে সাথে নিজেদের জড়িয়ে ফেলছে। ঐ সকল জাতির জন্য সামনে আরও কঠিন সময় আসছে। এই সংকট থেকে উত্তরণে জাতীয় ঐক্য এবং রাজনৈতিক প্রজ্ঞার বিশেষ প্রয়োজন। সর্বশেষে, কোন পরাশক্তিই স্থানীয় জনগণের সমর্থনের বিরুদ্ধে কখনো যাবে না। ইতিহাস সাক্ষী দেয় যে বিশ্বাসঘাতক কিছু লোক থাকা সত্ত্বেও স্থানীয় জনগণের সহযোগিতা ছাড়া কোন বিদেশী শক্তি ওই ভূমিতে টিকে থাকতে পারে না। যার জলজ্যান্ত প্রমাণ ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রাম কিংবা সম্প্রতি আফগানিস্তানে স্পষ্ট।
=== এম এ হোসাইন, একজন নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক। ===