স্বাস্থ্য খাতে অব্যবস্থাপনাকারীদের অপসারণ ও বিচারের দাবিতে আগামী আট (০৮) আগস্ট শনিবার সকাল ১১ টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনের আয়োজন করেছে জাতীয় ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন পরিষদ। এই উপলক্ষ্যে মানববন্ধনের মূল বক্তব্য তুলে ধরতে এবং জাতীয় ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন পরিষদ নিজেদের আত্মপ্রকাশের ঘোষণা দিতে আজ ছয় (০৬) আগস্ট বৃহস্পতিবার দুপুর তিনটায় অনলাইনে এক প্রেসব্রিফিং করে। প্রেস ব্রিফিংয়ে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন পরিষদের আহŸায়ক প্রফেসর ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ। অনুষ্ঠানের মূল বক্তব্য তুলে ধরেন জাতীয় ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক জনস্বাস্থ্য গবেষক ডাঃ শামীম তালুকদার। অনুষ্ঠানটির মডারেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার এন্ড টেকনোলজির সহযোগী অধ্যাপক ড. তানভির আবির।
প্রেস ব্রিফিংয়ে জাতীয় ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন পরিষদ গঠনের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহ বলেন, “সাম্প্রতিককালে করোনা ভাইরাস মহামারি দেশ ও দেশের মানুষের জন্য ভয়াবহ বিপর্যয় বয়ে এনেছে। এই ভয়াবহ বিপর্যয়কে আরও প্রাণঘাতি করে তুলেছে স্বাস্থ্যখাতের সীমাহীন অনিয়ম এবং অব্যবস্থাপনা। এই অব্যবস্থাপনার কারণে প্রাণ হারাচ্ছেন অনেক মানুষ। লঙ্ঘিত হচ্ছে মানুষের স্বাস্থ্যসেবা পাবার সাংবিধানিক অধিকার। করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় এবং স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগ খুব কমই ফলপ্রসূ হচ্ছে এই অব্যবস্থাপনার কারণে। কেবল স্বাস্থ্যখাতেই নয়, এই অব্যবস্থাপনা পরিলক্ষিত হচ্ছে প্রায় সকল জাতীয় খাতেই। আমরা মনে করি, সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমেই বাংলাদেশের সীমিত সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার এবং বাংলাদেশের মানুষের প্রাপ্য সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব। সুতরাং, জাতীয় খাতে ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন ঘটাবার এই প্রাথমিক লক্ষ্যকে সামনে রেখে আজ “জাতীয় ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন পরিষদ” আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করছে।”
জাতীয় ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন পরিষদ গঠনের প্রধান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জনস্বাস্থ্য গবেষক ডাঃ শামীম তালুকদার বলেন, “আমরা জনগণের প্রতি দায়িত্ব বোধ অনুভব করেছি, বিশেষ করে দেশে করোনাকালীন স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের নামে অনৈতিক বানিজ্যের যে চর্চা চলে আসছে এবং এর ফলস্বরূপ যে অব্যবস্থাপনা সৃষ্টি হয়েছে, জনগণ মনে করে, এটিই স্বাস্থ্যখাতকে অস্থিতিশীল করে তোলার পেছনে মূল ভূমিকা পালন করছে। জনগণ এও মনে করে যে, সাম্প্রতিককালে দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া স্বাস্থ্য-ব্যবসায়ীদের সঠিক বিচার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি যেমন হওয়া দরকার ঠিক তেমনি ভাবে দরকার সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে কাঠামোগত পরিবর্তন; এর জন্য ধারাবাহিক প্রচেষ্টার কোনও বিকল্প নেই। আমরা জনগণের এই আকাঙ্খার সাথে একাত্মতা পোষণ করি। আমরা চাই, বাংলাদেশের জাতীয় সেবাখাতসমূহ গড়ে উঠুক বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যে। এই উদ্দেশ্যেই আমরা জাতীয় ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন পরিষদ গঠন করেছি।”
