আলোর উৎসবের মধ্যে ছেয়ে গেল অন্ধকার। চলে গেলেন বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি তারকা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। শনিবার ১২টা ১৫ মিনিটে বাংলা চলচ্চিত্র জগতের এক অধ্যায়ের অবসান ঘটলো।
জগত বরেণ্য চিত্রপরিচালক সত্যজিৎ রায়ের ছবিসহ তিনি দুই শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। তাঁর অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রগুলো হলো অপুর সংসার, চারুলতা, অভিযান, অরণ্যের দিনরাত্রি, অশনিসংকেত, সোনার কেল্লা, জয় বাবা, ফেলুনাথ হীরক রাজার দেশে, ঘরে বাইরে, গণশত্রু, গণদেবতা ঝিন্দের বন্দী। তিন ভুবনের পারে, ক্ষুধিত পাষাণ, ইত্যাদি।
অক্টোবর মাসের ৬ তারিখের করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। এক মাসের বেশি সময় হাসপাতালের জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ করার পর জীবন যুদ্ধে হেরে গেলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে হাসপাতালে ছুটে আসেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবং সৌমিত্র বাবুর মেয়ে পৌলোমী বসুর সাথে একান্তে কিছু সময় কাটান পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সৌমিত্র বাবু শেষকৃত্য কলকাতার কেওড়াতলা শ্মশানে সম্পন্ন হবে জানান মমতা।
“সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে আমার বিশেষ শ্রদ্ধা ও প্রীতির সম্পর্ক ছিল। আমাদের আমন্ত্রণে তিনি বঙ্গ বিভূষণ পুরস্কার গ্রহণ করতে নজরুল মঞ্চে যেমন আমাদের সঙ্গে যুক্ত থেকেছেন, আবার পাশাপাশি কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে উপস্থিত থেকেছেন ।তার সম্মান ও মর্যাদা আন্তরিক ব্যবহারে, তিনি সকল সময় আমাদের চিত্ত স্পর্শ করেছেন । তাঁর মৃত্যু বাংলার জনজীবনে এক অপূরণীয় শূন্যতা সৃষ্টি করল” বলেন মমতা।
দক্ষিণ কলকাতার হাসপাতাল থেকে সৌমিত্র বাবুর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় গলফ গ্রীনে তাঁর নিজ বাসায়। তারপরে রবীন্দ্রসদনে তাঁর দেহ নিয়ে যাওয়া হয় যাতে সাধারণ মানুষ তাকে শেষবারের মতো সম্মান জানাতে পারেন।
“খুব কষ্ট হচ্ছে …ওনার সাথে আমার এত স্মৃতি, কতকিছু শিখেছি …আজ আমি আমার অভিভাবককে হারালাম” বলেন অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত।
আজ কলকাতায় কালী পূজার পরের দিন সমাজের সকল স্তরের মানুষ বারবার বলছেন সৌমিত্র বাবুর চলে যাওয়ার মধ্যে তারা অভিভাবকহীন হলেন।
“টলিউডে উনি ছিলেন এক মহীরুহের মতো। আমরা সবাই ছুটে যেতাম কোন সমস্যা হলে ওনার কাছে। অভিভাবক ছিলেন উনি। আমাদের খুব কষ্ট হচ্ছে।”- জানালেন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস।
টলিউডের অভিনেতা-অভিনেত্রীদের কাছে সৌমিত্র ছিলেন একজন শিক্ষকের মতো যার কাছে সবাই কিছু না কিছু শিখছেন।
অভিনেতা রঞ্জিত মল্লিক জানিয়েছেন ,সিনেমার সেটে শুটিং করার সময় বাকিরা সবাই অভিনয়ের পাঠ নিতেন ওনার কাছে।
“এত বড় মাপের মানুষ কিন্তু কোনদিন অহংকার করতে দেখিনি ” জানান রঞ্জিত মল্লিক।
সিনেমার সেটে সঠিক সময়ে পৌঁছে যাওয়া, ডিরেক্টরের কথামতো শট দেওয়া এবং সেটে সবাইকে নিয়ে একটা টিমের মতো করে থাকা… সৌমিত্র বাবু চরিত্রের নানা দিক নিয়ে সারা দিন আলোচনা করলেন ,টলিউডের অভিনেতা অভিনেত্রীরা।
আজকের সুপারস্টার দেব মনে করছিলেন কিভাবে টলিউডের সবাইকে নিয়ে চলতেন সৌমিত্র বাবু। “অনেক শিখেছি ওনার কাছে, আমাদের সবার অনেক ক্ষতি হয়ে গেল” বলেন দেব।