টেলিহেলথ বলতে বোঝায় বিভিন্ন ধরনের টেকনোলজি এবং সেবা, যা রোগীর চিকিৎসা সেবা এবং সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্যসেবা সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নতির জন্য ব্যবহৃত হয় যেখানে প্রযুক্তি ও বিস্তৃত স্বাস্থ্যসেবা অন্তর্ভূক্ত রয়েছে।
টেলিহেলথ সেবাটি টেলিমেডিসিন থেকে আলাদা। কারণ এটি টেলিমেডিসিনের চেয়ে দূরবর্তী স্বাস্থ্যসেবা ও পরিসেবার বিস্তৃত ক্ষেত্রকে বোঝায়। টেলিমেডিসিনটি বিশেষত দূরবর্তী ক্লিনিক্যাল পরিসেবাগুলিকে বোঝায়। টেলিহেলথ ক্লিনিকাল পরিসেবাগুলি ছাড়াও দূরবর্তী নন-ক্লিনিকাল পরিসেবাগুলি যেমন স্বাস্থ্যসেবা দানকারী, সেবা গ্রহণকারীর প্রশিক্ষণ, প্রশাসনিক সভা এবং অব্যাহত চিকিৎসা শিক্ষাকে বোঝায়। ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন-এর ভাষ্য অনুযায়ী টেলিহেলথের মধ্যে রয়েছে, “স্বাস্থ্যসেবা, নজরদারি, স্বাস্থ্য প্রচার এবং জনস্বাস্থ্য কার্যাবলি।” অন্যদিকে টেলিমেডিসিনটি ব্যক্তিগতভাবে সশরীরে দেখা ছাড়াই রোগীদের ক্লিনিক্যাল সেবা প্রদান করতে বৈদ্যুতিক যোগাযোগ এবং সফ্টওয়্যার ব্যবহারের সাথে জড়িত বিষয়কে বোঝায়।
টেলিমেডিসিন প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রায়শই রোগীর ফলোআপ ভিজিট, দীর্ঘস্থায়ী রোগের চিকিৎসা, ওষুধ ঠিকমত হচ্ছে কি না তা দেখা, বিশেষজ্ঞের পরামর্শ দেয়া এবং নিরাপদ ভিডিও এবং অডিও সংযোগের মাধ্যমে দূরবর্তী রোগীদের সেবা প্রদান করা যেতে পারে। এছাড়াও এমন অন্যান্য ক্লিনিক্যাল সেবাগুলোর হোস্টের জন্য এটি ব্যবহৃত হয়।
আজ টেলিমেডিসিন হিসেবে যা স্বীকৃত তা ১৯৫০-দশকে শুরু হয়েছিলো যখন কয়েকটি হাসপাতাল সিস্টেম এবং বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টার টেলিফোনের মাধ্যমে তথ্য এবং চিত্রগুলি ভাগ করে নেওয়ার উপায়গুলি অনুসন্ধান করার চেষ্টা শুরু করেছিলো। প্রথম সাফল্যের একটিতে, পেনসিলভেনিয়ার দুটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র ফোনে রেডিওলজিক চিত্রগুলি পাঠাতে সক্ষম হয়েছিলো।
প্রথম দিকের দিনগুলিতে, টেলিমেডিসিনটি বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কোনও স্থানে রোগীর সাথে কর্মরত চিকিৎসকের অন্য কোন বিশেষজ্ঞের সাথে সংযুক্ত করার জন্য ব্যবহৃত হতো। পরবর্তী কয়েক দশক জুড়ে, দূরবর্তী দর্শন পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামগুলি ব্যয়বহুল এবং জটিল থেকে যায়। তাই ক্রমবর্ধমান অবস্থায়, পদ্ধতির ব্যবহার সীমিত ছিলো।
ইন্টারনেট যুগের উত্থান টেলিমেডিসিন অনুশীলনের ক্ষেত্রে গভীর পরিবর্তন বয়ে আনে। উচ্চমানের ভিডিও বার্তা পাঠাতে সক্ষম স্মার্ট ডিভাইসগুলির প্রসারণ রোগীদেরকে তাদের বাড়ি, কর্মস্থলে বা প্রাথমিক ও বিশেষত উভয় ই-সেবার জন্য ব্যক্তিগত ভিজিটের বিকল্প হিসেবে নিকটস্থ স্বাস্থ্যসেবা সরবরাহের সম্ভাবনা উন্মুক্ত করে।
‘পাবমেড’-এ গবেষণা পত্র সার্চ করার প্রেক্ষিতে প্রায় ৩৩,৪৫৬ (তেত্রিশ হাজার চার শত ছাপ্পান্ন)টি আর্টিকেল পাওয়া যায়, এর সাথে যদি কোভিড শব্দটি ব্যবহার করা হয় তবে ২৪০ (দুইশত চল্লিশ)টি আর্টিকেল পাওয়া যায়- যেখানে কোভিড স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় টেলিমেডিসিনের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
