পারস্পারিক সহযোগিতা, সমন্বয়, প্রশিক্ষণ, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার এবং ওয়েবভিত্তিক চিকিৎসা ব্যবস্থা ও মোবাইল প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ দূর করা সম্ভব।
মেন্টাল হেলথকেয়ার সম্পর্কিত ডায়ালগটি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর-এর ঢাকাস্থ লিয়াজোঁ অফিসে মে ২৮, ২০২০ খ্রি. তারিখে বেলা ১২টা অনুষ্ঠিত হয়। উপর্যুক্ত লাইভ অনুষ্ঠানটি ড. ওয়াজেদ রিসার্চ এন্ড ট্রেনিং ইন্সটিটিউট, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর, ডিজিটাল হেলথকেয়ার ফাউন্ডেশন, এমিনেন্স ও ওয়েস্টার্ন সিডনি ইউনিভার্সিটি কর্তৃক আয়োজন করা হয়।
আজকের ‘কীনোট স্পিকার’ হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়-এর উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের প্রফেসর ড. শুচিতা শরমিন। তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, পাবলিক হেলথ এবং স্বাস্থ্যই হলো বর্তমান সময়ে অন্যতম আলোচিত ও উদ্বেগের বিষয়। টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা ৩ হচ্ছে যে সকলের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত জীবন ও কল্যাণ নিশ্চিত করার বিষয়ে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা এবং এর ৩.৪ টার্গেট অনুযায়ী মেন্টাল হেলথকে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। উল্লেখ্য যে, বিশ্বের ১৪% রোগ মূলত মানসিক, ¯œায়ুজনিত ও অন্যান্য ব্যাধি সম্পর্কিত যাদের মধ্যে ৭৫% আক্রান্ত ব্যক্তি অধিকাংশই নি¤œ আয়ের দেশের যাদের চিকিৎসা সেবা পাওয়ার সুযোগ নেই। বাংলাদেশের মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি লক্ষ্য রেখে ২০১৭-২০১৮ সালে বিভিন্ন আইন সংশোধিত হয়ে বর্তমানে ন্যাশনাল মেন্টাল হেলথ পলিসি গ্রহণ করা হয়েছে। করোনার কারণে আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের বিভিন্ন সমস্যা বেড়েই চলেছে। মেন্টাল হেলথকেয়ার-এর ডিজিটাল ভবিষ্যত-এর অন্যতম চ্যালঞ্জ হলো দূর্বল ইন্টারনেট কানেকশন বিদ্যমান, নেটওয়ার্কে একসেস না পাওয়া, ডিজিটাল সেবা গ্রহণ ও পেতে জ্ঞানের স্বল্পতা এবং এ সেবা নিয়ে ভয় ও জালিয়াতির বিষয়ে সন্দিহান থাকা ইত্যাদি। এ সেবা সবার নিকট পৌঁছে দেওয়ার জন্য ডিজিটাল হেলথকেয়ারে বাংলা ভাষার ব্যবহার ও মনস্তাত্তি¡ক ব্যাখ্যাগুলো সার্বজনীন হলে এ ব্যবহার আরো বৃদ্ধি পাবে বলে তিনি তাঁর বক্তব্যে উল্লেখ করেন। এছাড়াও পারস্পারিক সহযোগিতা, সমন্বয়, প্রশিক্ষণ, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মাধ্যমে মেন্টাল হেলথ-এর চ্যালেঞ্জ দূর করা যেতে পারে। আধুনিক ও ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে ওয়েবভিত্তিক চিকিৎসা ব্যবস্থা এবং মোবাইল প্রযুক্তির মাধ্যমে মানসিক স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করা সম্ভব।
আজকের মেন্টাল হেলথকেয়ার ডায়ালগ” অনুষ্ঠানে ‘সম্মানিত আলোচক’ হিসেবে আমাদের সাথে যুক্ত ছিলেন যুক্তরাজ্যের লিভারপুল হোপ ইউনিভার্সিটি-এর হেলথ সাইকোলজি- বিভাগের এসোসিয়েট প্রফেসর রোসানা কাসিন। তিনি তাঁর আলোচনায় যুক্তরাজ্যের মেন্টাল হেলথের বিষয়টি তুলে ধরে বাংলাদেশের করণীয় সম্পর্কে আলোচনা করেন। ২০১৯ সালে যুক্তরাজ্যে টেলিহেলথ সম্পর্কিত বিভিন্ন কার্যক্রম শুরু হয়। তিনি ব্যক্তিগতভাবে টেলিহেলথ-এর বিভিন্ন প্রজেক্টে কাজ করার অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন। বর্তমান বাস্তবতায় ডিজিটাল মেন্টাল হেলথকেয়ারের গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, এ ব্যবস্থায় প্রযুক্তির চেয়ে মানুষকে কোন অংশেই কম গুরুত্ব দেয়া যাবে না।
