করোনা ভাইরাস মহামারীটি সারাবিশ্বে ক্রমবর্ধমানভাবে ছড়িয়ে পড়ার ফলে এটি সাধারণ জনগণ-এর স্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রোটিনজনিত অপুষ্টি এবং সুষম খাদ্যের ঘাটতিগুলি অনিবার্যভাবে মানবদেহে মারাত্মক রোগ এর সৃষ্টি এবং মৃত্যুর পরিমাণকে ধীরে ধীরে বাড়িয়ে তুলেছে, জানয়িছেনে গবষেকরা। এ গবেষণাটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে একটি ক্রস-সেকশনাল সমীক্ষা পরিচালনা করে যা ড. ওয়াজেদ রিসার্চ এন্ড ট্রেনিং ইন্সটিটিউট, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর এবং স্কুল অব হেলথ সায়েন্সেস, ওয়েস্টার্ন সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়, অস্ট্রেলিয়া দ্বারা পরিচালিত হয়। ২০২০ সালের এপ্রিল এবং মে মাসে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে লক-ডাউন চলাকালীন সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে সং-মিশ্রিত এবং স্বপ্রণোদিত অনলাইন জরিপ পরিচালনা করা হয় যেখানে ১১,২৩২ জন উত্তরদাতা প্রশ্নপত্র যথাযথভাবে সম্পন্ন করেন।
গবষেনায় জানা যায়, পরিমাণ, গুণমান এবং সুরক্ষার দিক থেকে সমগ্র জনগোষ্ঠীর সামগ্রিক পুষ্টির চাহিদা বজায় রাখার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্য সরবরাহ প্রয়োজন। এ প্রতিষ্ঠান দুইটির এবারের গবেষণার মূল উদ্দেশ্য ছিলো করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারিজনিত সময়ে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে পুষ্টি এবং সুষমখাদ্যজনিত জ্ঞাননির্ভর বিভিন্ন স্তর অনুসন্ধান করা।
এ সম্পর্কিত একটি সংবাদ সম্মেলন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর-এর ঢাকাস্থ লিয়াজোঁ অফিসে জুন ০১, ২০২০ খ্রি. তারিখে বেলা ১২টা অনুষ্ঠিত হয়েছে। উপর্যুক্ত মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানটি ড. ওয়াজেদ রিসার্চ এন্ড ট্রেনিং ইন্সটিটিউট, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর ও ওয়েস্টার্ন সিডনি ইউনিভার্সিটি, অস্ট্রেলিয়া কর্তৃক আয়োজন করা হয়েছে।
গবেষণার ফলাফলে দেখা যায় যে, ১১,২৩২ জন উত্তরদাতাদের মধ্যে পুরুষ (৫১%), মহিলা (৪৭.৪%) এবং অন্যান্য (১.৩%)। এছাড়া ৩৫.৪% এর বয়স ১৮ থেকে ২৮ বছরের মধ্যে এবং ৬৬.৭% উত্তরদাতা বিভিন্ন ধরনের পূর্ণকালীন চাকুরিতে নিযুক্ত ছিলেন। সামগ্রিকভাবে দেখা যায় যে, উত্তরদাতাদের ৭৯.২% পরিবারের সাথে অবস্থান করছেন। ১১,২২২ জন উত্তরদাতাদের মধ্যে ৪৬.৪% বলেছেন যে তাদের করোনা ভাইরাস সম্পর্কে ভাল জ্ঞান রয়েছে। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে ৬৪.৬% উত্তরদাতা দাবি করেছেন যে তারা করোনা ভাইরাসকে কিভাবে প্রতিরোধ করবেন সে সম্পর্কে তাদের জ্ঞান খুবই সীমিত। যখন ভারসাম্যযুক্ত খাবারের জ্ঞান সম্পর্কিত প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা হয়েছিলো তখন ৬৬.