জাতীয় ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন পরিষদের লক্ষ্য ও উদ্দ্যেশ সমূহ হলঃ
১. বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে কাজ করে যাওয়া।
২. বাংলাদেশের উন্নয়ন কার্যক্রম এবং সেবাখাতগুলোকে পর্যবেক্ষণ ও অধীক্ষণ করা।
৩. উন্নয়ন কার্যক্রম এবং সেবাখাত সমূহের ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন ঘটাতে নীতিনির্ধারক এবং বাস্তবায়নকারীদের জন্য এডভোকেসি করা।
৪. জাতীয় ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত কার্যক্রমের মূল্যায়ন বিষয়ক গবেষনা পরিচালনা করা এবং গণমাধ্যমে এর রিপোর্ট প্রকাশ করা।
৫. স্থানীয় পর্যায়ে পর্যবেক্ষণ ও অধীক্ষণের উন্নয়ন ঘটাতে নাগরিক সমাজ এবং গণমাধ্যমকে শক্তিশালী করতে ভূমিকা রাখা।
৬. উন্নয়ন কর্মকান্ড এবং সেবাখাত সমূহে মানসম্মত ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে সরকারকে পরামর্শ প্রদান করা।
৭. পরিষেবা খাত সহ অন্যান্য উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনার মান নিশ্চিত করার জন্য সরকারকে যথাযথ সুপারিশ করা।
৮. আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জাতীয় ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন পরিষদ নিন্মোক্ত কর্মসূচী ঘোষণা করেঃ
১। ৮ আগস্ট ২০২০ঃ কোভিড-১৯ পরীক্ষায় অনিয়ম এবং স্বাস্থ্যখাতে অব্যবস্থাপনার জন্য দায়ীদের অপসারণ এবং বিচারের দাবীতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন।
২। ২৩ থেকে ২৫ আগস্ট ২০২০ঃ তিনদিন ব্যাপি ভার্চুয়াল রিস্ক কমিউনিকেশন কনফারেন্সের মাধ্যমে একটি রিস্ক কমিউনিকেশন প্ল্যান তৈরি করা হবে এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রনালয়, তথ্য মন্ত্রনালয়, যোগাযোগ মন্ত্রনালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ে তা হস্তান্তর করা হবে।
৩। ২৯ আগস্ট ২০২০ঃ মানববন্ধন এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থা পুনর্গঠনের দাবি স্বাস্থ্যসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
৪। ১২ই সেপ্টেম্বর ২০২০ঃ কোভিড-১৯ পরীক্ষায় অব্যবস্থাপনাকারীদের শাস্তির দাবীতে আইইডিসিআর-এর সামনে মানববন্ধন।
৫। ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ঃ জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন এবং “স্বাস্থ্যখাত পুনর্গঠন পরিকল্পনা ২০২১-২০৪১” স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী এবং সচিবের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
৬। ১০ আগস্ট থেকে ১০ সেপ্টেম্বর ২০২০ঃ ওয়েবিনার সিরিজ আয়োজন করা হবে:
ক) স্বাস্থ্যখাত পুনর্গঠন পরিকল্পনা ২০২১-২০৪১ তৈরি করতে ওয়েবিনার সিরিজ (১২টি পলিসি ডায়ালগ) আয়োজন করা হবে। ওয়েবিনার সমূহের বিষয় হবেঃ
১. স্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রম
২. পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম
৩. স্বাস্থ্য শিক্ষা কার্যক্রম
৪. পুষ্টি বিষয়ক কার্যক্রম
৫. স্বাস্থ্য ব্যবস্থার কাঠামো
৬. বেসরকারি খাতের ব্যবস্থাপনা
৭. সরকারি ও বেসরকারি খাতে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা।
৮. পর্যবেক্ষণ এবং জবাবদিহীতা
৯. স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম এবং ব্যবস্থাপনার ডিজিটালাইজেশন
১০. স্বাস্থ্য অর্থনীতি
১১. চিকিৎসক এবং চিকিৎসাপ্রার্থীর অধিকার
১২. স্বাস্থ্যখাতে গবেষণা এবং তথ্য ব্যবস্থাপনা
খ) স্বাস্থ্যসেবাখাত পুনর্গঠন পরিকল্পনা ২০২১-২০৪১ এর রিপোর্ট প্রস্তুতকরণ।