স্কুল অব হেলথ সাইন্সসেস, ওয়েস্টার্ন সিডনি ইউনিভার্সিটি, অস্ট্রেলিয়া-এর সিনিয়র লেকচারার ড. কিং¯েø এগো জুম লাইভ সেশনে সংযুক্ত থেকে বলেন, বর্তমান কোভিড-১৯ প্রেক্ষাপটে উন্নত ও উন্নয়নশীল রাষ্ট্র এ মহামারী পরিস্থিতির সামাল দিতে একই রকম ঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছে। তিনি শিশু পুষ্টি ও কমোনিক্যাবল রোগ নিয়ে কাজ করার জন্য গুরুত্বারোপ করেন। তিনি আরোও বলেন, ডিজিটাল মেন্টাল হেলথকেয়ার সবার নিকট পৌঁছে দেওয়ার জন্য সরকারকে প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদানের পাশাপাশি স্মার্টফোন সহজলভ্য করার বিষয়ে সহায়তা প্রদান করতে হবে।
এমিনেন্স, বাংলাদেশ-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ডাঃ শামীম হায়দার তালুকদার আলোচক হিসেবে মেন্টাল হেলথ-এর গুরুত্ব তুলে ধরে ডিজিটাল হেলথকেয়ার নিয়ে কাজ করার বিষয়টি গুরুত্বারোপ করেন।
ডায়ালগ অনুষ্ঠানের মডারেটর হিসেবে ছিলেন ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার এন্ড টেকনোলজি-এর সহযোগী অধ্যাপক ড. তানভীর আবির। তিনি মেন্টাল হেলথকেয়ার নিয়ে সম্মানিত আলোচকদের বক্তব্য অনুযায়ী বাংলাদেশ ও উন্নত রাষ্ট্রের পার্থক্য তুলে ধরে বাংলাদেশের করণীয় সম্পর্কে আলোকপাত করেন।
এ ছাড়াও আজকের ‘হেলথ কেয়ার ডায়ালগ’ অনুষ্ঠানের সভাপতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ড. ওয়াজেদ রিসার্চ এন্ড ট্রেনিং ইন্সটিটিউট, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর-এর পরিচালক এবং বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর-এর ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ডক্টর মেজর নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ, বিএনসিসিও। তিনি তাঁর বক্তব্যে মেন্টাল হেলথ ও ডিজিটাল হেলথকেয়ারের বিষয়ে আলোচনা করেন। তিনি এ ধরনের ডায়ালগ আরো বেশি করে আয়োজন করার উপর গুরুত্বারোপ করেন। বর্তমান বাস্তবতায় কোভিড-১৯ এর সাথে যতদূর সম্ভব অভিযোজন ও খাপ খাইয়ে বেঁচে থাকার ব্যাপারে মতামত ব্যক্ত করেন। একই সাথে ডিজিটাল স্বাস্থ্য নিয়ে পলিসি তৈরিসহ ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত সরকারী ও বেসরকারী উদ্যোক্তাদের প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করার জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান।
আজকের অনুষ্ঠানে ‘ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা জ্ঞাপন’ করেছেন ডিজিটাল হেলথকেয়ার ফাউন্ডেশন-এর চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আব্দুল হামিদ। তিনি বলেন, বর্তমান বাস্তবতা ও কোভিড-১৯ এর প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের যে প্রযুক্তি ও কারিগরী সম্পদ রয়েছে তা দিয়েই বিভিন্ন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম-এর সহায়তায় মানসিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে। একই সাথে আলোকচকদের মতামতের ভিত্তিতে আমাদের কমিউনিটি পর্যায়ে টেলিমেডিসিন স্বাস্থ্যসেবার উপরে জোর সুপারিশ করেন। –সংবাদ বিজ্ঞপ্তি