বাংলাদেশে প্রায় ২০ থেকে ২৫টি টেলিমেডিসিনের সেবাকেন্দ্র গড়ে উঠেছে-যা খুবিই আশাব্যঞ্জক। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি আমাদের পরিষ্কারভাবে বুঝিয়ে দিচ্ছে যে, শুধু টেলিমেডিসিন দিয়ে আমাদের প্রয়োজন মিটবে না। দেশের বর্তমান পরিস্থিতির উন্নতির জন্য এখনই স্বয়ং সম্পূর্ণ টেলিহেলথ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়ন করতে হলে টেলিহেলথ ব্যবস্থাপনার সার্বিক সহযোগিতায় সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।
আজকের ‘কীনোট স্পিকার’ হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এমিনেন্স, বাংলাদেশ-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ডাঃ শামীম হায়দার তালুকদার। তিনি বৈশি^ক ও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে টেলিহেলথ-এর বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। আজকের “মিট দ্য প্রেস” অনুষ্ঠানে ‘বিদেশি অতিথি’ হিসেবে আমাদের সাথে যুক্ত ছিলেন ওয়েস্টার্ন সিডনি ইউনিভার্সিটি, স্কুল অব হেলথ সাইন্সসেস-এর সিনিয়র লেকচারার ড. কিং¯েø এগো। অনুষ্ঠানের সঞ্চালনায় ছিলেন ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার এন্ড টেকনোলজি-এর সহযোগী অধ্যাপক ড. তানভীর আবির।
এ ছাড়াও আজকের সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠানের সভাপতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ড. ওয়াজেদ রিসার্চ এন্ড ট্রেনিং ইন্সটিটিউট, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর-এর পরিচালক এবং বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর-এর এর ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ডক্টর মেজর নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ, বিএনসিসিও।
তিনি তাঁর বক্তব্যে টেলিমেডিসিন ও টেলিহেলথ-এর গুরুত্ব তুলে ধরেন বলেন, “এ বিষয় নিয়ে ড. ওয়াজেদ রিসার্চ এন্ড ট্রেনিং ইন্সটিটিউট, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সাথে সমন্বয় রেখে সামনের দিনগুলোতে কাজ করতে বদ্ধপরিকর যা সাধারণ মানুষের উপকার বয়ে আনবে।
এছাড়াও এ বিশ^বিদ্যালয় কোভিড-১৯ নিয়ে ২টি গবেষণা ইতোমধ্যে সম্পন্ন করেছে।” আজকের অনুষ্ঠানে ‘ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা জ্ঞাপন’ করেছেন ডিজিটাল হেলথকেয়ার ফাউন্ডেশন-এর চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আব্দুল হামিদ। তিনি বলেন যে বর্তমান প্রেক্ষাপটে টেলিমেডিসিনের প্রয়োজনীয়তা কোন অংশে কম নয়। উক্ত সম্মেলনে বক্তারা টেলিহেলথ-এর সেবা কার্যক্রম জনগণের নিকট পৌঁছে দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নিকট আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেন। পরিশেষে বলা যায় যে বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনায় জনগণের জন্য টেলিহেলথ-এর কোন বিকল্প নেই। -প্রেস রিলিজ
টেলিহেলথ সম্পর্কিত প্রেস কানফারেন্সটি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর-এর ঢাকাস্থ লিয়াজোঁ অফিসে মে ১৮, ২০২০ খ্রি. তারিখে বেলা ১২টা অনুষ্ঠিত হয়। মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানটি ড. ওয়াজেদ রিসার্চ এন্ড ট্রেনিং ইন্সটিটিউট, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর কর্তৃক আয়োজন করা হয়। –সংবাদ বিজ্ঞপ্তি