৩% উত্তরদাতাদের উত্তর ছিল ইতিবাচক। তবে সমীক্ষার সুষম ডায়েটের মূল উপাদানগুলি সম্পর্কিত জরিপ প্রশ্নটির ক্ষেত্রে উত্তরদাতাদের জ্ঞান ভিন্ন রকম ছিল। এ ফলাফল-এর ভিত্তিতে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, জনগণ সুষম খাবার কী তা জানেন। তবে একটি শক্তিশালী প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে ভাল সুষম ডায়েটের উপাদানগুলি কি কি তা জানার জন্য আরও উদ্যোগের প্রয়োজন। এছাড়াও, আমরা জানি যে ডঐঙ, “ঈঙঠওউ-১৯” লকডাউন / কোয়ারেন্টাইন চলাকালীন পুষ্টির বিষয়ক বিভিন্ন গাইডলাইন সরবরাহ করেছিলো, কিন্তু সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে ৮৩.৩% উত্তরদাতা এই নির্দেশিকা সম্পর্কে অবগত নন।
সুতরাং, এই ফলাফলের ভিত্তিতে আমরা বলতে পারি যে, নীতিনির্ধারকদের এই মহামারী চলাকালীন জনগণের মধ্যে পুষ্টি সম্পর্কিত জ্ঞান কিভাবে বৃদ্ধি করা যায় সে বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। উত্তরদাতাদের মধ্যে, যথাক্রমে ৮৯.৪% এবং ৮১.১% স্বীকার করেন যে একটি সুষম ডায়েট এবং পরিপূরক খাবার গ্রহণ স্বাস্থ্যকর এবং হার্ড ইমিউন সিস্টেমের বিকাশ ঘটাবে যা ঈঙঠওউ-১৯-এর মতো দীর্ঘস্থায়ী সংক্রামক রোগের ঝুঁকি হ্রাস করবে। সমীক্ষায় আরও দেখা গিয়েছে যে ৫১.১% উত্তরদাতা এই ঈঙঠওউ-১৯ মহামারীতে জাতীয় সংকটে খাদ্য চাহিদা মেটাতে সরকারকে পরিপূরক খাদ্য সরবরাহের প্রতি নজর দিতে সুপারিশ করেছেন।
এই গবেষণা থেকে, পরিশেষে এটা বলা যায় যে জনগণের মধ্যে সুষম খাদ্য, পুষ্টি এবং পরিপূরক খাবারের ক্ষেত্রে জ্ঞানের স্তরে বিভিন্ন মানদন্ড পরিলক্ষিত হয়। তবে সরকার এবং অন্যান্য সংস্থা কর্তৃক আরও বেশি উদ্যোগ নিতে হবে যাতে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সম্পর্কে জনগণকে জানানো ও সচেতন করা যায় এবং যার ভিত্তিতে হার্ড ইমিউন সিস্টেম তৈরী ও বিকাশের মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণ বর্তমান ঈঙঠওউ-১৯ মহামারীর মতো সংকটের বিরুদ্ধে লড়তে পারে।
এ গবেষণাটির চিফ ইনভেস্টিগেটর ছিলেন বেরোবি-এর ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মেজর নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ, বিএনসিসিও এবং কো-ইনভেস্টিগেটর ছিলেন ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার এন্ড টেকনোলজি’র সহযোগী অধ্যাপক. ড. তানভীর আবির এবং ড. কিং¯েø এগো, সিনিয়র লেকচারার, স্কুল অব হেলথ সায়েন্স, ওয়েস্টার্ন সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়, অস্ট্রেলিয়া । রিসার্চ এসোসিয়েট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন দেওয়ান মুহাম্মদ নূর -এ ইয়াজদানি, সহকারী অধ্যাপক, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার এন্ড টেকনোলজি ও মোহাম্মদ হাবিবুরর হমান, এমফিল, রিসার্চ ফেলো, ড.ওয়াজেদ রিসার্চ এন্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর।