ভারতে কেন্দ্রীয় সরকারের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অনির্দিষ্ট কালের জন্য পেঁয়াজ রপ্তানি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।
সেদিন সন্ধ্যায় এই খবরটি প্রকাশিত হওয়ার পর পেঁয়াজ-চাষিদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে তীব্র ক্ষোভ।
উমরানে, লাসালগাঁও, সাতানা এবং নাগপুর- পেঁয়াজের জন্য বিখ্যাত এসব বাজারে নিলামে পণ্য বিক্রি বন্ধ করে দিয়ে তারা সরকারি এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন।
উমরানের ক্ষুব্ধ কৃষকরা মুম্বাই-আগ্রা জাতীয় মহাসড়কে অবরোধ সৃষ্টি করে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়।
বিক্ষোভকারীরা বলেন, “কেন্দ্রীয় সরকার চাষিদের ধ্বংস করে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ১০ গ্রাম সোনার দাম যখন ৫০ হাজার রুপিতে পৌঁছালো, এক কেজি মাংসের দাম হলো ৭০০ রুপি, সরকার তো এসব খাতে তখন কোন ব্যবস্থা নেয়নি। চাষিরা যখন পাঁচ/ছয় রুপি কেজিতে পেঁয়াজ বিক্রি করছিল তখন কি তারা ঘুমিয়েছিল?”
বাজারে পেঁয়াজ আনছেন চাষিরা।
মহারাষ্ট্রে পেঁয়াজ-চাষি সমিতির প্রেসিডেন্ট ভারাত দীঘল পেঁয়াজ রপ্তানি নিষিদ্ধ করার সরকারি সিদ্ধান্তের নিন্দা করেছেন।
তিনি বলেছেন, “কেন্দ্রীয় সরকার যদি নিষেধাজ্ঞা তুলে না নেয়, চাষিরা বাজারে পেঁয়াজ আনবে না এবং এক গাড়ি পেঁয়াজও মহারাষ্ট্রের বাইরে যাবে না। এর ফলে পেঁয়াজের অভাব দেখা দিলে এবং দাম বেড়ে গেলে এর জন্য সরকার দায়ী থাকবে।”
তিনি বলেন, চাষিরা এবার আর মাথা নত করবে না।”
পেঁয়াজ-চাষিরা এবছরের মার্চ মাস থেকে প্রতি কেজি পেঁয়াজ চার থেকে ছয় রুপি দরে বিক্রি করে আসছে। কিন্তু এক কেজি পেঁয়াজ উৎপাদন করতে তাদের খরচ হয় ২০ রুপির মতো।
গত বছর ভাল আবহাওয়ার কারণে ভারতে পেঁয়াজের উৎপাদন ৪০ শতাংশ বেড়ে গিয়েছিল। ফলে অনেক কৃষক তাদের উৎপাদিত পণ্য তখনই বিক্রি না করে মজুদ করে রেখে দিয়েছিল আরো বেশি দামে বিক্রি করার আশায়।
কিন্তু পরে করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে লকডাউন জারি করা হলে এই পেঁয়াজই কৃষকদের চোখে অশ্রু ঝরিয়ে ছাড়ে।
উৎপাদন খরচও তুলতে পারছেন না কৃষকরা।এবছর অতিবৃষ্টি এবং বাতাসে আর্দ্রতা বেশি হওয়ার কারণে মজুদ করে রাখা পেঁয়াজের ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ পচে নষ্ট হয়ে যায়। গত বছরের তুলনায় এবছর রপ্তানির পরিমাণও ছিল বেশি। কিন্তু উৎপাদন যথেষ্ট ছিল না।
জুলাই ও অগাস্ট মাসে প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে খারিফ এলাকায় পেঁয়াজের ফলন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় গুজরাট, মধ্য প্রদেশ, অন্ধ্র প্রদেশ এবং কর্নাটকাতে লাল পেঁয়াজের ফসলও।
মহারাষ্ট্রেও লাল পেঁয়াজের বীজের সঙ্কট দেখা দেয়। ফলে লাল পেঁয়াজ সেপ্টেম্বর মাসে জমি থেকে তোলার কথা থাকলেও সেটা পেতে পেতে দেড় মাস দেরি হয়।
একারণে বাজারে মজুদ করে রাখা লাল পেঁয়াজের চাহিদা বৃদ্ধি পায়। গত চার দিন ধরে কৃষকরা প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম পেয়েছে ৩০ রুপি করে।
কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার রপ্তানি নিষিদ্ধ করার মাত্র দুদিন বাদে ১৫ই সেপ্টেম্বরে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ১০ রুপিতে নেমে আসে।
নাশিকের জয়গাও এলাকায় পাঁচ একর জমিতে পেঁয়াজের চাষ করেছেন ভীমা দীঘল। কিছু পেঁয়াজ তিনি বাজারে বিক্রি করেছেন এবং বাকিটা তিনি মজুদ করে রেখেছেন।
তিনি আশা করেছিলেন অগাস্ট মাসের পর থেকে পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধি পাবে এবং তার ফলে তার উৎপাদনের খরচ উঠে আসবে।
শুরুতে তিনি তার উৎপাদিত কিছু পেঁয়াজ বাজারে বিক্রি করেছিলেন। প্রতি ১০০ কেজি পেঁয়াজে তিনি পেয়েছিলেন ৪০০ থেকে ৭০০ রুপি। অর্থাৎ প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম পেয়েছেন মাত্র চার থেকে সাত রুপি।
পাঁচ একর জমিতে পেঁয়াজ চাষ করতে তার খরচ হয়েছে প্রায় আড়াই লাখ রুপি এবং আশা করেছিলেন যে পৌনে দুই লাখ রুপি তিনি পেয়ে যাবেন মজুদ করে রাখা পেঁয়াজ বিক্রি করে। কিন্তু তিনি দেখলেন যে খারাপ আবহাওয়ার কারণে অর্ধেক পেঁয়াজই পচে গেছে।